#জলছবি
#পার্ট_২১
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
রাত তখন দশটা ছুঁই ছুঁই। জানজটের শহরে, এ রাত তেমন কিছুই না। ব্যস্ত কোলাহল অল্পবিস্তর হালকা হতে শুরু করেছে, এই যা!
নবনী খাওয়ার জন্য কিছু তৈরি করছে। নোলক সোফায় শরীর এলিয়ে রেখে আনমনে কিছু ভাবছে। ভাবনা কদ্দুর এগোল জানা নেই তবে আর আগানোর সুযোগ পেল না। ফোন বেজে উঠলো। নোলক বিরক্তি নিয়ে টি-টেবিলের উপর রাখা ফোনটির দিকে চাইলো। নাম স্পষ্ট বোঝা গেলো না যদিও তবু ফোনের ওপর প্রান্তে থাকা মানুষটার উপর মহা বিরক্ত হলো। বার কয়েক রিং হওয়ার পর নোলক ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিলো। নাম দেখেনি তখনও। নোলল ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে এক তীক্ষ্ণ প্রশ্ন,
“বলুন তো, শরীরের অসুখ বেশি পিড়া দেয়, নাকি মনের অসুখ?”
কন্ঠটা শুনে নোলক এলিয়ে রাখা শরীর সোজা করে বসে। অবিশ্বাস নিয়ে কানের কাছ থেকে ফোন এনে চোখের সামনে ধরে। কাঙ্খিত মানুষটি নিশ্চিত হওয়ার পর পরই হঠাৎ মন, শরীরজুড়ে অকারণ এক অভিমান ভর করলো। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
“জানিনা। এটা জানতে কল করেছেন?”
আদ্র নিশ্চুপ হাসে। এক কান থেকে ফোন অন্য কানে নিয়ে বলে,
“না। শরীর কেমন আছে এখন?”
“আমার শরীর কেমন আছে, তা জেনে আপনার কি কাজ? নিজের কাজ করুন।”
“আমার কোনো কাজ নাই। খাইদাই, ঘুমাই আর আকাশ দেখি। আকাশকে খুব আপন লাগে।”
নোলক মনের ঝাজ খানিক মেটানোর জন্যই তেজ নিয়ে বলে,
“এবার আকাশ গুলে খান। প্রয়োজন পড়লে চাঁদ, তারাও গুলে খান। একা খেতে না পাড়লে প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে খান। আমার কাছে কি?”
“কিছু না। আবার বোধহয় অনেক কিছু! কিন্তু অনেক কিছুটা কি তা বলতে পারবো না। নিজের জানা থাকলে পাড়তাম হয়তো।”
আদ্রর হেয়ালি ধরনের কথাগুলো নোলকের হজম হয় না। অতিরিক্ত রাগে আর কিছু বলতেও পারে না। শেষে আকস্মিক ফোন কেটে দিলো। ওপাশ থেকেও আর কল আসে না। নোলকের ঠোঁট বাঁকিয়ে আসে। কেন আসে না ফোন? এমন কেন সে? মন বোঝেনা, নাকি বুঝতে চায় না?
ভারী দুঃখ দুঃখ লাগে নোলকের।
দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট, সাত মিনিট! টিকটিক করা ঘড়িটিতে মিনিটের কাটা সাত অব্দি যেতেই নোলকের রাগ কমে যায়। অনুতাপ হয় অমন করে ফোন কেটে দেয়ায়। ঐ শান্ত স্বরে কথা বলা ছেলেটার প্রতি ভালো লাগা সাত মিনিটের মাথাতেই আগের জায়গায় চলে আসে। ভালো-লাগা-গুলো বুঝি এমনই হয়!
কিছুক্ষণ আনচান আনচান করে নোলক ফোনটা আবার হাতে নেয়।
নোলক ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হয়। যেন সে জানত মেয়েটি আবার ফোন করবে! নোলক বলে,
“স্যরি।”
“স্যরি? ওয়েদারের সঙ্গে সঙ্গে আপনার মুডও দেখি সুইং হয়। ইন্টারেস্টিং। এই মেয়েটার সবই দেখি অদ্ভুত!”
