#গল্প
বৃষ্টি_ভেজা_অরণ্য
#পর্ব_৭
-শাতিল রাফিয়া
অরণ্যের কথা শুনে আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না! আমি বিস্ফারিত চোখে হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন! মনে হল কেউ আমার ওপরে বোমা মেরে দিয়েছে!
অরণ্য আমার এই অবস্থা হেসে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে – কি হল আপনার?
আমি কিছুক্ষন চেষ্টা করে বললাম – কে..ক..ক্কে নিশা?
অরণ্য আবার হাসতে হাসতে বলল- ওহ! আপনি তাহলে নিশাকে চেনেন না?
আমি মাথা নিচু করে কোনমতে বললাম- ন.. নো..না!
– তার মানে আমি কি বলছি আপনি বুঝতে পারছেন না?
– না! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি আসি!
আমি পারলে লজ্জায় পালিয়ে চলে আসি তার সামনে থেকে!
আমি নামার সময় অরণ্য হাসতে হাসতে বলে- আচ্ছা ঠিক আছে। আজ রাতে নিশা ফোন করলে বৃষ্টিলেখাকে বুঝিয়ে বলব!
আমি কোন মতে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা দিলাম! এরকম ভয়াবহ লজ্জা আমি জীবনে পাইনি! অরণ্য জানত বৃষ্টিলেখা নিশা সেজে ফোন দিচ্ছে! কি করে বুঝল সে? আর যখন বুঝতেই পেরেছে তাহলে এতদিন এই অভিনয়টা করার দরকার কি ছিল? আমার হঠাৎই খুব কান্না পেল! আমি বাসায় পৌঁছে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করলাম! এই অপমানটা আজ আমাকে না করলে কি হত না?
রাতে ভাবলাম অনেক হয়েছে এই ‘টেলিফোন টেলিফোন’ খেলা। আর না। আমি ওর নাম্বারটাই ব্লক করে দেব!
রাতে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছি। শত চেষ্টা করেও নাম্বারটা ব্লক করতে পারছি না। মন থেকে বাঁধা আসছে!
হঠাৎই ফোনটা বেজে ওঠে! আমি স্ক্রিনে তাকিয়ে চমকে উঠি! অরণ্য ফোন করেছে! একবার ইচ্ছা করল ধরব না। কিন্তু তার ফোনকে আমি উপেক্ষা করব? সেই মনের জোর কি আমার আছে?
– হ্যালো!
অরণ্য কৌতুক কণ্ঠে বলে- হ্যালো বৃষ্টিলেখা! ও স্যরি! নিশা! কেমন আছেন?
আমি কোন অবস্থাতেই তার এই কৌতুক মেনে নিতে পারছি না!
আমি কেঁদে দিয়ে বললাম- কেন আমার সাথে এরকম করলেন?
আমার কান্না শুনে অরণ্য হকচকিয়ে গেল!
সে হতবিহ্বল হয়ে বলে- ওমা! কাঁদছেন কেন আপনি? আমি কি কাঁদার মত কিছু বলেছি?
– বলেননি?
– আমি দুষ্টুমি করছিলাম বৃষ্টি! আপনার খারাপ লেগে থাকলে আই অ্যাম স্যরি! আমার এরকম কোন ইন্টেনশন ছিল না! এক্সট্রিমলি স্যরি। প্লিজ কান্না থামান!
বুঝতে পারলাম সে আসলেই দুষ্টুমি করছিল। আমার সাথে মজা নিয়ে অপমান করার জন্য বলেনি।
আমি কান্না থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি বুঝলেন কি করে?
– আমাকে কি আপনার বোকা মনে হয়? আমি কণ্ঠস্বর চিনব না?
– শুধু কন্ঠস্বরেই চিনে গেলেন?
– না আরো অনেক কিছু ছিল! যেমন ধরুন যেদিন বৃষ্টিলেখার জয়েনিং, সেদিন নিশারও জয়েনিং। আর নিশা আমার কাছে বারবার জানয়ে চেয়েছে ওইদিন আমার কেমন কাটল, নতুন এমপ্লয়িকে কেমন লাগল, সে কেমন এসব! আর এরপর নিশার বৃষ্টিলেখার ওপর মারাত্মক আগ্রহ ছিল! আবার আপনি মাঝেমধ্যে মনের ভুলে অফিসের কিছু কথা শেয়ার করে ফেলেছেন! সবকিছু মিলিয়ে বুঝে ফেলেছি!
