#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১৭)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

মেহজা ঘাবড়ে যায় অনেক। কোনোমতে ভয় লুকিয়ে আড়ষ্ট হয়ে বলে,
“শাস্তি মানে কীসের শাস্তি?”

“যা করেছ তা মোটেও ঠিক কর নি।”

“ঠিক বেঠিক আপনাকে বলে করব নাকি? আর আপনি কে যে আপনার কথা আমার রাখতে হবে।?”

“আমি কে সেটা নাহয় পরেই জানবে। আগে পানিশমেন্টটা পুরো করে যাও।”

“নেভার এভার!”

“ইউ হ্যাভ টু মিসেস ইয়াজিদ।”

“নো!”

“ওকে! তোমার কাছে দুইটি অপশন আছে। এক. হয় আমার সাজা মেনে নেওয়া আর দুই. সবাইকে বলে দিতে হবে যে তুমি আমার স্ত্রী আমি তোমার স্বামী। আর তুমি যদি না বল তো আমি তো আছি। একেবারে কাবিনা নামা সহ সবাইকে দেখিয়ে বলে দিব যে তুমি আমার বউ। নাও! ডিসিশন ইজ ইউর!”

মেহজা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিয়ের ব্যাপারটা কেউ জানুক তা সে চায়না। এতে সম্পর্কের মার প্যাচে সে আরো বেশি তলিয়ে যাবে। সাজা টা যেমনই হোক নিয়ে নেওয়া উচিত।
মেহজা কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলে,

“ঠিক আছে। আপনি যা শাস্তি দিতে চান দিন।”

“শিউর তো?”

“হুম।”

“ওয়াদা?”

“পাক্ক!”

“আচ্ছা। তাহলে সাজাটা বলি, কাল সারাদিন তুমি আমার সাথে থাকবে। ফার্স্ট টু লাস্ট অনুষ্ঠানের সবকিছুতেই আমার সাথে থাকবে এন্ড মোস্ট ইমপোর্টেন্ট থিং ইজ আমি যা করতে বলব তুমি তা-ই করবে। আদেশ করলে পালন করবে, নিষেধ করলে তা মেনে চলবে আর উপদেশ দিলে বুঝে নিবে। গট ইট!”

মেহজা ক্রুদ্ধ নয়নে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। এটাও কোনো সাজা! ইরফান তাকে যে এমন মারপ্যাচে ফেলবে সে ভাবতেই পারেনি। তাও এখন সে ওয়াদাবদ্ধ তাই চুপচাপ ভাথা নাঁড়িয়ে সায় দিয়ে বলল,

“ঠিক আছে। তবে সেটা সন্ধ্যা পর্যন্তই।”

“আমি কী রাত বলেছি? বেশি বেশিই এক্সপেক্ট করছ তুমি। আর বেশি চিন্তা করা ঠিক নয়। ইটস্ বেড বর হেল্থ!”

“মানে?”

“মানে জানতে হবেনা। বাসায় যাও এখানে আর এক মুহূর্ত থাকেবনা।”

“আপনি এখনই হুকুম দেওয়া শুরু করছেন কেন?”

“আচ্ছা তুমি থাকো আমি গেলাম। সুন্দর মেয়ে দেখলে এখন জ্বীনেরা এসে ঘুরঘুর করবে তোমার আশেপাশে। তারপর আর কী? চুল টেনে নিয়ে তালগাছের মাথায় বেঁধে দিবে।”

“আপনি খুব বেশিই….

“ভালো! আমি সেটা জানি। তোমার থেকে আর নতুন করে জানা লাগবেনা।”

“ভালো না ছাই। আস্ত অসভ্য একটা লোক।”

“তোমারই তো।”

“না আমার না।”

“তাহলে কার?”

“পেত্নীর।”

“ফাইনালি নিজেকে চিনেছ।”

“দূষিত পুরুষ মানুষ একটা!”