নোলক কিছু বলে না। এই ছোট রসিকতাও ওর ভালো লাগে। অন্য কেউ হলে হয়তো খ্যাঁক করে উঠতো। কিংবা আগের আদ্র হলেও হয়তো! এখন যে মেয়েটার কি হচ্ছে!
আদ্র বলে,
“দরজাটা একটু খুলুন, নোলকরানী।”
নোলকরানী? নোলকের মনটাকে টুপ করে একটুকখানি স্নিগ্ধতা এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায়। কি সুন্দর সম্মোদন! এর আগে কারো করা সম্মোদন এত ভাল তো লাগেনি! এই ছেলেটা সবকিছুতেই কেমন যেন সম্মোহন মিশিয়ে রাখে। অমৃতের ন্যায় তৃপ্তি দেয়।
ভালো লাগাটা মনের মাঝেই লুকিয়ে রেখে বলে,
“কেন? পারবো না। খুলেই দেখবো কুটলী চাচি দাঁড়িয়ে আছে। আর আমার মেজাজ যতটুকু ভাল আছে, ততটুকুও উধাও হবে।”
আদ্র বলে,
“আগে খুলেই দেখুন।”
নোলক আর কথা বাড়ায় না। কৌতুহল নিয়েই দরজা খুলতে যায়। খানিক সংশয় নিয়ে দরজা খুলতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠে। দু’কদম পিছনে গিয়ে আর্তনাদ করে বলে,
“এই! আপনি? আপনি এখানে! কখন, কিভাবে এলেন?”
আদ্র শরীর কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। চোখেমুখে তার চমকে দেয়ার চেষ্টা। ঠোঁটের কোণে, ঐ চশমা চোখে এতক্ষণ মৃদু হাসি লেগে থাকলেও নোলকের এমন বাচনভঙ্গিতে সেই হাসি আরো চওড়া হলো। বলে,
“এখন এলাম, উড়ে উড়ে। নোলকরানীকে ভূতের রাজ্যে নিয়ে যেতে। যাবেন?”
নোলক চোখ বুলিয়ে আগাগোড়া আদ্রকে দেখে। সে যেন তখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। আদ্রর পরনে টিশার্ট আর টাওজার। হুট করে বেড়িয়ে হুট করে চলে আসা টাইপ গেটাপ। এই অতি ম্যচিউর’ড ছেলেটি হুটহাট কিছু করতে পারে তা আগে ভাবেনি কিংবা ভাবতে পারেনি বলেই হয়তো এই অবিশ্বাস।
আদ্র বলে,
“আরেহ! মেয়েটা দেখি হ্যাং হয়ে গেলো! সেদিন ট্রেন থেকে যেহেতু ধাক্কা মেরে ফেলে দেননি, সেহেতু ভূত-টূত হয়ে কামড়াতে আসিনি। যেভাবে চমকে গিয়েছেন এখন নিজেকে ভূতের রাজা মনে হচ্ছে।”
বলেই হাসে আদ্র। কৌতুক বলা শেষে মানুষ যেমন হাসে, অমন।
হেসে ফেলে নোলকও। কিছুক্ষণের জন্য মন খারাপ লাগা, মন খারাপ লাগার কারন ভুলে বসে। ইতোমধ্যে মুগ্ধ হয়ে থাকা ছেলেটার প্রতি আরো একটু মুগ্ধতা বেড়ে যায়। মুগ্ধ হয় তার কথায়, হাসিতে, চোখে, চোখের ঐ চশমায়!
