#ছত্রিশ_ঝামেলা
#পর্ব_০৫

ছয়দিন পর ইউনিভার্সিটিতে এসে নিশাত একটা মন ভালো করা খবর শুনলো। কক্সবাজার ট্যূরে সে যেতে পারছে। মোট চারজন চাঁদা দেয়নি৷ এরমধ্যে তিনজন যাবে না বলে দেয়নি। একজন সে নিজে যে অর্থাভাবে দিতে পারেনি।
নিশাতের মনে হলো অনেকদিন পর তাঁর ঘুমের মাঝে দেখা ভালো স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
রিশাদ নিশাতকে দেখেই বিশ্রীভাবে হাসলো। গায়ে জ্বালা ধরানো হাসি।
-“হে হে ব্লাক কিউমিন! খবরটা নিশ্চয়ই শুনেছো? তোমার তো কপাল খুলে গেছে। টাকা পয়সা ছাড়াই ট্রিপের বিশেষ অতিথি হয়ে বসে আছো।ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার”।

রিশাদের মুখের হাসি নিশাতের শরীর বেয়ে নামতে থাকলো।নিশাতের ইচ্ছে করলো রিশাদকে এই হাসির জন্য সে কঠিন করে কিছু কথা বলে। রিশাদ, তুমি কি জানো তোমার এই হাসি দেখলেই আমার ইচ্ছে করে একটা জ্বলন্ত চেলা কাঠ তোমার মুখে ঠুসে দিই।ভাগ্যিস আমি ভদ্রতার খাতিরে সেই কাজটা করতে পারছি না। তবে আমি আশা করি একদিন ঠিক এমন একজন কেউ আসবে যে সত্যি সত্যিই তোমার মুখে আগুন ঠুসে দেবে।
রিশাদ হাসি বন্ধ করে নিশাতের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। গলার স্বর যথাসম্ভব নিচু করে বললো,
-“তুমি কি জানো, তোমার টাকাটা কে দিয়েছে?”
-“না।”
-“তোমার টাকা দিয়েছেন নিপু ভাই। নিপু ভাই আরো বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন। তুমি নাকি উনার ছোট বোনের মত। ট্রিপে যাতে আমরা সবাই তোমার আলাদা টেইক কেয়ার করি। ওইসব ছোটবোন টোটবোন কিছু না। আসল কথা কি জানো?”
-“আসল কথা কি?”
-“আসল কথা হলো, তুমি নিপু ভাইয়ের চোখে পড়ে গেছো।চোখে পড়া বুঝোতো?”
রিশাদ কুৎসিত ভাবে ভ্রঁ নাচালো। নিশাতের গা শিওরে উঠলো।
—এখন থেকে সবকিছুতে তুমি স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পাবে।তোমার হাতে এখন মাস্টার কি! আমাদের ছেলেদের এই এক সমস্যা! আমরা কারো মাস্টার কি হতে পারি না। মাস্টার কি বুঝোতো? যে কি দিয়ে সব তালা খুলে যায়।তুমি এখন নিপু ভাইয়ের তালা খুলে ফেলেছো, দুদিন পরে তুমি আরো অনেকের তালা খুলতে পারবে। কিভাবে হাত করলে বলোতো?
রিশাদের চোখে বিশ্রীরকমের ইঙ্গিত।
নিশাতের ইচ্ছে করলো রিশাদের গায়ে একদলা থুথু দেয়।ব্রাশ না করা সকালের বাশি থুথু দিতে পারলে ভালো হত!
-“হাত করেছি যেহেতু জানো, কিভাবে হাত করতে হয় সেটাও নিশ্চয়ই জানো!”