রাগে গিজগিজ করতে করতে মেহজা বাসায় চলে যায়। পেছন থেকে ইরফান চেঁচিয়ে বলে,
“নয়টায় আমার বাসায় চলে আসবে। মনে থাকে যেন!”

মেহজা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তাকে যেতেই হবে আর কিছু করার নেই।

—————————————–

দরজা খুলে মেহজাকে দেখে ইমা বিস্মিত হয়। ইমা এখানে এসেছে গোটা একটা দিন গেল মেহজা এবারের জন্যও আসেনি। এখন এত বড় হঠাৎ! ব্যাপারটা তাকে ভাবায়। মেহজা ইমার দিকে চেয়ে আদুরে কন্ঠে “আপু” বলতেই ইমা কাঠ কাঠ গলায় বলে,
“এখন এত আহ্লাদী হতে হবে না। এখন আসার সময় হলো? আর এত জলদি রেডি হওয়ার কারণ কী? কণিউনিটি সেন্টারে তো বারোটায় যেতে বলেছে।”

“এসেছি এমনেই আর রেডি হতে ইচ্ছে করছিল তাই রেডি হয়েছি। গাউনটা সুন্দর না?”

“হ্যাঁ সুন্দর।”

“রাদিফ ভাইয়া দিয়েছে।”

“তাই নাকি!”

“হুম।”

—————-🍁——————

ইরফানের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে মেহজা উঠে দাঁড়াতেই ইমা মেহজাকে তার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে বলে,

“আমি কিছু জরুরী কথা বলতে চাই তোমার সাথে। শোনার টাইম হবে?”

নয়টা অনেক আগেই বেজে গেছে ইরফানের সাথে এখনও দেখা হয়নি মেহজার। ইমাকেও না করতে পারছেনা তাই সে মাথা নাঁড়ায়। যার অর্থ হ্যাঁ। ইমাও চশমার গ্লাসটা মুছে নেয়। ডিভাইনে বসে হাতের ইশারায় মেহজাঈএও পাশে বসতে বলে। মেহজা বসতেই সে বলে ওঠে,

“সেদিন তুমি রান্না করেছিলে সবাই প্রশংসা করলেও ইরফান করেনি। তাতেই তুমি রাগ করেছিলে খুব। কারণটা অবশ্য মন্দ নয়। এত কষ্ট করে যার জন্যে রেঁধেছো তার তাচ্ছিল্য ভরা কথায় কষ্ট পাওয়া আর রাগ করাটাও স্বাভাবিক। তবে এখানিই একটা জিনিস তুমি ধরতে পারো নি। আমাদের কিছু খারাপ লাগলে আমরা হয়তো তা আর খাইনা বা কোনোমতে খেয়ে উঠি। সেক্ষত্রে ক্ষুদার টাইম তো দূরে থাক ইরফানের খাবার ভালো না লাগলেই সে খাওয়া ছেড়ে উঠে যায়। খারাপ লাগছে তো লাগছে। আর ইরফান ক্ষিদে সহ্য করে নিলেও সেই খাবার খায়না যা অপছন্দের। আর ওর টেস্ট খুবই ভালো। সব অবস্থায় ও খাবারের টেস্ট ধরতে পারে। এখন তুমি হয়তো বলবে আমি সেটা কেন বলছি! তাহলে শুনো! তুমি খেয়াল করেছো কি না জানিনা আমি দেখেছি সে প্রতিটা আইটেম দুইবার করে নিয়েছে। পেটপুরে তৃপ্তি করে খেয়েছিল। মানে তার খুবই পছন্দ হয়েছে তোমার রান্না। তবে সে সেটা স্বীকার করবেনা। ছোট থেকেই সে ইগোইস্টিক। আর আরেকটা কথা মেহজা! হলুদের যে লেহেঙ্গা পড়েছিলে আর আজ যে গাউন আর কাল যে ড্রেস পড়বে এরমধ্যে একটিও রাদিফ দেয়নি তোমায়। জুয়েলারী সেট এবং দরকারী সামগ্রী থেকে শুরু করে সবটা ইরফান কিনেছিল। আর রাদিফকে মানা করেছে তোমাকে জানাতে। সেদিন ইরফান শপিং এ আমাকে নিয়েই গিয়েছিল। তার পছন্দ বরাবরই প্রশংসনীয়। তুমিও তার পছন্দের। একটা কথা কী জানো মেহজা? ইরফান যদি তোমাকে পছন্দ না করত তাহলে এতদিনে যে কোনো ভাবে তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যেত। সে কোনোভাবে তোমাকে তার জীবনের সাথে জঁড়াত না। আমার মনে হয় আসলে পছন্দ নয় ও তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে সেদিন আমি কি বলেছিলাম মনে আছে? ইরফানের বুক ফাটলেও মুখ ফুটেনা। নিজের অনুভূতি প্রকাশে সে বরারবরই ব্যার্থ। রাগ, জেদটাই বেশি। তাই তোমাকে নিজের মতো করে তার মনের কথা বুঝে নিতে হবে। তার মুখেই প্রকাশ করাতে হবে। আর একটি উপদেশ মাথায় রাখবে। সে রাগের বশে কখনো যদি কিছু বলে মাথায় নিও না। সে রাগের কারণে অনেক কিছুই বলে ফেলে যা আদৌ সে করবেনা।”