কিন্তু এই মুগ্ধতা পুরো মন ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ার আগেই আদ্র’র ফোন বেজে উঠে। আদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকায়। মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়ে গম্ভীরতায় ভরে যায়।
নোলকের মনে পড়ে যায়, ও ভুল মানুষে মুগ্ধ হতে যাচ্ছিল। তার যে প্রিয় কেউ আছে! তার যে মুগ্ধ হওয়ার অন্য কেউ আছে! সে সেখানে ফ্যাকাসে এক আলগা মায়া ব্যাতিত কিছুই নয়। নোলক দরজা আটকে দেয়। আদ্রকে কিছু বলার প্রয়োজন টুকু বোধ করে না। আদ্র ডাকে,
“এই নোলক?”
সে কি আর সেই ডাক শোনে? তার ভিতরের অনল পুনরায় দাউদাউ করে জ্বলে উঠে, কমতে যাওয়া দহন পুনরায় উজ্জীবিত হয়।
বোনকে হনহন করে রুমে যেতে দেখে নবনী ডেকে জিজ্ঞেস করে,
“কে এলো রে? কার সাথে কথা বলছিলি?”
নোলকের চোখ ছলছল করে উঠে। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলে,
“কেউ না আপু। একদম কেউ না!”
আদ্র নিচে নেমে আসে। ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে। নোলকদের রুমের জানালাটার দিকে চায়। একটু দূর, এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাবে না ওখানে কেউ থাকলেও। তবুও চায়। ‘মেয়েটা অমন রিয়েক্ট করলো ক্যান? মুড সুইং? হা হা! পাগল! নাহ, পাগলি!’ আদ্র ভাবে মনে মনে।
আরশি তখনও কল করেই যাচ্ছে। আদ্র মাথা ধরে যায়। কানের কাছে পৌছে যাওয়া রিংটোনটা বিষিয়ে দেয় মন। প্রচুর রাগে মস্তিষ্ক ফেটে আসে। এক আকাশ অনিচ্ছা আর বিতৃষ্ণা নিয়ে ফোন তোলে। যতটা রুক্ষ কন্ঠ করা যায়, ঠিক ততটা রুক্ষ করেই বলে,
“কী চাও? আর কী চাওয়ার আছে তোমার? কেন আমায় পোড়াচ্ছ? প্লিজ নিস্তার দেও! আমি তো তোমায় ছাড়িনি! তুমি ছেড়ে গিয়েছিলে। এখন কী চাও? কেন তোমার এই বাচ্চামি? তুমি তো এখন আর বাচ্চা নও আরশি! যথেষ্ট ম্যাচিউর হওয়ার বয়স হয়ে এসেছে। প্লিজ ম্যাচিউর হও, ম্যাচিউর বিহেভ করো। আমি বিরক্ত, বুঝতে পাড়ছ না? আর কত বুঝিয়ে বললে বুঝবে?”
আদ্র ওপাশ থেকে কোনো কথা শুনল না। শুধু শুনল নিরব কান্না। থেমে থেমে কাঁদছে মেয়েটা। সে কি অনুতপ্ত? দু’বছর আগে করা অন্যায়ের জন্য? ঠিক দুবছর পর মেয়েটা এখন ঠিক কি চাচ্ছে, ভেবে পাচ্ছে না আদ্র।
কান্না শুনতে ইচ্ছে হয় না। ফোন কেটে ল্যাম্পপোস্টের দিকে চায়। হলদেটে আলোটা এসে পড়ে চোখে, মুখে আর স্বচ্ছ চশমাটায়। আদ্র ক্লান্ত মন নিয়ে বসে থাকে, আর দূর থেকে এই ল্যাম্পপোস্টে আচ্ছন্ন মানবটার দিকে জানালা দিয়ে চেয়ে থাকে এক অভিমানি কন্যা। তার চোখ ভরা অভিমান, মন ভরা অভিযোগ। অন্য কারোর-ই যদি হয়ে থাকে, কাছে কেন আসে? বাড়ায় কেন টান?
.
.