– কবে থেকে বুঝলেন?
– আপনি জয়েন করার তিন-চারদিনের মধ্যেই বুঝে গিয়েছি।
– এতদিন বললেন না কেন?
অরণ্য হেসে বলে- আমি ব্যাপারটা বেশ এনজয় করছিলাম! আর আমি নিশার সাথে আসলেই অনেক কথা শেয়ার করতে পারতাম। যেটা আমি বৃষ্টিলেখার সাথে পারতাম না!
আমার ভেতরটা ওলট-পালট হয়ে গেল তার কথা শুনে!
জিজ্ঞেস করলাম- কেন?
– কারণ বৃষ্টিলেখার সাথে আমার অফিসেই দেখা হত! আর বস হয়ে আমি আপনার সাথে এসব বলতে পারি না!
– কিন্তু এখন? এখন তো আমি আর নিশার রোল প্লে করব না!
– এখন থেকে বৃষ্টিলেখার সাথেই শেয়ার করব! আমি অফিস থেকে নিজের পার্সোনাল লাইফ আলাদা রাখতে পারি!
আমার মনটা ভরে গেল!
আমি বললাম – স্যরি! এভাবে নিশা হয়ে..
অরণ্য কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে- প্লিজ স্যরি বলবেন না। আপনি নিশার মাধ্যমে আমাকে খুব ভাল একটা ফ্রেন্ড দিয়েছেন!
আমি জিজ্ঞেস করি- আর বৃষ্টিলেখার মাধ্যমে?
– বৃষ্টিলেখার মাধ্যমে অনেক ভাল একজন এমপ্লয়ি দিয়েছেন, যে কাজ করে খুব ভাল কিন্তু একটু থেকে একটু হলেই কেঁদেকেটে একাকার হয়ে যায়!
জিজ্ঞেস করলাম – কাকে বেশি ভাল লাগে?
অরণ্য হেসে বলে- আমার বৃষ্টিলেখাকেই বেশি ভাল লাগে। নিশা যতই ফ্রেন্ড হোক আর যতই যা শেয়ার করি তার সাথে! কারণ বৃষ্টিলেখাই অরণ্যের গহীনে ঢোকার জন্য নিশা সেজেছে! কি ঠিক বললাম?
আহা! আমি আর কোন কথাই বলতে পারছি না। আজ এতদিন পর সে ধরা দিয়েছে! এতদিন পর সে এই বৃষ্টিতে ভিজেছে!
আমি ধীরে ধীরে বললাম- রাখছি!
– কেন? নিশা তো কথা বলার জন্য উদগ্রীব থাকত! বৃষ্টিলেখা কি উদগ্রীব নয়?
আমি হেসে দিয়ে বললাম- একটা কথা কিন্তু ভুল বললেন! আমি অফিসে কান্না করি?
অরণ্য অবাক হয়ে বলে- করেন না আবার? সবার সামনে হয়তো করেন না। কিন্তু ওয়াশরুমে গিয়ে ঠিকই করে আসেন আর সেটা আপনার চোখ দেখলেই বোঝা যায়!
আমি আবার হেসে দিলাম!
অরণ্য বলে- আপনার হাসিটা খুব সুন্দর! তাই দয়া করে কথায় কথায় কাঁদবেন না। এটা আপনি জানেন না কিন্তু আপনাকে কারও সাথে কথা বলতে দেখলে আমি মাঝেমধ্যে আপনার হাসি দেখার জন্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে আপনাকে দেখি!
তার এই কথা শুনে আমি তো পুরা মাখনের মতো গলে গেলাম! তোমার জন্য আমি সারাজীবন হাসতে রাজি আছি অরণ্য!
অরণ্য হেসে বলল- আচ্ছা রাখছি। গুড নাইট!
– গুড নাইট। টেক কেয়ার!
ফোন রেখে আমার কি যে খুশি লাগছে আমি বলে বোঝাতে পারব না! ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে!’
নিশা আর দুলাভাই আমার আর অরণ্যের এই সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে খুবই অবাক হল!
নিশা বলে- তোদের লাভ স্টোরির ওপর তো গল্প লেখা যাবে রে! মুভি হওয়া উচিৎ!
– এই যাহ! ও আমাকে বলেনি এখনো যে আমাকে ভালবাসে!
– তুই কি গাধা? এটা কি তোর কানের মধ্যে ঢুকে বলতে হবে? ওর কথাবার্তায় বুঝতে পারছিস না?