মেহজা হতবাক। ইমার প্রত্যেকটির কথার যুক্তিতে তারও এমনটি মনে হচ্ছে। ইশ! আগে কেন সে এতসব ভাবেনি! কেন একটু ঘাটিয়ে দেখেনি ইরফানের মনটা! বড্ড দেরি হয়ে গেছে। রাগ, অভিমানের কারণে ভালোবাসা টাই চাপা পড়ে গেছে। এখন সে সব সরিয়ে যা সত্য তা জানতে চায়। ইরফান তাকে ভালোবাসে কিনা সেটা জানতেই হবে। যেকোনো ভাবেই!

ইমা সবসময় বেস্ট! তার বোঝানোর ধরনটাই আলাদা। আরো আগেও সে ইঙ্গিত দিয়েছিল মেহজাই বুঝেনি। আসলে সে বোকা। তাও খুব বড় মাপের। মেহজা আনন্দিত হয়ে ইমার একটি হাত টেনে নিয়ে উল্টোপিঠে চুমু দিয়ে বলে,

“অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি।”

ইমা মৃদু হাসে আর মেহজা দ্রুত পায়ে ইরফানের রুমের দিকে পা বাঁড়ায়। মাঝপথে কী মনে করে থেমে যায়। লোকটি তাকে সাজা দিয়েছে কারণ সে জেলাস ফিল করেছে। আর জেলাসিটাকেই এখন কাজে লাগাতে হবে। উহু এত সহজে সেও ধরা দিবেনা। ফিরে যেতে নিলে আবার মনে পড়ে সে ওয়াদাবদ্ধ। তারপরেই মাথায় আসে সে তো নয়টায় ঠিকই এসেছে। ইরফানেরই তো খবর নেই। সো তার কোনো দোষ নেই। এখন সে মেকআপ করবে। মন মতো সাজবে। আহ্! আনন্দে মনটাই নাঁচছে।

বারোটা বেজে গেছে। ইরফান পার্কিং লোটে এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ায়। মেহজা ওয়াদাভঙ্গ করেছে। এখন অব্দি তার কোনো দেখা নেই। এতবড় বাটপারি মেহজা ছাড়া আর কেই বা করতে পারে। ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে আছে ইরফান। তখনিই পেছন থেকে কে দুইবার করে ভাইয়া ডাকল,

“ভাইয়া,,,, ভাইয়া!”