-“আমি তো তোমাকে প্রথমদিন দেখেই বুঝেছিলাম। তুমি ভ্রম আংরা। ভ্রম আংরা বুঝো? এক ধরনের কয়লা আছে, যেগুলো উপর থেকে দেখে মনে হয় আগুন নেই। অথচ হাত দিলেই পুড়ে ছাই।”
-“আমি ভ্রম আংরা?”
-“ব্যাচের সবাই তোমাকে আরও একটা নামেও ডাকে। ‘ইটের ভাটা’! ইটের ভাটায় মাটি পড়লে শেষ। তোমার দিকে নজর পড়লেও শেষ।”
পিয়াসা হাঁপাতে হাঁপাতে এদিকেই ছুটে এলো। তাঁর এক হাতে ব্যাগ। অন্য হাতে আইসক্রিম। সে এসেই নিশাতের কাঁধে মাথা দিয়ে ঢলে পড়লো। আইসক্রিমটা নিশাতের মুখে ঠুসে দিলো।
-“নিশু, সুইমিং কস্টিউম নিয়ে এসেছি। তোরটা সবুজ, আমারটা কালো।বাড়ি নিয়ে যা। ট্রায়াল করে দেখবি।স্পোর্টস ব্রাও নিয়ে এসেছি। কোরিয়া থেকে আমার এক ফুফু এনেছে। পরলে মনে হবে প্যারাসূট পরে আছিস। শরীর ভাসতে থাকবে হাওয়ায়।
নিশাত আইসক্রিমটা মুখ থেকে বের করে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। রিশাদের সামনে আইসক্রিম খাওয়া অসম্ভব। সে এক দৃষ্টিতে নিশাতের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে।
পিয়াসা ব্যাগ থেকে সুইমিং কস্টিউম বের করলো।
-“এই নে। ডিজাইনটা দেখ। পরলে সমুদ্রে আগুন লেগে যাবে!
রিশাদের চোখ চকচক করতে লাগলো।সে নিশাতের শরীরের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকালো।মনে হলো, তাঁর চোখের সামনে সে সুইমিং কস্টিউম পরা নিশাতকে দেখছে। সে কুকুরের মত হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে নিশাতের দিকে৷
তার মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে লালা। নিশাত আচমকাই খুব কেঁপে উঠলো। কস্টিউমটা ছুঁড়ে দিলো পিয়াসার হাতে।
-“তোমরা সুইমিং কস্টিউম পরবে নাকি?নিশাতও পরবে?
পিয়াসা বিরক্ত হয়ে তাকালো।
-“হুঁ।কস্টিউমে তো লিখা নেই যে নিশাত পরতে পারবে না।
-“কখন পরবে?
-“যখন সমুদ্রে গোসল করতে নামবো তখন পরবো। তোর হাফপ্যান্ট আছে না? থাকলে তুইও নিয়ে নে। আমাদের সাথে পরবি।
রিশাদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। এবার তার মুখে সত্যিই লালা চলে এসেছে। সে লোলুপভাবে মুখের লালা টানলো বিচ্ছিরি শব্দ করে।
-“আমার কাছে বারমুডার পুরো ফ্যাক্টরি আছে। কিছু তো আছে, সুইমিং হট কালেকশন। পরলে পুরো আগুন।
পিয়াসা গম্ভীর স্বরে বললো,
—তোর স্পোর্টস ব্রা লাগলে বলবি রিশাদ। আমারটা দিয়ে দেবো। পরে হাওয়ায় ভাসবি। আমি, তুই আর নিশাত ট্যূরে আমরা এক গ্রুপ।মনে থাকে যেন! তোর বুকের মাপ বলিস তো! আমার খালামণির কিছু ভালো ইনার আছে, দিয়ে দেবো। সমুদ্রে পরে নামলে আরাম পাবি।

