#চাঁদ_সুন্দরী

সুরমা
পর্ব : ১৬ (অন্তিম পর্ব)

জুঁই পরাগের টিশার্ট টা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে।তারপর টিশার্ট টা বিছানায় মেলে রাখে।জুঁই টিশার্টের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,,,
-তোর এতো বড় সাহস,তুই আমাকে চড় মারিস?আবার আমাকে জোর করে ভয় দেখিয়ে বিয়েও করলি?দাঁড়া,দেখ আমি তোর কি করি।বলেই জুঁই পরাগের টিশার্টের উপর ডিসুম ডিসুম কয়েকটা কিল ঘুষি মারে।পরাগ জুঁইয়ের জামা নিয়ে দরজার কাছে আসতেই দেখে জুঁই তার টিশার্টে ঘুষি দিচ্ছে আর কি যেন বলছে।বিষয়টা বুঝার জন্য পরাগ দরজার কাছে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে জুঁই কি করছে।জুঁই টিশার্ট টা নিজের চোখের সামনে মেলে ধরে বলে,,,
-আমাকে ভয় লাগে না?আমার নাম জুঁই।আমার সাথে রাগে কথা বলা?এবার এমন শিক্ষা দিবো আর একবার আমার সামনে চোখ তুলে তাকালে ভয় লাগবে।জুঁইয়ের কাণ্ডগুলো দেখে পরাগ হতভম্ভ।মেয়েটা পাগল নাকি।টিশার্টের সাথে কথা বলছে।জুঁই পরাগের টিশার্টে কামড় দিয়ে টান দেয়।পাতলা টিশার্ট হওয়ায় টিশার্ট টা ছিড়ে যায়।জুঁইতো ভয়েই শেষ।জুঁই ফেইসটা একদম বাচ্চাদের মতো করে ফেলে।এবার পরাগের মজা লাগছে।ভেতরে ভেতরে পরাগ হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।ভয়ে জুঁই কান্না করে দেয়।পরাগ ফিসফিস করে বলে,,,,
-বীর।এইটুতেই কান্না করে দিসে।আর একটু আগে কি করছিল সামান্য একটা টিশার্টের সাথে।পরাগে অনেক হাসি পাচ্ছে।পরাগ রুমে ঢুকতেই জুঁই কান্না থামিয়ে তাড়াতাড়ি পরাগের টিশার্ট টা বিছানায় রেখে দেয়।পরাগ জুঁইয়ের সামনে গিয়ে বলে,,,,
-কি,কাঁদছো কেন?
-কই কাঁদছি?
-আমি মনে হয় তোমার কান্নার শব্দ শোনলাম।
-আমি কাঁদবো কেন?আমি কাঁদি নি।আপনি ভুল শোনেছেন।
-ও আচ্ছা।না কাঁদলেই ভালো।এই নাও তোমার জামা।পরাগ জুঁইয়ের হাতে জামা গুলো দিয়ে নিজে টিশার্ট টা হাতে নিয়ে বলে,,,,,
-একি?আমার টিশার্টের এমন অবস্থা করলো কে?এক্ষণিতো ভালো ছিল।তুমি জানো আমার টিশার্ট টা কি করে এমন হলো?
-আ,মি,
-মনে হচ্ছে ইদুরে কুটকুট করে কেটেছে।
-আমি মোটেও ইদুর না।
-আমি তোমাকে ইদুর বললাম কখন?