ইরফানের মনে হলো তাকেই কেউ ডাকছে। সে ভ্রু কুঁচকাতেই পেছন থেকে আবারও আওয়াজ এলো;

“ইয়াজিদ ভাইয়া?”

মেহজাকে ভাইয়া বলে ডাকতে দেখেই সে বিষম খায়। মেহজাও দৌঁড়ে এসে বলে,

“বিষম খাচ্ছেন কেন ভাইয়া? নিন পানি খান।”

“ওহ্ পানিই তো নেই। এখন কী খাবেন আপনি!”

ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“তোমাকে!”

পাশ থেকে তানজীব বলে,

“ইয়াজিদ ভাই! ওকে খাবেন মানে?”

তানজীবকে দেখে ইরফানের কান গরম হয়ে যায়। দুদিন আগেও তানজীব আর তার গলায় গলায় ভাব ছিল এখন সে খুব বিরক্ত হচ্ছে তানজীবের প্রতি। তার বউয়ের দিকে সে কোন সাহসে নজর দেয়! ইরফান গম্ভীর গলায় জবাব দেয়,

“ও পানি এনে দিবে সেটাই বলতে চাইছিলাম।”

“ওহ্! আমার গাড়িতে আছে পানি। এনে দিব?”

“না এখন আর লাগবেনা। তৃষ্ণা মিটে গেছে আমার।”

“আচ্ছা তাহলে আর কী করার! মেহজা লেটস্ গো!”

“লেটস্ গো মানে?”

“মানে হলো চল যাই। এটাও জানেন না ইয়াজিদ ভাইয়া! এমনিতে তো সারাক্ষণ ইংরেজীতে ফটর ফটর করেন।”

মেহজার করা অপমানটা খুব বেশিই গায়ে লাগল ইরফানের। চোখ বন্ধ করে রাগ সংবরণ করে সে তানজীবকে বলে,

“মেহজা আমার সাথেই যাবে তানজীব। আমাদের আগে থেকেই ঠিক করা আছে।”

“আগে থেকেই ঠিক করা? কোথায় মেহজাতো বলেনি একবারও!”

“সেটা ও কেন বলেনি তা আমি জানিনা।”

“মেহজা তাহলে ইয়াজিদ ভাইয়ের সাথেই যাচ্ছো!”

“জ্বি না! আমি আপনাদের কারো সাথেই যাচ্ছিনা। বিয়েটা আমার ভাইয়ের সেই হিসেবে আমি তার সাথে তার গাড়িতে যাব। বায়!”

মেহজা এক ছুটে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। বাহিরে এসে দাঁড়াতেই রাদিফ গাড়িতে উঠতে বলে। মেহজা তড়িৎ গতিতে উঠে বসলেই গাড়ি সাই সাই করে চলে যায়। আর ইরফান আর তানজীব অবাক নয়নে সেদিকে চেয়ে থাকে।

#চলবে।

(আমি আমার মতো করে লিখতে চাই। আশা করছি আমাকে আমার মতো করে আপনারা লিখতে দিবেন। গল্পের মধ্যকার বিরহে আপনারা যেভাবে উতলা হচ্ছেন তা ঠিক নয়। আপনারা অনেকেই গল্পের নামের স্বার্থকতা ধরতে পারেননি। অনেকে ভুল কথা কেউই ধরতে পারেন নি। গোধূলী আকাশ লাজুক লাজুক এর মানেটা আজকে বের করুন। কালকে আমিই জানাবো। তাছাড়া পুরো গল্পেই মানেটা বিরাজমান। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দিনে যেহেতু দিচ্ছি তাই রাতে পাবেন না। আর কেউ প্লিজ নেক্সট কমেন্টে লিখবেন না গল্প যেহেতু শেষ হয়নি আর আমিও যেহেতু চলবে লিখে রেখেছি এর মানে আপনারা না বললেও আমি নেক্সট দিব। আপনারা বরং গঠনমূলকন্তব্য করার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here