দুলাভাই দেখলাম চিন্তিত মুখে বসে আছে।
– কি হয়েছে ভাইয়া তোমার?
দুলাভাই চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে- না ভাবছি! ছেলেটা বুঝতে পারলেও কিছুই বলল না তোকে!
নিশা জিজ্ঞেস করে – এতে এত চিন্তার কি আছে?
দুলাভাই উত্তর দিল না।
আমি পাত্তা দিলাম না। যা খুশি করুক! আমি তো আমার অরণ্যের গহীনে ঢুকে গিয়েছি!
মাঝখানের দুইটা দিন আমি যেন উড়ে উড়ে কাটালাম! শনিবার রাতে অরণ্যকে ফোন করলাম!
অরণ্য ফোন ধরেই বলে- এই যে ম্যাডাম! কালকে অনেক বড় ক্লায়েন্ট মিটিং। এখনো ঘুমাননি?
– আপনিও তো ঘুমাননি!
অরণ্য দুষ্টু হাসি হেসে বলে- আপনার ফোনের ওয়েট করছিলাম!
আমার কি যে খুশি হলো!
– তো আপনি কেন করলেন না?
– তার কারণ আমি একটু আগে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সও শেষ করেছি!
অরণ্য জোরে জোরে হেসে দিল!
আমি বললাম – বেস্ট অফ লাক!
– আপনাকেও। গুড নাইট বৃষ্টি!
– গুড নাইট।
মাঝখানে আমাকে প্রেজেন্টেশনের দায়িত্ব দেয়নি দেখে রাগ করে আমি নিজেই প্রেজেন্টেশনের খুঁটিনাটি সব জেনে রেখেছিলাম। সবকিছু খুব সুন্দর করে বুঝে রেখেছিলাম। আজকে সেই বিষয় গুলো আরেকবার দেখে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
অবশেষে সেই রবিবার এল যার জন্য গত দুই-তিন সপ্তাহ জুড়ে মহা হাঙ্গামা হয়েছে!
অফিসে অরণ্য আমাকে দেখে সুন্দর করে হেসে বলে- ফাইলগুলো আজ গুছিয়ে রাখবেন প্লিজ! উনারা দশটার দিকে আসবেন বলেছেন।
– ওকে।
আজ কোন ভুল হতে দিলাম না। ফাইলগুলো ভাল করে রেডি করলাম।
সোনিয়া আপু এসে উত্তেজিত হয়ে বলে- শুনেছ বৃষ্টি রাতুল হাসান আসছে!
– কে সে?
– মানে! তুমি রাতুল হাসানকে চেন না?
আমার মনে হল আমি কার মুখে যেন ‘রাতুল হাসান’ নামটা শুনেছি কিন্তু ঠিক মনে করতে পারলাম না!
– চেন না?
– না! কে উনি?
– আজব! আজকে যে ইউনিক গ্রুপ থেকে আসছে জানো তো?
– হ্যাঁ সেটা জানি!
– ওই গ্রুপের মালিকের ছেলে! সে খুবই স্বনামধন্য!
– তো স্বনামধন্য মানুষই আসবে নিশ্চয়ই! এতে এত আতঙ্কিত কেন আপনি?
– রাতুল হাসান অনেক ঘাঘু লোক! এত সহজে ডিল পাব বলে মনে হয় না!
– আরে পাব! হোপ ফর দ্যা বেস্ট!
রাতুল হাসান এবং তার দলবল এল! প্রথম দেখায় রাতুল হাসান মানুষটা একদমই সাধারণ! তাকে দেখে মোটেই ঘাঘু মনে হচ্ছে না! সোনিয়া আপু খামোখাই ভয় পাচ্ছে! সে বেশ সুন্দর করে অরণ্যসহ আর যে যে বড় অফিসার ছিল সবার সাথে কথা বলে।
কিন্তু প্রেজেন্টেশন শুরু হওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম সে আসলে কি জিনিস! প্রতিটা স্লাইডে সে আটকাচ্ছে! প্রশ্নটা যে প্রেজেন্টেশন শেষ হলে করতে হয় সেই নূন্যতম বোধটুকুও কি তার নেই নাকি? আমার মনে হল অরণ্যের হাতে দুইটা চুমু দিয়ে আসি যে আমাকে প্রেজেন্টেশন করতে দেয়নি! দিলে এতক্ষণে আমি অর্ধমৃত হয়ে যেতাম!