-আমি জানি,আপনি আমাকেই বলেছেন।আপনি খুব পচা লোক।আমাকে মারেন,আমাকে বেয়াদব বলেন আমাকে বেয়াদব বলেন।এখন বলছেন আমি ইদুর।এ্যা এ্যা মামনিিিিিিিিিিি।জুঁই অনেক জোরে কান্না করতে শুরু করে।পরাগ বলে,,,
-এই মেয়ে।এতো জোরে কাঁদছো কেন?বন্ধ করো।আম্মু চলে আসবে।পরাগের কথা শোনে জুঁই আরো জোরে কাঁদে।পরাগ বিরক্ত নিয়ে জোরে এক দমক দিলে জুঁইয়ের কান্নার গতি আরো বেড়ে যায়।জুঁইয়ের কান্নার শব্দ শোনে আয়েশা বেগম পরাগের রুমে চলে আসে।এসে দেখে জুঁই কাঁদছে।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের কাছে গিয়ে বলে,,,,,
-কিরে,তুই কাঁদছিস কেন?কি হয়েছে?আয়েশা বেগমকে দেখে জুঁই বলে,,,,,
-তোমার ছেলে আমাকে বকে।জুঁইয়ের কথা শোনে পরাগ জুঁইয়ের দিকে হা করে চেয়ে থাকে।আয়েশা বেগম পরাগের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
-জুঁই যা বলছে সেসব কি সত্যি?পরাগ কি বলবে বুঝতে পারছে না।পরাগ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।জুঁই বলে,,,,
-সত্যি বলছি।তোমার ছেলে আমাকে মেরেছেও।পরাগ অবাহ হতে হতে শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।এই মেয়ে কি?আম্মুকে এসব কথা বলে দিলো?জুঁইয়ের ককথা শোনে এবার আয়েশা বেগম রেগে গেলেন।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,,,,
-পরাগ, আমি যা শোনছি তা কি সত্যি?
-ই,য়ে মা,নে আ,ম্মু,
-তুই নিজে জুঁইকে বিয়ে করতে বললি।তোকে কেউ জোর করে নি।আমিও বলি নি।আর বিয়ে করতে না করতেই কিসব শোনছি?বাকি জীবনটা কেমনে কাটবে বলতে পারিস?বউয়ের গায়ে হাত তুলিস??এই শিক্ষা আমি তোকে দিয়েছি?এখনো পর্যন্ত কোনো দিন তোর বাবা আমাকে আঘাত দিয়েও একটা কথা বলে নি।আর তুই আজ বিয়ে করলি আর আজকেই মেয়েটাকে কাঁদালি?
-সরি,
-সরি বললেই শেষ?কান ধর।আয়েশা বেগমের কথা শোনে পরাগ হতভম্ভ।হায় হায়,কি দিন আসলো।আজকে কিনা তাকে কান ধরতে হবে।পরাগ বলে,,,
-আম্মু এসব কি বলছো?কান ধরবো মানে?
-শুধু কান ধরবি না।কান ধরে ১০০বার উঠ বস করবি।
-আম্মু,প্লীজ।লোকজনের সামনে
-আমি কি বলছি কানে যাচ্ছে না।এক্ষণি কান ধর।বেচারা পরাগ মুখ কাঁচুমাচু করে আয়েশা বেগমের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আয়েশা বেগম বলেন,
-লাভ নেই।কান ধরতে বলেছি কান ধর।পরাগ তার মাকে কিছুতেই বুঝাতে পারলো না।বাধ্য হয়ে সে কান ধরে।আর বলে,,,,,
-আল্লাহ এই মেয়ে কি।এসব কথা আম্মুকে বলার কি দরকার ছিল?কি কপাল।বিয়ের প্রথম দিনেই এমন বাঁশ দিলো?লজ্জায় পরাগ শেষ হয়ে যাচ্ছিল।আয়েশা বেগম জুঁইকে বলে,,,,,
-এবার যা।গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোকে খাবার দিচ্ছি।আর কোনোদিন পরাগ তোকে বকবে না।আর বকলে আমাকে বলবি।কেমন?