রিশাদকে দেখে মনে হলো, সে পিয়াসার কথায় তেমন অপমানিত হয় নি।সে কস্টিউমের কালার নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো।
—নতুন এক ডজন কিনে নিয়ে নিই? কি বলিস পিয়া? আমরা কালার ম্যাচ করে পরলাম।পাঁচদিন পাঁচরকমের রং। ডে ওয়ান। ইটস এ রেড ডে।
লাল দিয়ে শুরু..

নিশাত পিয়াসার হাত ধরে রিশাদের সামনে থেকে সরে এলো। পিয়াসার সাথে কথা বলা দরকার। নিপু ভাইয়ার ব্যাপারটা তাঁর ঠিক হজম হচ্ছে না।কথা নেই, বার্তা নেই একজন তাঁর হয়ে টাকা দেবে কেন? এই পৃথিবীতে একজন অচেনা মানুষ আরেকজনকে টাকা দেবে এটা অবিশ্বাস্য! যেখানে চেয়েও টাকা পাওয়া যায় না, সেখানে না চেয়ে কি করে সম্ভব? তাহলে কি রিশাদের কথাই সত্যি? সে কি নিপু ভাইয়ের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যের চোখে পরে গেছে?

-“নিপু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবো চল।
-“কোন নিপু ভাই? নেতা নিপু?
-“হু।
-“কেন?উনার সাথে কেন দেখা করবি?তোকে ডেকে পাঠিয়েছে?
-‘উঁহু! আমি উনার চোখে পরেছি কি করে জেনে আসি?
“তুই উনার চোখের পরেছিস নাকি?
-“সেটা জানতেই তো যাচ্ছি। চল।
-“তুই যা। আমি যেতে পারবো না।আমার জন্য একজন ওয়েট করছে!
-“কে?
-“এক মাথা ঠুল্লা বান্দর! জনতা ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। ক্যাশ গুণতে গুণতে মাথা ঠুল্লা।
-“মাথা ঠুল্লা বলছিস কেন?
-“মাথার তালুতে চুল নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও “পড়ে যাই পড়ে যাই” গান করছে।নিশু জানিস এত বিচ্ছিরি রকম মাথা ঠুল্লা এর আগে আমি জীবনেও দেখিনি। মাথার তালুটা দেখলেই আমার ইচ্ছে করে কাক ধরে এনে বসিয়ে দিয়ে বলি, হেগে ফেল কাউয়া। এই ঠুল্লায় হেগে দে!
-“তাহলে মাথা ঠুল্লার কাছে যাচ্ছিস কেন?
-“আমি ঠিক করেছি, মাথা ঠুল্লার মাথাটা আজ নিজের হাতে কামিয়ে দেবো। এই দেখ শেভিং রেজার নিয়ে এসেছি।মাথা কামানোর জন্য কাল রাতে সেভেন্টি পার্সেন্ট কনভিন্স করা শেষ। আজ ভুলিয়ে ভালিয়ে বাকি থার্টি পারসেন্ট করবো।
নিশাত পিয়াসার হাত ছেড়ে দিলো। সে একাই নিপু ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে৷ ক্যাম্পাসে নিপু ভাইকে নিয়ে তাঁর নামের কানাঘুষা দূর করা দরকার।
কানাঘুষা শুরুতেই না থামালে এটা বহুদূর চলে যাবে। ইউনিভার্সিটি লাইফের শুরুতেই সে ইটের ভাটা হতে চায় না। হলে পরবর্তীতে হবে। তার ভাটায় সে শুধু একটা ইটই পোড়াবে। পুড়িয়ে মজবুত করবে।তবে আগুনে নয় ভালোবাসায়।

