#চাঁদ_সুন্দরী
সুরমা
পর্ব : ১৪
জুঁইয়ের বেশ খানিকক্ষণ সময় লাগলো নিজেকে স্থির করতে।এবার তার চোখ গুলো পরিষ্কার হয়েছে।কিছুক্ষণ আগে মনে হচ্ছিল তার সামনে দুইটা পরাগ দাঁড়িয়ে আছে।এখন আবার সব কিছু একটা একটাই দেখতে পাচ্ছে।জুঁইয়ের এখন মনে হচ্ছে একটু আগে জুঁইয়ের উপরে সাইক্লোন আঘাত হেনেছিল।পরাগের চোখ এখনো রাগে লাল হয়ে আছে।পরাগের ফেইস দেখে জুঁই ভয়ে কুঁকড়ে যায়।জুঁই ভয়ে ভয়ে বলে,,,,
-আপনি আমাকে মারলেন কেন?আমি কি করেছি?
-বেয়াদব মেয়ে।আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কি করেছো?আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলে কেন?কে বলেছিল তার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে?কি এতো কথা তার সাথে??
-হেসে হেসে কথা বলেছি বলেই আমাকে মারবেন?আরেকটু জোরে মারলে হয়তো আমার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে যেতো।এখনো মাথার ভেতরে চিনচিন করছে।পরাগ জুঁইয়ের কথা শোনে একটু জুঁইয়ের দিকে এগিয়ে আসে।পরাগকে এগোতে দেখে জুঁই তাড়াতাড়ি নিজের হাত দিয়ে গাল দুটি চেপে ধরে চোখ দুটি বন্ধ করে নেয়।পরাগ জুঁইয়ের কাছে গিয়ে জুঁইয়ের হাত দুটি সরিয়ে দিয়ে দেখে জুঁইয়ের গালটা লাল হয়ে আছে।পরাগ জুঁইয়ের গালে হাত দিয়ে বলে,,,,,,
-খুব জোরে লেগেছে তাই না?
-কি আশ্চর্য। জোরে মারলেতো জোরেই লাগবে।এ আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।আপনার কি মনে হয় আস্তে লেগেছে?
-তোমার জন্যই সব হলো।
-আমার জন্য?আমি কি করলাম?
-কি করো নি বলো?আকাশের সাথে কথা বলার কি খুব দরকার ছিল?
-আমি আপনার বন্ধুর সাথে কথা বলতে যাই নি।আপনার বন্ধু এসেছে আমার সাথে কথা বলতে।পরাগ জুঁইয়ের কথায় পাত্তা না জুঁইয়ের গালে একটা চুমু দেয়।পরাগের স্পর্শে জুঁইয়ের শরীর কেঁপে উঠে।পরম আবেশে জুঁই চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলে।জুঁইয়ের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল।পরাগ চেয়ে দেখে জুঁই চোখ বন্ধ করে রেখেছে।জুঁইকে এভাবে দেখতে বেশ ভালো লাগছিল।পরাগ জুঁইয়ের দুই চোখে চুমু দিয়ে বলে,,,,,
-আম সরি।আর কোনোদিনও মারবো না।তুমিও আর কখনও এমন ভুল করো না।কোনো ছেলের সাথেই কথা বলার দরকার নেই।মনে থাকে যেন।নিচে আসো।সবাই নিচে অপেক্ষা করছে।কথা গুলো বলে পরাগ নিচে চলে যায়।জুঁই আবুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।পরাগের কাণ্ড গুলোতে জুঁই শুধু অবাকেই হয়েছে।কিছু বুঝতে পারে নি।কিছুক্ষণ পর জুঁই নিচে গিয়ে দেখে সবাই আনন্দ করছে।জুঁই গিয়ে এক পাশে দাঁড়াতেই আকাশ এসে জুঁইয়ের পাশে দাঁড়ায়।আকাশকে নিজের পাশে দেখে জুঁইয়ের ভয় লাগতে থাকে।জুঁই এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে পরাগ তাদের দেখছে কিনা।নাহ!পরাগ এখানে নেই।জুঁই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
-কিছু বলবেন?