-আচ্ছা।জুঁই খুশি মনে ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে আসে।পরাগের দিকে আড় চোখে তাকায়।তারপর রুম থেকে বের হয়ে যায়।আয়েশা বেগম জুঁইকে নিজের হাতে খাইয়ে দেন।জুঁই খাওয়াদাওয়া করে আনিকার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।বাকিটা দিনে পরাগ একবারো জুঁইকে দেখতে পায়নি।সন্ধ্যার দিকে ডেকোরেশনের লোক এসে পরাগের রুমে বাসর ঘর সাজায়।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের জন্য লাল বেনারসি আর পরাগের জন্য সাদা পাঞ্জাবি নিয়ে আসে।একমাত্র ছেলে বিয়ে করেছে।আর কোনো রকম আয়োজন হবে না এ হতেই পারে না।বিয়েটা হঠাৎ করে হলেও তিনি সব নিয়ম পালন করবেন আর কয়দিন পর একটা বড় রিসিপশনের আয়োজন করার প্ল্যানও করেছেন।সন্ধ্যার পরে পার্লার থেকে লোক আসলে আনিকা জুঁইকে ডেকে তুলে। জুঁই বলে,
-ইশ ডাকছো কেন?ঘুমাতে দাও।
-পার্লার থেকে লোক এসেছে তোমাকে সাজাতে।উঠো।
-আমাকে সাজাবে কেন?লোক গুলো হয়তো ভুল বাড়িতে চলে এসেছে।
-জ্বি না।তারা ঠিক বাড়িতেই এসেছে।আজ তোমার আর ভাইয়া বাসর রাত।তাই তোমাকে সাজাতে এসেছে।আনিকার কথা শোনে জুঁই এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,,,
-বা,স,র???????জুঁই মনে মনে বলে,একটু আগে আমার জন্য কান ধরে উঠবস করেছে।এখন আমাকে একা পেলে যদি মারে?
-হু।বিয়ে হয়েছে আর বাসর হবে না?চলো
-না না আমি যাবো না।
-যাবে না কেন?
-তোমার ভাই আমাকে মারবে।
-ভাইয়া তোমাকে মারবে কেন?চলো তো।কিছু হবে না।
-না,আমি যাবো না।
-তুমি ভাইয়াকে এতো ভয় পাও কেন?ভাইয়া খুব ভালো।ভাইয়ার মতো ছেলে খুঁজে পাবে না।
-তোমার ভাইয়ার মতো আর ছেলে নাই?
-না,থাকলেও আমার জানা নেই।
-না থাকলেই ভালো।তাহলে আর কোনো মেয়েকে আমার মতো ঠাস ঠাস খেতে হবে না।বাবাগো বাবা।কি শক্ত হাত।আমার চোখ গুলো ডাবল হয়ে গেছিল।আরেকটু জোরে দিলেতো থ্রিপল হয়ে যেতো।আল্লাহ আমাকে বাঁচাইছে।
-মানে? কি সব বলছো বলোতো?
-কিছু না।আমি সাজবো না।তুমি গিয়ে বলো।
-আম্মু কিন্তু রাগ করবে।কষ্টও পাবে।আনিকার কথা শোনে জুঁইয়ের হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে যায়।এই লোকগুলো তার জন্য এতো কিছু করলো।আর আজ তার জন্য সবার মন খারাপ হবে?মামনি কষ্ট পাবে?তা কিছুতেই হতে পারে না।জুঁই বলে,,
-ঠিক আছে।আমি যাবো।তুমি গিয়ে বলো আমি আসছি।জুঁই বিছানা থেকে উঠে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসে।ডয়িং রুমে পার্লারের মেয়েরা বসে আসে।জুঁইকে আসতে দেখে আয়েশা বেগম বলে,,,,
-আয় আয়।তোর জন্যই অপেক্ষা করছি।আয়েশা বেগম জুঁইকে নিয়ে সবার মাঝে বসিয়ে দিয়ে পার্লারের মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন,,,,,
-আমার বউমাকে পরীর মতো সাজাবে আজ।যাতে আমার ছেলে দেখে চিনতে না পারে।আয়েশা বেগমের কথা শোনে একটা মেয়ে বলে,,,,