কিন্তু আমার কলিগ শিহাব তার প্রতিটা উত্তর খুব কনফিডেন্টের সাথে দিল।
প্রেজেন্টেশন শেষ হলে রাতুল বিশ্রী ভাবে হেসে বলে- আমি অনেক ঝামেলা করেছি জানি! কিন্তু আপনাদের ওপর আই অ্যাম রিয়্যালি হ্যাপি! আমার জাস্ট লাস্ট একটা কোয়েশ্চেন আছে। সেটার উত্তর আপনাদের স্যারেরা দিতে পারবেন না। যে কোন একজন এমপ্লয়ি দিতে পারবেন উনারা বাদে। এটার উত্তর ঠিক দিলে ডিল ফাইনাল!
অরণ্য জিজ্ঞেস করে- কেন আমরা দিতে পারব না?
খ্যাকখ্যাক করে হেসে রাতুল বলল- এমপ্লয়িরা দিতে পারলেই না বুঝব কাজ কেমন করেন উনারা।
মন চাইল রাতুলের মাথায় দড়াম করে দুইটা বাড়ি মেরে আসি! নিশ্চয়ই কোন ঝামেলার প্রশ্ন! আবার না করে দিয়েছে যে স্যারেরা উত্তর দিতে পারবে না! নাহ! মানুষটা আসলেই খারাপ! আমি অরণ্যের দিকে তাকালাম। তার চোখেমুখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখলাম। সে খুব রাগ করেছে, বিরক্ত হয়েছে রাতুলের ওপর বোঝা যাচ্ছে একই সাথে সে ডিল পাওয়া নিয়ে টেনশন করছে!
এরপর রাতুল হাসান তার শেষ প্রশ্নটি করল!
প্রশ্নটির উত্তর শিহাব দিতে পারল না। সে একটু বলে আটকে গেল। অন্য কেউ ট্রাই করছে না। সবাই ভাবছে। অরণ্যকে দেখলাম সে উত্তর দেওয়ার জন্য উশখুশ করছে। কিন্তু সে তো দিতে পারবে না। আমিও উত্তর ভাবা শুরু করলাম। আর ভাবা শুরু করতেই আমার মনে হল উত্তরটা আমি দিতে পারব। যেহেতু খুব ভাল করে ঘাটাঘাটি করেছিলাম প্রেজেন্টেশন নিয়ে তাই উত্তরটা মাথায় এল। আমি জানি না এটাই ঠিক উত্তর কি না! কিন্তু দিতে তো দোষ নেই!
সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম – আমি দিব উত্তরটা?
রাতুল আমাকে আগাগোড়া একবার দেখে বলে- দিন।
আমি বুঝিয়ে, গুছিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। রাতুলের চেহারা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই উত্তর ঠিক হচ্ছে না ভুল!
উত্তর দেয়ার পর আমি অনেক আশা নিয়ে রাতুলের দিকে তাকালাম।
সে হেসে বলে- আপনারা আসলেই ডিলটা পাওয়ার যোগ্য।
আমার দিকে তাকিয়ে সে বলে- আপনার উত্তর ঠিক আছে।
মিস্টার অরণ্য ডিল আপনাদের!
আজ লাঞ্চ টাইমে প্রচন্ডরকম হইচই হল!
সোনিয়া আপু অরণ্যকে বলে- স্যার এত বড় একটা ডিল পাওয়ার পর কিন্তু আমাদের সেলিব্রেট করা উচিৎ!
শিহাব বলে- স্যার তো এর আগেরবার ডিল পাওয়ার পর আমাদের চাইনিজ খাইয়েছেন। এবার কি খাওয়াবেন স্যার? থাই না ইটালিয়ান না ইন্ডিয়ান?
অরণ্য হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে- বৃষ্টিলেখার উত্তরের জন্য আমরা ডিলটা পেয়েছি। সাথে অবশ্যই আপনাদের কন্ট্রিবিউশান আছে।
– জ্বি স্যার অবশ্যই।
আমি লজ্জা পেলাম! সে এভাবে আমাকে ওপরে তুলে দিল!
অরণ্য এবার আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে – তাহলে বৃষ্টি আপনি বলুন আপনি কি খেতে চান? সেটাই খাব!
আমি কোনকিছু চিন্তা না করে বললাম- আমি পুরো বাঙালি খাওয়া খেতে চাই।
আরেকজন বলে- এই আইডিয়াটা কিন্তু ভাল! তাহলে স্যার কবে আর কোন রেস্টুরেন্টে?