-হু,বলতেই তো চাই।
-যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।আমার সময় নেই।
-কেন বলোতো?তুমি এখন কি করবা?
-কিছু করবো না।কিন্তু আপনার সাথে কথা বলবো না।
-কেন?আমার সাথে কথা বললে ভালো লাগে না?
-ভালো লাগা খারাপ লাগার বিষয় না।আপনার সাথে কথা বললে আমাকে ভর্তা বানাবে।
-ভর্তা বানাবে মানে?কে ভর্তা বানাবে?জুঁই সামনে তাকিয়ে দেখে পরাগ তার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।পরাগকে দেখে জুঁইয়ের কলিজা শুকিয়ে যায়।জুঁই পরাগের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,,,,
-আ,প,নি থা,কু,ন।আ,মি গে,লা,ম। জুঁই চলে যেতে নিলে আকাশ জুঁইয়ের সামনে এসে বলে,,,,
-তোমাকে আমার খুবই ভালো লেগেছে।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আকাশের কথা শোনে জুঁই কিছুক্ষণ হা করে থাকে।তারপর বলে,,,,
-আপনার মাথা ঠিক আছে?কি সব উল্টাপাল্টা বলছেন?
-তোমাকে দেখলে কারো মাথাই ঠিক থাকার কথা না।তুমি রাজি থাকলে আজকেই আমরা বিয়ে করবো।
-আপনি বরং নর্দমায় গিয়ে ডুব দিয়ে আসেন।সেন্টের গন্ধে মাথা ঠিক হয়ে যাবে।কথাটা বলেই জুঁই একটা দৌঁড় দেয়।কিছুটা দৌঁড়ে যাওয়ার পর জুঁই গিয়ে পরাগের সাথে ধাক্কা খায়।পরাগ রাগে গজগজ করতে করতে জুঁইয়ের হাত চেপে ধরে।এতটা শক্ত করে ধরে যে ব্যথায় জুঁইয়ের চোখে পানি চলে আসে।পরাগ বলে,,,,,,
-আমার কথা গুলো কানে যায় না?তাই না?জুঁই চেয়ে দেখে রাগে পরাগের মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।ভয়ে জুঁই কান্না করে দেয়।জুঁইয়ের কান্না দেখে পরাগের রাগ উড়ে যায়।পরাগ জুঁইয়ের হাত ছেড়ে দেয়।জুঁই আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে আয়েশা বেগমের কাছে চলে যায়।আয়েশা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।জুঁইকে কাঁদতে দেখে আয়েশা বেগম হতভম্ব।তিনি আদুরে কণ্ঠে বলেন,,,
-কি হয়েছে?এভাবে কাঁদছিস কেন?কেউ কিছু বলেছে???জুঁই আয়েশা বেগমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কান্না করতেই থাকে।আয়েশা বেগম আবার বলেন,,,
-পাগলী মেয়ে।না বললে বুঝবো কেমনে কি জন্য কাঁদছিস।বল কি হয়েছে?জুঁই কাঁদতে কাঁদতে এক সময় কান্না বন্ধ হয়ে যায়।আয়েশা বেগম জুঁইকে নিয়ে উপরে চলে যান।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের কান্নার কারন অনেকবার জানতে চাইলেও জুঁই কিছু বলে নি।অনুষ্ঠান শেষ হলে সব মেহমান চলে যায়।পরাগ আয়েশা বেগমের কাছ থেকে জানতে পারে জুঁই অনেক কান্না করেছে।জুঁইয়ের কান্নার কথা শোনে পরাগ ভেতরে ভেতরে অনুতপ্ত হয়।বেচারা সারা রাত ছটফট করে।
সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট টেবিলেও জুঁইয়ের সাথে পরাগের দেখা হয় নি।পরাগের মনটা খারাপ হয়।সে বিষণ্ণ মনে অফিসে চলে যায়।কিন্তু অফিসেও কিছুতেই কাজে মন বসছে না।তাই কাজ কর্ম সব ফেলে রেখে পরাগ জুঁইয়ের কলেজে চলে যায়।কলেজে গিয়ে দেখে জুঁই আজ কলেজে যায় নি।তাই পরাগ নিজের বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে দেখে আরেক ধামাকা।ডয়িং রুমে আকাশের বাবা মা আর আয়েশা বেগম বসে আছেন।পরাগকে দেখে আয়েশা বেগম বলেন,,,,
-এই সময় তুই বাসায়?