নিপু ভাইকে খুঁজে পেতে নিশাতের বেশ একটা বেগ পেতে হলো না।তিনি ক্যান্টিনে এক জুনিয়রের ঝামেলা মেটাচ্ছেন।নিপু ভাই বেটে খাটো চেহারার স্বাস্থ্যবান মানুষ।গায়ের মধ্যে একটা থলথলে ভাব আছে।মাথায় চুলের পরিমাণ কম। যা আছে বেশির ভাগই পাকাপাকি পর্যায়ে।
বয়স আর চেহারা দেখলে মনে হয় না ইনি ইউনিভার্সিটির বড় ভাই। মনে হয় উনার ছেলেমেয়েই ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। গলার স্বরও বয়স্কদের মত ভারী।
নিশাত কিছুতেই ভেবে পেলো না, এই বেটে লোকটার চোখে নিশাত কি করে পড়লো! নিশাত নিশ্চিয়ই নিপু ভাইয়ের থেকে কমসে কম ছয় ইঞ্চি লম্বা হবে।নিজের থেকে লম্বা মেয়েদের প্রতি পুরুষ কখনো আকৃষ্ট হয় না। ইনি হলেন কেন কে জানে?
নিশাত প্রচন্ড জড়তা নিয়ে নিপু ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিশাতকে দেখে মনে হলো তিনি বেশ বিরক্ত হলেন। মুখ চোখ অন্ধকার করে ফেললেন। শার্টের খোলা বোতাম অনিচ্ছায় লাগালেন।।পিক করে থুথুও ফেললেন। রূঢ গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
—বলো কি দরকার?
নিশাত বুকের সমস্ত সাহস একসাথে সঞ্চয় করে কথা বললো।
—আপনি আমার এসকারশনের ফিস দিয়েছেন কেন?
নিপু ভাইয়ের ভ্রঁ কুঁচকে গেলো।তিনি কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করলেন। বোধহয় মনে পড়লো না। মনে না পরা বিচলিত চেহারা নিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,
-“তুমি কে?
-“আমি নিশাত।
-“কোন ডিপার্টমেন্ট?
-“অর্থনীতি।
-“টাকা দেওয়ায় কি তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে?
-“না ভাইয়া।আমি বরং আপনাকে ধন্যবাদ দিতে এসেছি। আপনি টাকাটা দেওয়ায় আমি এসকারশনে যেতে পারছি। ধন্যবাদ!
-“আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে লাভ নেই। টাকা আমি দিই নি। ধন্যবাদ উইথড্র করো।
-“ধন্যবাদ উইথড্র করবো?
-“হুঁ। অন্যের ধন্যবাদ আমি নিতে পারবো না। নানান ঝামেলায় আছি। অন্যের ধন্যবাদের ঝামেলা নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
যার ধন্যবাদ তার কাছে পৌঁছাও।
-“কার ধন্যবাদ?
-“আমি কি করে জানবো?
তুমি ধন্যবাদ দেবে। তুমি খুঁজে বের করবে। এখন দয়া করে বিদায় হও।
-“বিদায় হবো মানে? আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি ভাইয়া?
-“অবশ্যই বিরক্ত করছো!
নিপু ভাই সিগারেট ধরালেন। মুখের বিরক্তি এবার তিনগুণ হলো। চোখ, কপাল, ভ্রঁ একসাথে বাঁকিয়ে গেলো।
-“কে না কে তোমার এসকারশনের ফিস দিয়েছে আমায় এসে বলছো ধন্যবাদ৷ তোমার কি মনে হয় আমি থলে নিয়ে ধন্যবাদ পাবার জন্য বসে আছি?যত্তসব!
-“আমি দুঃখিত নিপু ভাই।
-“দুঃখিত হবার কিছু নেই৷বিদায় হতে বলেছি বিদায় হও।….
নিশাত কয়েক কদম এগিয়ে চলে আসতেই নিপু ভাই পিছু ডাকলেন।

-“এই নিশাত, একটু শুনে যাও তো।
নিশাত ফিরে গেলো।
-“বসো।
তোমাদের মত বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখলেই মেজাজ চটে যায়। তোমাদের ধারণা আমার বয়স সত্তর। আমার নানান শারীরিক সমস্যা। ব্লাডে কোলেস্টেরল বেড়ে একাকার। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। অথচ সবাই ভাবে আমি বুড়ো।সবাই নিজের ঘাড়ের সব এনে আমার উপর ফেলে দিতে চায়।এই যে তুমি এনে ধন্যবাদ দিতে চাইছো! বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো!