লুবনা তাদের বন্ধুমহলের ছবির এলবাম দেখছিল। কতশত স্মৃতি আর খুনশুটি মাখা একেকটা ছবি! লুবনা অবশ্য এসব বাদে অন্যকিছু দেখে, অন্যকাউকে দেখে। এতগুলো মানুষের মাঝেও প্রতিটা ছবিতে তার চোখ ঐ কৃষ্ণবর্ণের ছেলেটার দিকেই প্রথমে যায়। তার হাসিহীন মুখ, কুঁচকান ভ্রু! কি আশ্চর্য! একটা ছবিতে হাসি নেই ছেলেটার মুখে। লুবনা ভাবে,
“এই ছেলে কি রোবোট? এমন কেন? নিরামিষ!”
তবুও তার এই নিরামিষটাকেই ভালো লাগে।
লুবনার ফোনে টুং করে আওয়াজ হয়। সে তাকায়। মেসেজ ভেসে উঠে,
“নিচে নাম, দ্রুত। সময় এখন থেকে একশ বিশ সেকেন্ড।”
লুবনা ছুটে বারান্দায় যায়। জনশূন্য রাস্তায় ছেলেটাকে দেখতে পেয়েই খুশি উতলে পরে। একশ বিশ সেকেন্ডও বোধহয় পুরোপুরি লাগে না। এক ছুটে নিচে নেমে আসে। হাস্যজ্জ্বল মুখ করে বলে,
“দোস্ত, ট্রাস্ট মি, আই ওয়াজ মিসিং ইউ।”
“ড্রামা কুইন।” ফয়সালের ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া।
লুবনা আহত হয়ে বলে,
“সত্যি।”
“তো? চুমু দিবো এখন?”
ফয়সালের লাগাম ছাড়া কথায় লুবনা নাকমুখ কুঁচকে বলে,
“ছিঃ! বেয়াদপ!”
ফয়সাল স্বচ্ছ হাসে। তারপর বলে,
“হাত দে।”
লুবনা বলে,
“কেন?”
“আবার প্রশ্ন করিস! বেয়াদপ, বড়লোকের মেয়েগুলা এমন ফাজিল, বেয়াদপই হয়।”
লুবনার রাগ লাগে। সে তিক্ত কন্ঠে বলে,
“দেখ ফয়সাল? সবসময় এমন বড়লোক বড়লোক করবি না। আমার অসহ্য লাগে।”
ফয়সাল বাঁকা হাসে। বলে,
“হয়েছিস তো বড়লোকের ঘরেই। বড়লোক বললে গায়ে লাগবে কেন?”
“আমার ভালো লাগে না, তুই বলবি না। দয়াকরে আমার আর তোদের মাঝে বড়লোকের প্রাচীর তৈরি করিস না।”
“হাতটা দে, পাকনামি কম করে। নয়তো দিবো একটা কানের নিচে।”
“দিব না।” লুবনার জেদ।
ফয়সাল এবার আর লুবনার হাত বাড়িয়ে দেয়ার অপেক্ষা করে না। নিজেই ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে পকেট থেকে চুরিগুলো বের করে হাতে পড়িয়ে দেয়। লুবনা অবাক হয়। অবাক চোখে চেয়ে থাকে অদ্ভুত ছেলেটার দিকে। ফয়সাল বলে,
“ক্যাম্পাসের সামনে যেই খালাগুলো বসে তাদের থেকে নিতে ইচ্ছে হলো, তাই নিয়েছল্যম। দেয়ার কেউ নেই, তাই তোকে দিলাম। ভালো না লাগলেও ফেলিস না। রেখে দিস।”
ফয়সালের এমন কথায় লুবনা একটা অদ্ভুদ কাজ করে। ফয়সালকে জড়িয়ে ধরে। খুব আদুরে কন্ঠে বলে,
“তোর সবকিছু আমার প্রিয়। হাসি, রাগ, বকা, শাসন, ভালোবাসা আর এই চুড়ি। ফেলবো কি করে? তুই আমার প্রিয়, অনেক বেশি প্রিয়। আমি বড়লোকের মেয়ে থাকতে চাই না। একটা বদরাগী পাগলের রাগ, দুঃখ, সুখ, শাসন বকাঝকা সব শেষে একটুকখানি ভালোবাসার মানুষ হয়েই থাকতে চাই। আমাদের মাঝের দেয়ালটা রাখিস না, প্লিজ। তোর মতো আগলে আমায় কেউ রাখে না। আর পারবেও না। আমার তোকেই চাই, সবসময়, সারাক্ষণ।”