– এতদিন টানা ভাল কাজ করে ডিল পাওয়ার জন্য ইমতিয়াজ স্যার আগামীকাল আমাদের ডিপার্টমেন্ট ছুটি দিয়েছেন। তাই আগামীকাল আমার বাসায় আপনাদের দাওয়াত!
রাতে অরণ্য ফোন করে।
– হ্যালো!
– খুব খুশি তাই না?
– খুশি হব না? আপনি যে এত কাজের সেটাই জানতাম না!
– এটা কিন্তু পরোক্ষভাবে আপনার জন্যই হয়েছে!
অরণ্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে – আমার জন্য?
আমি হেসে বলি- হ্যাঁ আপনার ওপর রাগ করে প্রেজেন্টেশন নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেছিলাম!
– তো আমার কি অপরাধ ছিল ম্যাডাম?
– ওই যে আমাকে প্রেজেন্টেশন দিতে দেননি!
অরণ্য হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে – সিরিয়াসলি? আপনি এজন্য রাগ করেছিলেন! আপনি পারেনও! আচ্ছা ঠিকানাটা বুঝেছেন তো আমার বাসার? নাকি আমি এসে নিয়ে যাব?
– না না বুঝেছি! আচ্ছা বাই দ্য ওয়ে, দাওয়াতটা কখন? রাতে না দুপুরে?
অরণ্য বলে- বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত! আর আপনি চাইলে সকালেই চলে আসতে পারেন!
আমি বিড়বিড় করে বললাম – আমার তো মন চায় এখনই তোমার কাছে চলে যাই!
অরণ্য হেসে জিজ্ঞেস করে – কি বললেন আপনি?
আমি তাড়াতাড়ি উত্তর দিলাম- না তো! কিছু না! কেন আপনি কি শুনেছেন?
অরণ্য হাসল! কিছু বলল না!
আমি দুপুরে গোসল করে আগেই খেয়ে নিলাম। কমলা আর গোলাপি কম্বিনেশনের একটা হাফ সিল্ক শাড়ি পরলাম। কাজল, আইলাইনার, লিপস্টিক, টিপ আরও যা যা দরকার সব দিয়ে সুন্দর করে সাজলাম! ম্যাচিং চুড়ি পরলাম। চুলগুলো ভেজা তাই বিন্যস্ত না করেই ছেড়ে রাখলাম! আর আমার কোমর ছাড়ানো লম্বা চুলগুলো আমার এলোমেলো রাখতেই ভাল লাগে! আমি আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে চমকে উঠলাম!
মা কে আগেই বলে রেখেছিলাম। যাওয়ার সময় মা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন। মায়ের দৃষ্টিতে আমিই চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি নিশ্চিত বাসার সবাই ধরে নিয়েছে আমার সম্পর্ক আছে। কবে না জানি ওই ছেলেদের চলে আসতে বলে।
পুরো বিল্ডিংটা অরণ্যদের। তারা থাকে তিনতলায়। কি নিয়ে আসব চিন্তা করে করে অরণ্যের বোনের ছেলের জন্য চকলেট কিনলাম, দুইটা আইসক্রিম কেক আর দুইটা বড় কোক কিনলাম। আর একটা বড় ফুলের তোড়া কিনলাম। সবকিছু নিয়ে লিফটে উঠতে একটু ঝামেলা হল! অরণ্য বলেছিল পৌঁছে ওকে ফোন দিতে। আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম বলে ফোন দিলাম না।
বেল দিলে অরণ্য নিজেই দরজা খোলে।
সে বলে- মাত্র ফোন হাতে নিয়েছি কল করব বলে!
সে আমাকে ফোনটা দেখাল। এতক্ষণ আমার মুখের সামনে ফুলের তোড়াটা ছিল বলে সে আমাকে ভাল করে দেখতে পায়নি! আমি তাকে তোড়াটা দিলে সে নিয়ে ‘থ্যাঙ্কিউ’ বলে আমার দিকে তাকাল। সে আমাকে দেখে চমকে ওঠে! সে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইল! আমি তার চোখে মুগ্ধতা দেখতে পেলাম!
আমি নিজেই এবার লজ্জা পেলাম!
পেছন থেকে একটা নারীকণ্ঠ শুনতে পেলাম – কে এসেছে অরণ্য?