-হু,আসলে কাজে মন বসছে না।তাই চলে আসলাম। আন্টি আঙ্কেল আপনারা হঠাৎ আমার বাসায়?কি মনে করে?পরাগের কথা শোনে আকাশের বাবা মা মুছকি হাসেন। আয়েশা বেগম বলেন,,,,
-আকাশ জুঁইকে পছন্দ করে।তাই ওরা আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।আয়েশা বেগমের কথা শোনে পরাগের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।সে এই কথাটা শোনার জন্য এখন প্রস্তুত ছিল না।পরাগের মুখ দিয়ে টু করে শব্দ বের হচ্ছিল না।অনেক কষ্টে পরাগ নিজেকে কিছুটা সামলে নিলো।পরাগ বলে,,,,,
-আম্মু তুমি এসব কি বলছো?এখনি জুঁইয়ের বিয়ে?এখনো জুঁই ছোট।ওরতো এখন পড়ালেখা করার সময়।
-জানি।কিন্তু আকাশ তোর খুব ভালো বন্ধু।ওর কাছে জুঁইকে দিলে আমিও নিশ্চিন্ত থাকবো।তাছাড়া বিয়ের পর জুঁই পড়াশোনা করবে।আকাশ তো পড়াশোনা করতে না করবে না।এমন কোনো নিয়ম আছে যে পড়াশোনা শেষ করেই বিয়ে করতে হবে?আগে করা যাবে না।
-এসব জুঁই জানে?
-হু,বলেছি।
-জুঁই কি বলে
-বলেছে আমরা যা সিদ্ধান্ত নিবো তাতেই ওও রাজি।জুঁইয়ের কথা শোনে পরাগের রাগ লাগছে।ইচ্ছে করছে থাপ্পড় মেরে সব গুলো দাঁত ফেলে দিতে।পরাগ আকাশের মা বাবার সামনে গিয়ে বলে,,,,,,
-আন্টি আঙ্কেল আপনারা আজ আসুন।আমরা চিন্তা করে আপনাদের জানাবো।পরাগ একমতো আকাশের মা বাবাকে জোর করেই বাসা থেকে বের করে দেয়।পরাগ আয়েশা বেগমকে বলে,,,
-আম্মু জুঁই কোথায়?
-উপরে।তার রুমেই আছে।আকাশ জুঁইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।কেন?
-আমি ওর সাথে কিছু কথা বলতে চাই।পরাগ জুঁইয়ের রুমে গিয়ে দেখে আকাশ জুঁইয়ের সাথে কথা বলছে।পরাগকে দেখে জুঁই ঘেমে একাকার হয়ে যায়।পরাগ গিয়ে আকাশের কাঁধে হাত রেখে বলে,,,
-তোর বাবা মা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।যা তাড়াতাড়ি যা।আকাশ পরাগকে দেখে বলে,,,
-আরে দোস,তুই কখন এলি?
-মাত্রই। এখন বাসায় না আসলে তো এতো কিছু জানতেই পারতাম না।আর আকাশ,তুই আপাতত আমাকে একবার বলতে পারতি।
-আসলে দোস,,,
-যা হোক,তুই এখন আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে বাসায় যা।আর বাসায় গিয়ে মাথায় বেশি করে সরিষার তেল দিবি।তবে যদি তোর মাথা থেকে মেয়েদের ভূত দূর হয়।আকাশ পরাগের কথার কিছু বুঝে নি।পরাগ আকাশকে নিচে পাঠিয়ে দেয়।পরাগকে দেখে জুঁইয়ের গতকালের চড়টার কথা মনে হয়।পরাগ জুঁইয়ের দিকে এগোতে থাকে।পরাগকে নিজের দিকে এগোতে দেখে জুঁই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।যখন তার জ্ঞান ফিরে চোখ খুলে দেখে তার গায়ে লাল বেনারসি। গা ভর্তি গহনা।
চলবে———–