-আপনার বউমাতো এমনিতেই পরীর মতো সুন্দর।না সাজালেও চলে।আর সাজালে আপনার ছেলে চিনতেই পারবে না।দেখবেন। সবার কথায় জুঁই লজ্জায় লাল নীল রং ধারণ করে।পার্লারের মেয়েরা জুঁইয়ের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেয়।P অক্ষরের চার পাশে সুন্দর ডিজাইন। এই প্রথম কারো নামে মেহেদি পড়লো জুঁই।এ এক অন্য রকম ফিলিংস।এক ভালোলাগা।জুঁই জানে না হঠাৎ তার মনে এতো আবেগ কেন লাগছে।৫মিনিট পরেই মেহেদির গাঢ় রঙে রাঙিয়ে যায় জুঁইয়ের হাত।জুঁই অপলকে চেয়ে থাকে P অক্ষরটার দিকে।হঠাৎ করেই জুঁইয়ের খুব ইচ্ছে করছে পরাগকে একটু দেখতে।মনটা কেন জানি ব্যকুল হয়ে গেছে।জুঁই বারবার দরজার দিকে উঁকি দিকে থাকে।আর মনে মনে বলতে থাকে,,,,,
-একবার আসবেন প্লীজ।আপনাকে দেখার জন্য যে আমার মন ব্যাকুল হয়ে আছে।প্লীজ,আসুন না।প্লীজ প্লীজ প্লীজ।জুঁই চোখ বন্ধ করে কথা গুলো বলছিল।চোখ খুলে দেখে পরাগ তার সামনে তার দিকে চেয়ে তাকিয়ে আছে।জুঁইও পরাগের দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর পরাগ জুঁইয়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালে জুঁই লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে।

রাত ১০টা বাজে।জুঁইকে সাজানো শেষ।লাল টুকটুকে শাড়িতে জুঁইকে অপরূপা লাগছে। আয়েশা বেগম ছেলেকেও ডয়িং রুমে ডেকে পাঠালেন।একটা অবুঝ মেয়েকে নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন।এ নিয়ে ছেলের সাথে কিছু কথা বলার দরকার।পরাগ ডয়িং রুমে এসে জুঁইকে দেখে চমকে উঠে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।তার মনে হচ্ছিল কোনো চাঁদ কন্যা তার চোখের সামনে বসে আছে।চাঁদ যেমন আলো দিয়ে পৃথিবী আলোকিত করে।তেমনি এই মেয়ের রূপের আলোয় তার ঘর আলোকিত হয়েছে।ছেলেকে দেখে আয়েশা বেগম ডাক দিলেন।মায়ের কথায় পরাগের ঘোর কাটে।পরাগ গিয়ে তার মায়ের পাশে দাঁড়ায়।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের হাতটা পরাগের হাতের উপর রেখে বললেন,,,,
-আজ থেকে এই মেয়ের দায়িত্ব আমি তোর হাতে তুলে দিলাম।কখনও জুঁইকে কষ্ট পেতে দিস না।মেয়েটা জীবনে অনেক কষ্টের সমম্মুখিন হয়েছে।এখন থেকে সব রকম সুখ যেন পায়।
-আম্মু,আমি তোমাকে কথা দিলাম।আজ থেকে জুঁইয়ের হাসির দায়িত্বটা আমার।কখনই কষ্ট পেতে দিবো না।মা ছেলের কথা শোনে জুঁই কান্না করে দেয়।সে জীবনে কি পূণ্য করেছে কে জানে।না হলে এমন একটা পরিবার কেউ পায়।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন,,,
-আবার কাঁদে?কান্না থামা বলছি।না হলে কিন্তু চড় খাবি।জুঁই তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে বলে,,,
-মাগো মা,,আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বলেন,,,
-কি হয়েছে??