শুনতে শুনতেই একজনকে দেখলাম। আমার বড়আপার বয়সীই হবেন।
তার ডাকে অরণ্যের চমক ভাঙে।
সে বলে- এই যে বৃষ্টিলেখা এসে গেছে!
অরণ্যের আপু বলে- আর তুই এভাবে দাঁড়া করিয়ে রেখেছিস দরজায়! মেয়েটার হাতে কতগুলো জিনিস দেখতো!
অরণ্যকে বিড়বিড় করতে শুনলাম – ওনার ওপর থেকেই তো চোখ সরাতে পারছি না!
আর আজ আমি জিজ্ঞেস করলাম- কি বললেন আপনি?
– ক্ক..কই! কিছু না!
অরণ্যের বোন বলে- ভেতরে এসো তো ভাই! অরণ্য এরকমই! তোমার নাম অনেক শুনেছি! তুমি খুব ভাল কাজ কর!
ভেতরে ঢুকলে উনি বললেন – অরণ্যকে দিয়ে কিছু হবে না। এতক্ষণেও আমাদের পরিচয় করায়নি! আমিই করে নেই। আমার নাম অনুপমা। আমি ওর বড়বোন। আর তুমি বৃষ্টিলেখা, ওর কলিগ!
‘কলিগ’ কথাটা বলার সময় অনুপমা আপু মুখ টিপে হাসলেন!
অরণ্য এতক্ষণে সব জিনিসপত্র ভেতরে ঢুকিয়ে বলে- দাওয়াতটা আমি দিয়েছি। এতকিছু আনার কি দরকার ছিল?
আমি হেসে বললাম – আপনার ইচ্ছা না করলে আপনি খাবেন না। আপু, বাবু আর আন্টি খাবে! ওনারা কোথায়?
অনুপমা আপু বলে- আছে। এসো তুমি!
উনি ভেতরে চলে গেলেন। আমিও উনার পেছন পেছন পা বাড়ালাম।
কিন্তু হঠাৎই অরণ্য আমার হাত চেপে ধরে! আমি কারেন্ট শক খাওয়ার মত চমকে উঠলাম! না আজ শুধু কোন স্পর্শ নয়, সে সত্যি সত্যি আমার হাত ধরেছে!
আমি তার দিকে তাকাতে সে আমার কাছে চলে আসে! আমার হার্টবিট বেড়ে গেল! সে তার মুখ বাড়িয়ে দেয়! সে কি করতে চাইছে? অরণ্য তার মুখ বাড়িয়ে আমার কানের পাশে তার মুখ নিয়ে বলে- বিউটিফুল! তোমাকে আজকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
কথাটা শুনে আমার হার্ট বিট করাই বন্ধ করে দিল! সে আমাকে প্রথমবার ‘তুমি’ করে বলল!
অনুপমা আপু ডাক দিলেন- কোথায় গেলে দুইজন?
অরণ্য বলল- চল ডাকছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- বাকি কেউ আসেনি? আমি এত আগে এসেছি?
অরণ্য মুচকি হেসে বলে- বাকিদের দাওয়াত তো রাতে!
আমি হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- তাহলে আমি? আ..আমার দাওয়াত এত আগে কেন?
অরণ্য হেসে বলে- তোমার আজকে সারাদিনই দাওয়াত!
অরণ্যের প্রতিটি কথায় আমি আজকে অবাক হচ্ছি! তার এইসব কথাবার্তা কোথায় লুকানো ছিল এতদিন?
ভেতরে গিয়ে অরণ্যের মা কে দেখলাম! অতি শান্ত এবং সৌম্য চেহারার একজন!
আমি সালাম দিতে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন – ওয়ালাইকুম সালাম মা! ভাল আছ? বাহ! ভারি মিষ্টি দেখতে তুমি!
– আমি ভাল আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ! মা-বাবা ভাল আছেন?
– জ্বি!
অরণ্যের মা তার দিকে তাকিয়ে রাগের ভঙ্গিতে বলে- তোকে সরিষার তেল এনে দিতে বলেছিলাম! কই সেটা? সেটা না আনলে রান্নাটা আমি কি দিয়ে করব?
আমি খুব অবাক হলাম! আমার ধারণা ছিল অরণ্য এরকম বাজার করা টাইপ নয়! কিন্তু সে তো দেখি একেবারে আমার ভাই, দুলাভাইয়ের মতই সাধারণ!