ফয়সাল ভাবতেই পারে নাই লুবনা এমন কিছু করে বসবে। ফয়সাল আগের মতোই দাঁড়িয়ে থেকে বলে,
“দেয়াল তো আছেই। আত্মসম্মান আর টাকার দেয়াল। তোর বাপ ভাইয়ের টাকার দেয়াল আর আমার আত্মসম্মানের। তোর সাথে আমার যায় না, লুবু। কনট্রল ইওর-সেল্ফ। তুই যেমন আমার কাছে দামি, ঠিক তেমনি আমার মায়ের আত্মসম্মানও। বড়লোকদের প্রধান হাতিয়ার গরিবদের আত্মসম্মানে হাত দেয়া।
তারা আমার, আমার মায়ের আত্মসম্মানে আঘাত করবে যা আমি মানতে পারবো না।”
লুবনা আরো একটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। বাড়ির সামনে, যে কেউ যখন তখন দেখে ফেলে একটা তুরকালাম বাঁধিয়ে দিতে পারে। সেই চিন্তাও যেন আজ মেয়েটাকে কাবু করতে পারলো না।
ফয়সাল শ্বাঃস নেয়। দুঃখ আর অপারগতার দুঃখময় দীর্ঘশ্বাঃস। অদ্ভুত এক মায়ায় মত্ত থেকে কয়,
“দুঃখ মানুষের-ই তৈরি বুঝলি? তারা খুব যত্নে দুঃখ গড়ে। দুষ্প্রাপ্য জিনিসের প্রতি লোভ করে তুখড় আগ্রহ নিয়ে। যা কিনা কখনই তার হওয়ার না। তবুও চায়, কিন্তু পায় না। অবশেষে দুঃখের এক কারিগর হয়ে দুঃখ পোষে! আমার প্রতি তোর এখন যেই অনুভূতি তা কেবল ফ্যাসিনেইশন। দুদিন বাদে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর প্রতি আমার যেই অনুভূতি তাও কেবল মায়া, মোহ! ভালো লাগাটা এই ফ্যাসিনেইশন অব্দি-ই থাকতে দে। জীবন তো আর গল্প কিংবা সিনেমা নয়, তাই না? বাস্তবতা ভিন্ন। উই হ্যাভ টু কন্ট্রোল আওয়ার সেল্ভ’স। ছাড়।”
“না। আমি এই ফ্যাসিনেইশন আর ইনফ্যাচুয়েশন নিয়েই থেকে যেতে চাই। আমার এই মানুষটাকেই চাই। বকবে, শাসন করবে, আবার খুব করে ভালোও বাসবে।”
এত করে বুঝানোর পরও লুবনার এমন জবাবে রাগ হয় ফয়সালের। এতক্ষণ নরম স্বরে বললেও এবার তেজী স্বরে বলে,
“থাপ্পড় দিব। ছাড় বলছি।”
“না, না, না।”
“শ্রীতমার বিয়ের দিনের ইনসিডেন্ট এর পর থেকে এখন অব্দি অনুতাপে ভুগছি। আর অনুতাপ বাড়াইস না প্লিজ। ছাড়।”
লুবনা ছেড়ে দাঁড়ায়। টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।
ফয়সালের মন পোড়ে। একবারের জন্য ভাবে, আসলেই যদি লুবনা কোনো ধনী ঘরে না জন্মাত! তবে হয়তো ও নিজেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখে বলতে পারতো, আমিও এই ফ্যাসিনেইশনেই জড়িয়ে থাকতে চাই আজীবন!
কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। তাই নিজের অপারগতা নিয়েই বলে,
“কাঁদিস না। তোর কান্নাই শুধু সহ্য হয় না। কি এক জ্বালা! লোকে বলে, প্রেম। আমি বলি, মরন!”……..(চলবে)