-দেখছি মা ছেলে দুজনেই চড় স্পেশালিষ্ট। কথায় কথায় চড় মারতে চায়।জুঁইয়ের কথা শোনে রুমের সবাই হেসে দেয়।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলেন,,,
-আমি আমার মেয়েকে যখন ইচ্ছা মারবো।আর কেউ মারতে পারবে না।কেউ যদি তোকে কিছু বলে আমাকে বলবি।দেখবি আমি তার কি অবস্থা করি।জুঁই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।আনিকা বলে,,,
-আম্মু আমি এখন জুঁইকে কি ডাকবো?ভাবী নাকি জুঁই?আয়েশা বেগম হেসে বলেন,,,
-তোর যখন যা মন চায় তাই ডাকবি।
-তাহলে আমি ভাবী ডাকি।কি বলো ভাইয়া?আমার চাঁদ সুন্দরী ভাবী।বলে আনিকা জুঁইকে জড়িয়ে ধরে।জুঁই বলে,,,,
-হু,আমার দুষ্টু মিষ্টি ননদী।আয়েশা বেগম বলেন,,,
-অনেক রাত হয়েছে।আনিকা,তুই জুঁইকে পরাগের ঘরে দিয়ে আয়।যা।
-ঠিক আছো।চলো মাই সুইট হার্ড ভাবী।আনিকা জুঁইকে পরাগের রুমে রেখে আসে।জুঁই খাটের উপর বসে আছে।রাত ১১টার উপরে বাজে।পরাগ এখনো রুমে আসছে না।জুঁইয়ের খুবই বিরক্ত লাগছে।বাইরে প্রচুর বৃষ্টি।আর জুঁইয়ের মনের ভেতরে প্রেমের তোলপাড় করা ঝড়।হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে জুঁই মাথা তুলে দেখে পরাগ আসছে।জুঁই বিছানা থেকে উঠে পরাগের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,,
-এতক্ষণে আসলেন?
-হু,কেন?
-বসে থাকতে থাকতে আমি বুরিং হয়ে গেলাম।এখন চলুন তো আমার সাথে।পরাগ অবাক হয়ে বলে,,,,
-কোথায়?
-কোথায় আবার? ছাদে।
-ছাদে? বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, এই বৃষ্টির মাঝে ছাদে যাবো। মাথা ঠিক আছে তোমার?
-আমার মাথা ঠিকেই আছে, যাবেন কিনা বলেন?
-না যাবোনা, বৃষ্টি পড়ছে, তার মধ্যে আজ আমাদের বাসর রাত। এই রাতে বৃষ্টিতে ছাদে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
-আপনি যাবেন না তাই তো?
– হুম যাবোনা।
-আমি কিন্তু এখনি মামনিকে গিয়ে বলবো আমার সাথে না গেলে!
-কিহ!আমাকে ব্রেকমেইল করা হচ্ছে?যাও,গিয়ে বলো।আমার কোন সমস্যা নাই।পরাগের কথা শেষ হলে জুঁই দরজা খুলে বাইরে বের হতে নিলে পরাগ এসে বলে,,,
-এই যাবো, (কি মুশকিল এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে ছাদে উফ, ডিসকাস্টিং!)
-কিছু বললেন?
-না বলিনি, চলো
-হ্যাঁ চলেন!