অরণ্য বলে- আচ্ছা তোমরা দুইজন আমাকে বৃষ্টির সামনে সমানে বকা দিয়ে চলেছ ব্যাপারটা কি?
অনুপমা আপু হেসে বলল – ওর সামনেই তো দিব!
অরণ্যকে দেখলাম চোখ পাকিয়ে অনুপমা আপুর দিকে তাকাল! আমি তাদের কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছি না!
অনুপমা আপুর পাঁচ বছরের ছেলে ভেতরে খেলছিল।
কোথা থেকে ছুটে এসে আমাকে বলে- তুমিই তাহলে মামী?
– হ্যাঁ??!
আমি পুরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম!
অনুপমা আপু ধমক দিল- এই পুণ্য! এত কথা বলিস!
অরণ্যও থতমত খেয়ে বলে- মামা, তোমাকে না বলেছি সবাইকে মাম্মি ডাকবে না?
আমি দ্বিধা নিয়ে বললাম- কিন্তু ও তো..
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে অরণ্য বলে- মাম্মি বলেছে! সবাইকে বলে!
– মামা, চল আমরা তেল নিয়ে আসি! বৃষ্টি আপনি থাকুন। আমি আসছি!
সে পুণ্যকে কোলে নিয়ে কোনমতে আমার সামনে থেকে পালাল!
সে আসতে আসতে অনুপমা আপু আমাকে তাদের বাসা ঘুরিয়ে দেখাল। তাদের বাসাটা অনেক সুন্দর! সবচেয়ে ভাল লাগল অরণ্যের রুমের বারান্দাটা! এত খোলামেলা আর বাতাস আছে প্রচুর। সেখানে সারি সারি ফুলের টব! অনুপমা আপু আর অরণ্যের মা অনেক কথা বললেন। অরণ্যের বাবা যখন মারা যায় তখন অনুপমা আপুর দশ বছর আর অরণ্যের মাত্র পাঁচ! আন্টি কত কষ্ট করে আপু আর অরণ্যকে মানুষ করেছেন সেই স্ট্রাগলের গল্প করলেন। আপু এখন কাছাকাছিই বাসা নিয়েছেন যাতে যখন তখন মায়ের কাছে আসতে পারেন। আপু কলেজ টিচার।
আমার আপার সাথে আপুর একটা মিল লক্ষ করলাম। তা হল- দুইজনেরই মনটা অনেক বড়!
একটুপর অরণ্য আসে।
আন্টি বললেন- রান্না না হলে আমি আর জানি না। তুই আনতে দেরি করেছিস!
অরণ্য বলে- এক কাজ কর! বৃষ্টিকে বিরিয়ানি রাঁধতে দাও। ওনার রান্না বিরিয়ানি খেলে মুখে লেগে থাকবে স্বাদ!
আমি হাসলাম!
– একদিন তাহলে খাওয়াবে বৃষ্টি! -আপু বলল।
অরণ্য জিজ্ঞেস করে – ছাদে যাবে?
– ঠিক আছে।
পুণ্যও যাওয়ার জন্য বায়না করে।
– হ্যাঁ চল পুণ্য।
আপু বলে- পুণ্য আয় তো আমরা কার্টুন দেখি। মামা এখুনি এসে পড়বে।
আমি অরণ্যের সাথে ছাদে গেলাম। ছাদটাও খুব সুন্দর। অরণ্য আমার পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। ইশশ! আমার যে কি ভাল লাগছে! ইচ্ছা করছে ওর হাতটা ধরে হাঁটি!
ছাদে আসার আগে চুলগুলো খোঁপা করে এসেছিলাম। অরণ্য হঠাৎই হাত দিয়ে খোঁপার কাঁটা খুলে দিল! চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পরে! অরণ্য মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে! আমি লজ্জা পেয়ে একটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে শাড়ির আঁচলে পা বাঁধিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। অরণ্য পেছন থেকে এসে ধরল!
-সাবধানে!
এরপর সে আমার হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে- হাত ধরেই হাঁটি! আবার কখন পড়ে যাও!
আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে আচমকাই চোখ নামিয়ে নিলাম! তার দৃষ্টি আমার হৃদয়ে আঘাত করছে!
হাঁটতে হাঁটতে অরণ্য বলে- লজ্জা পেলে তোমাকে আরও সুন্দর লাগে!
আমি আরও লজ্জা পেলাম!