নিশাতের মনটা ভালো হয়ে গেলো। আহারে কি ভালো মানুষ!একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়েকে তিনি কি অবলীলায়ই না তাঁর মন খারাপের কথাগুলো বলছেন।অথচ রিশাদ কি বিশ্রী ইঙ্গিত করেই না উনার সম্পর্কে কথা বলছিলো!নিশাতের হুট করেই মনে হলো এই লোককে সব কথা সহজভাবে বলা যায়।চাইলে সেও বলতে পারে,
-“নিপু ভাই জানেন? শাকিব স্যারকে দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়। ইচ্ছে করে আমি এক দৌড়ে গিয়ে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
বলি, আপনাকে আমি এই মহাবিশ্বের সমান ভালোবাসি।
-“কি ব্যাপার? তুমি এমন ঠোঁট বিড়বিড় করছো কেন?
নিশাত মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো।
—আমার তো আপনাকে দেখে বুড়ো মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আপনার বয়স সাতাশ-আটাশ। আবার মনে হচ্ছে, ত্রিশ একত্রিশ। বয়সটা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। বয়স আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে।
নিপু ভাই নিশাতের কথায় তেমন একটা খুশি হলেন বলে মনে হলো না। তিনি কপাল কুঁচকে বললেন,
-“এরপর থেকে এরকম না জেনে ধন্যবাদ ধন্যবাদ বলে মিছিল দিয়ে চলে আসবে না। যার ধন্যবাদ তাঁর কাছে গিয়ে স্লোগান দেবে।
-“কার কাছে গিয়ে স্লোগান দেবো?
-“সেটা তোমাকে বলা যাবে না। তবে ধন্যবাদ আমার পাওনা না হলেও তোমার জন্য ধন্যবাদের কাজগুলো আমাকেই করতে হবে। আমার ঘাড়ে তোমার ভালো করার রো পড়েছে।
নিপু ভাই কফি অর্ডার করলেন।
নিশাতের সামনে কফি এলো। একটা আলাদা প্লেটে করে চারটা সিঙারাও এলো।
-“বসো কফি খাও। সিঙারা আরো লাগলে বলো। তেলের দাম বেড়েছে, এরা সিঙ্গারা করেছে মার্বেলের সাইজ।দশটা একসাথে মুখে পুড়লেও মনে হয় মুখে হাওয়া চিবোচ্ছি।
কক্সবাজার যাবে। কেনাকাটা করেছো?
নিশাত মিথ্যে করে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো।
-“টাকা পয়সার দরকার হলে নিঃসংকোচে বলবে। তোমার জন্য আমার কাছে একাউন্ট খোলা হয়ে গেছে।যখনি চাইবে, টাকা পাবে।।আর কিছু খাবে?
নিশাত লোভ সামলাতে পারলো না। তাঁর বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।
-“খেলে বলো, অর্ডার দিয়ে দিই। আমার আবার অন্য একটা কাজ আছে।
-“বিরিয়ানি খাবো ভাইয়া। বিফ!
নিপু ভাই বিরক্ত হয়ে বিরিয়ানি অর্ডার করলেন।
-“পার্সেল দিয়ে দিতে বলুন নিপু ভাই।এখন তো কফি খাচ্ছি। কফি সিঙ্গারা খেয়ে বিরিয়ানি খেতে পারবো না। বাসায় গিয়ে খাবো।
—তোমাদের বাড়িতে ক’জন?
—জি চারজন। তবে তিন প্যাকেট দিলেই হবে।দাদী বিরিয়ানি খেতে পারেন না।
নিশাত আরাম করে বসে কফি খেলো।
সিঙারা দুটোর বেশি খেতে পারলো না। ঝাল লেগে গেছে তাঁর।
নিপু ভাই উঠে গিয়ে বিরিয়ানি পার্সেল করিয়ে নিয়ে এলেন। চার প্যাকেট। নিশাতের হাতে প্যাকেট দিয়ে বললেন।
-” বিফ বিরিয়ানি নেই। চিকেন দিয়েছি। এখন যাও। আর বিরক্ত করো না।
নিশাত ধন্যবাদ বলতে যাচ্ছিলো, নিপু ভাই চোখ রাঙালেন।
-“খবরদার ধন্যবাদ দেবে না। এই ধন্যবাদ আমার না।
নিশাত ব্যাগ থেকে টাকা বের করলো।
আসল টাকা আর ফটোস্ট্যাট কপি মিলিয়ে এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে।
নিশাত টাকাটা নিপু ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো। -“আমায় টাকা দিচ্ছো কেন? বললাম তো তোমার এসকারশন ফিস আমি দিই নি।
নিশাত ভেতরের ফটোস্ট্যাট টাকার কথাটা চেপে গেলো।
-” টাকাটা আপনার কাছে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে। যার ধন্যবাদ, তাকে যদি দিয়ে দিতেন আমার মনের ভার কমতো। ঋণের বোঝা হালকা হতো।

নিপু ভাই প্রবল অনিচ্ছায় টাকাটা পকেটে রাখলেন।
নিশাত মন খারাপ করে চলে এলো। টাকাটা তাহলে কে দিয়েছে? ক্যাম্পাসে সবাই মোটামুটি নিপু ভাই দিয়েছে বলেই নিশাতকে নিশ্চিত করলো। নিশাতও এ নিয়ে আর কথা বাড়ালো না। নিপু ভাই হয়ত দেওয়ার ব্যাপারটা কোনো কারণে স্বীকার করতে চাইছেন না। তাহলে থাক না। তার তো টাকার দরকারই এখন। সে এই টাকাগুলোর হিসেব রাখবে। যখন তার টাকা হবে। সে এই সব টাকা শোধ করে দেবে ব্যস।
আজই একটা খাতা কিনে ফেলতে হবে টাকার হিসেবের। প্রথম শুরু হবে এসকারশন ফিস দিয়ে।
এরপর কফি সিঙারা আর বিরিয়ানির দাম।
নিশাত ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করে দাম নোট করলো।
এসকারশন ফিস ৫০০০টাকা
এর মাঝে পনেরোশো টাকা শোধ হয়েছে।
কফি ২৫টাকা।
সিঙারা ৪টা ৪০টাকা (তবে দুটো খাওয়া হয়নি)
চার প্যাকেট বিরিয়ানি (চিকেন)
১৭০ টাকা করে প্যাকেট।