বেচারা পরাগ।কি করবে বউয়ের পেছন পেছন গেলাে ছাদে।জুঁই একটু আগেই গেলো।জুঁই মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করে। পরাগ হঠাৎ করে যেন একটা পরী দেখতে পেলাে।এটাকি সত্যি জুঁই?নাকি পরী। দুটু হাত ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। চুল গুলো ভিজে একপাশে পড়ে আছে। শাড়ীর আচলটা কমড়ে বাঁধা। কাজল ধুয়ে লেপ্টে গেছে।সব সাজ পানিতে চলে গেছে।তবুও অপরূপ সুন্দর লাগছে জুঁইকে।পৃথিবীতে কতো রকম কন্যা হয়।মৎস কন্যা আরো কতো কি।জুঁই হলো বৃষ্টি কন্যা।পরাগ আর নিজের মনকে মানাতে পারছিল না। কি করবে? বউ বৃষ্টিতে একা একা ভিজছে তার কি দাঁড়িয়ে থাকলে চলে?পরাগও ভিজতে শুরু করলাে। আস্তে আস্তে পরাগ তার পরীটার কাছে এগিয়ে গেলাে। কাছ থেকে আরও সুন্দর লাগছে জুঁইকে। বিধাতা মনে হয় সব রূপ তাকে দিয়ে দিয়েছে।পরাগ আচমকা জুঁইকে কোলে তুলে নিলাে। জুঁই পরাগের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,,,
– কি করছেন?
-তুমি এত সুন্দর কেনো জানপাখি?
-হইছে আর পাম দিতে হবেনা। জুঁইয়ের এই কথা শোনে পরাগ তার মুখটাকে একটু দুষ্টুমিতে বন্ধ করে দিলাে।জুঁইয়ের ঠোঁটে একের পর এক চুমু খেতে লাগলো।পাঁচ মিনিট পরাগ এমন পাগলামি করলো।তারপর জুঁইয়ের ঠোঁট দুটি ছেড়ে দিয়ে বললো,,
-সত্যিই তুমি এত সুন্দর কেনো? তোমার রূপে পাগল হয়ে গেছি। খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়, প্লিজ কখনোও আমাকে ছেড়ে যেওনা।
-আপনার বউ আপনারি থাকবে।কোথাও যাবেনা। আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আমার এসব ছোট ছোট পাগলামী গুলা সহ্য করতে না পারলে খবর আছে।হুম
-তোমার সব পাগলামী আমি সহ্য করবো। তুমি শুধু আমাকে তোমার ভালোবাসা দিও।
-হুম ভালোবাসবো।তবে আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে এমনি করে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে।মাঝে মাঝে রাতে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। বিকেলে নদীর ধারে আমাকে নিয়ে হাঁটতে হবে হাতে হাত রেখে।শত অফিস থাকলেও আমার জন্য সময় বের করতে হবে।পরাগ আর জুঁইকে কথা বলতে দিলাে না। জুঁইয়ের ঠোঁট দুটি আবার নিজের ঠোঁটের আয়ত্তে নিয়ে গেলো।জুঁই পরাগের চুল গুলো শক্ত করে মুঠোই করে ধরলো।দুজনেই দুজনাতে পাগলামি করতে লাগলো।পরাগ জুঁইয়ের ঠোঁট ছাড়তেই জুঁই হাঁপাতে লাগলো।পরাগ বলল,,,,,
-তোমার বলা না বলা সব আবদার রাখবো ম্যাডাম।তবে তুমি আমার এই ছোট ছোট দুষ্টুমির আবদার গুলো রেখো।চলো,আজ আর ভিজতে হবে না।এবার রুমে যাই।রুমে গিয়ে দুজনে জমিয়ে ক্রিকেট খেলবো।পরাগের কথা শোনে জুঁই আর কিছুই বলতে পারলো না।লজ্জায় পরাগের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল।