বাড়ি ফেরার সময় পিয়াসা ফোন করলো৷
নিশাত ফোন বাজতে দেখেও রিসিভ করলো না। পুরো একবার ফোনের রিং বেজে শেষ হবে। দ্বিতীয়বারে ফোন করলে সে রিসিভ করবে।তাঁর ফোনের প্রথম কলার পিয়া। নিশাত ঠিক করে রেখেছে, তাঁর ফোনে যে প্রথম তিনজন কল করবে। তাদেরকে সে পুরষ্কার দেবে। প্রথম কলার পাবে প্রথম পুরষ্কার। পুরষ্কারও অত্যন্ত বিশেষ। নিশাত নিজে একদিন সারাবেলা তাঁর চাকর হয়ে কাজ করবে।
দ্বিতীয় কলারের পুরষ্কার হবে অর্ধেক।অর্থাৎ চাকরসেবা নেমে আসবে অর্ধদিনে।
তৃতীয় পুরষ্কার তাঁরও অর্ধেক। তবে মা এই পুরষ্কারের আওতার বাইরে থাকবে।

-“হ্যালো পিয়া।
তোকে অভিনন্দন! তুই প্রথম পুরষ্কার জিতেছিস!
-“কিসের পুরষ্কার?
-‘পুরষ্কারের ব্যাপার সাক্ষাতে বলবো। এখন বল, কেন ফোন করেছিস?
-“নিশুরে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি তো ঠুল্লাটার কান কেটে ফেলেছি!
-“কান কেটে ফেলছিস মানে কি? এত কিছু থাকতে কান কেনো কেটেছিস?
-“আমি তো ওর মাথা কামাচ্ছিলাম। সাবান পানি দিয়ে মাথা ভেজাতেই ঠুল্লাটা হাঁচতে শুরু করলো। এমন হাঁচি দিলো যে রেজার ফসকে কানের গোড়ায় লেগে গেলো।
-“তুই এখন কোথায়?
-“খিলগাঁওয়ে একটা ক্লিনিকে আছি। ক্লিনিকের নাম ” লিপিকা সেবা নিন”। তুই চট করে একটু চলে আয়। মনে হয় ঠুল্লাটাকে সেলাই করতে হবে। রক্ত দেখে ঠুল্লা ছাগলের মত ম্যাঁ ম্যাঁ করছে।
-“আমার কাছে রিকশা ভাড়া নেই পিয়া। আমি আসতে পারবো না।
-“আমার এত বড় বিপদে তুই আসতে পারবি না?
-“বিপদ এত বড় হোক আর এতটুকু হোক, ভাড়া ছাড়া রিকশাওয়ালা তো আমায় নিয়ে যাবে না। রিকশাওয়ালা তো আর আমার পি পি না?
-“পিপি টা কি?
-“প্রাণ পাখি!
-“তুই আয়। এখানে এলে আমি ভাড়া মিটিয়ে দেবো।

নিশাত মোবাইল ফোনটা ব্যাগে রেখে রিকশা নিলো।মোবাইল ফোন থাকবার তো মহা সমস্যা। মানুষ যখন তখন ডেকে পাঠাবার সুযোগ পায়। আচ্ছা, শাকিব স্যার কি কখনো তাকে ফোন করে এমন ডেকে পাঠাবে?
কি করে পাঠাবে? শাকিব স্যারের কাছে তো তার ফোন নাম্বারই নেই!
আচ্ছা, সে নিজে কি একবার ফোন করে দেখবে? নিশাত মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়েও রেখে দিলো। শাকিব স্যারকে ফোন করতে তার সাহসে কুলালো না।
আচ্ছা ভালোবাসায় সাহসের এত দরকার কেন হয়?
উফ!

-চলবে-
#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here