হঠাৎ করে পরাগ কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে যায়।পরাগের ঘোর কেটে যায়।পরাগ তাকিয়ে দেখে সে নিজের বাসার সামনে।ভালোবাসায় কেটে যায় বেশ কিছু দিন।পরাগ উঠে দাঁড়ায়।রাত তো শেষ হয়ে এলো।জুঁইকে কোথাও পেলো না।কোথায় গেলো মেয়েটা।পরাগের মনে অনুশোচনা কাজ করছে।বিয়ের দিন মাকে ছোঁয়ে কথা দিয়েছিল কোনো দিন এই মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দিবে না।কিন্তু আজ কি করে এই মেয়েটাকে এতো আঘাত করলো।কি বলবে তার মাকে।তাঁর মাতো জুঁইয়ের অপেক্ষায় আছে।পরাগ নিজের রুমে গিয়ে সোফায় শোয়ে পড়লো।তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।নিঃশব্দে কাঁদছে সে।এক সময় পরাগ ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে পরাগের মুখে সোনালী সূর্যের আলো পড়তেই পরাগের ঘুম ভেঙ্গে যায়।পরাগ অনুভব করে তাঁর বুকটা ভার হয়ে আছে।সে একটু নড়তেও পারছে না।পরাগ মাথা তুলে দেখে জুঁই তাঁর বুকের উপর শোয়ে আছে।জুঁইকে নিজের বুকে দেখে পরাগের চেখ দিয়ে পানি চলে আসে।পরাগ তাড়াতাড়ি জুঁইকে জড়িয়ে ধরে উঠে বসে।জুঁইয়ের ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।জুঁই ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,,
-উঠলেন কেন?আমার ঘুম পাচ্ছে আমি আরো ঘুমাবো।পরাগ বলে,,,
-পাগলি মেয়ে,কোথায় ছিলে?কোথায় ছিলে সারা রাত? কোথায় না খুঁজেছি তোমাকে।
-বাগানে ছিলাম।বাগানে শোয়ে ছিলাম।কিন্তু জানেন না,আপনার বুকে না শুলে আমার ঘুম হয়না।কিন্তু আপনি তো রুমে ছিলেন না।পরাগ জুঁইয়ের দুই গালে হাত দিয়ে পাগলের মতো জুঁইয়ের মুখে চুমু খেতে থাকে।পরাগের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল।পরাগ বলে,,,
-পাগলী বউ আমার।অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাকে।আমাকে ক্ষমা করো।আর কখনও তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না।প্রমিস।তোমার এই পাগল বরটাকে ক্ষমা করে দাও।জুঁই পরাগের দুটি হাত চেপে ধরে বলে,,,,,
-কি বলছেন এসব?আপনাকে আমি কি ক্ষমা করবো?আপনাকে ক্ষমা করার সাধ্য আমার নেই।এসব কথা বলে আমাকে পাপী করবেন না।আপনি হলেন ফেরেশতা।আপনার জন্য আমি এতো সুখের সন্ধান পেলাম।আপনি আমার জীবনটা রঙিন করলেন।আমি কতো বড় ভাগ্যবতী আপনার মতো একজন জীবন সঙ্গী পেলাম।কতো জনমের পূণ্য।আপনি শুধু আমাকে আপনার পায়ে একটু জায়গা দিবেন।আমি সারাটা জীবন এখানেই কাটিয়ে দিবো।
-আমার পায়ে নয়।তোমার জায়গা আমার হৃদয়ে।আমার বুকের গহিনে।পরাগের কথা শেষ হলে জুঁই বলে,,,,
-আপনার বুকে আমি একটু ঘুমাই?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আপনার বুকে না শুলে আমার ঘুম হয়না।মনে হয় এই বুকেই পৃথিবীর সব সুখ জমা আছে।পরাগ জুঁইকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,
-ঘুমাও।এই বুকটা তো তোমার জন্যই তৈরি করা।এই বুকে মাথা রাখার অধিকার শুধু আমার এই চাঁদ সুন্দরী বউটার।আর কারো নয়।পরাগ জুঁইকে নিজের বুকে নিয়ে আবার সোফায় গা এলিয়ে দেয়।জুঁইও পরাগের বুকের সাথে লেপ্টে যায়।সে নিজেকে বরাবরের মতো পরাগের বুকে বিলিন করে দেয়।পরাগ জুঁইয়ের মাথায় চুমু দিয়ে বলে,,,,
-এই বুকে তুমি না শুলে আমারও নিজেকে অপূর্ণ মনে হয়।আমার এই জীবনে তুমিযে পূর্ণতাসাধক।

♥সমাপ্ত♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here