কথা ঘোরানোর জন্য বললাম – এই যে আমাকে যে এখন ‘তুমি’ করে বলছেন এতে কোন দোষ হচ্ছে না? আর আমি স্যার না ডাকলেই দোষ!
অরণ্য হেসে জবাব দেয় – আমি কি এখন অফিস করছি? আর তোমাকে এখন অরণ্য ডাকতে কে নিষেধ করেছে? এখন অরণ্য ডাক, জঙ্গল ডাক, বন ডাক, যা ইচ্ছা ডাক!
আমি হেসে ফেললাম!
আমি আর অরণ্য বসলাম। আকাশে মেঘ করেছে। কাল হয়ে আসছে!
আমি বললাম – চলুন ভেতরে যাই। বৃষ্টি আসবে!
– বৃষ্টি তো এসেছেই। আমার পাশে বসে আছে!
সন্ধ্যায় সত্যি সত্যি বিজলি চমকাতে লাগল! গুড়ুম গুড়ুম শুরু হল!
আমি জিজ্ঞেস করলাম- এই বৃষ্টিতে কিভাবে আসবে সবাই?
অরণ্য চিন্তিত মুখে বলে- দাঁড়াও শিহাবকে জিজ্ঞেস করি রওনা দিয়েছে নাকি।
– এই! বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। এর মধ্যে ফোন করবেন?
– আচ্ছা মেসেজ দিচ্ছি!
অরণ্য তার ফোন নিতে রুমে গেল। আমি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
অরণ্য বলল- ভেতরে এসো।
আমি ভেতরে ঢুকে অরণ্যের বারান্দার কাছে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে! বৃষ্টির ছিটা আমার গায়ে এসে পড়ছে। ঝড়ের বাতাসে আমার চুল মাতাল হয়ে উড়ছে। হঠাৎই প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ে কারেন্ট চলে গেল। আর একইসাথে ঝড়ো হাওয়ায় অরণ্যের রুমের দরজাটা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল!
আমি চমকে উঠলাম!
মুখ দিয়ে ‘আহ’ করে শব্দ বেরিয়ে এল।
অরণ্য টর্চ জ্বালিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলে- ভয় পেয়েছ?
– হালকা পেয়েছি।
– এখুনি জেনারেটর চালু হয়ে যাবে।
মাতাল হাওয়ায় আমার চুলগুলো উড়ে গিয়ে অরণ্যের মুখের ওপর পড়ছে!
সে হেসে আমার মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিতে লাগল! আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! সে আমার মুখ স্পর্শ করছে! টর্চটা সে একটু আগেই বন্ধ করে দিয়েছিল। ঝড়ো বাতাস আসছে, আমি আর অরণ্য সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছি! হঠাৎই বিদ্যুৎ চমকাল! আমি এই আলোতে কিছুক্ষণের জন্য তার চোখে মাদকতা দেখলাম! সে হঠাৎই আরও এগিয়ে এসে দুইহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আমি তার দুই কাঁধে হাত দিলাম! সে দুইহাত দিয়ে আমার গাল ধরে। সে এরপর তার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট স্পর্শ করে! আমি কেঁপে উঠলাম! আমি অসাড় হয়ে গিয়েছি। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! না তাকে বাঁধা দেয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। আমি দেব না বাঁধা। আমিও আমার হাত দিয়ে তার গাল চেপে ধরলাম! এটা যে অনৈতিক একটা কাজ হচ্ছে সেটা আমার মাথায় আসছে। কিন্তু আমি এটাকে হতে দিচ্ছি। আমি এটা বন্ধ করব না! আমার অরণ্য!
হঠাৎই জেনারেটর চালু হল! উজ্জ্বল আলোয় চারদিক ধাঁধিয়ে যায়!
অরণ্য আমাকে ছেড়ে দিল!
তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুবই অপ্রস্তুত হয়ে গেল!
আমার দিকে তাকিয়ে বিব্রত হয়ে বলে- স্য.. মানে আমি.. ওই মুহূর্তে.. তুমি..আসলে..
আমি লজ্জা পেয়ে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম!
ধীরে ধীরে সবাই আসে। সবাই বলতে অরণ্যের টিমে আমরা চৌদ্দ-পনের জন আর অর্জুন স্যার এবং তার স্ত্রী।
আমি বাংলা খাবার খেতে চেয়েছিলাম। খাওয়ারের মেন্যু দেখে চোখ কপালে উঠে গেল!
সাদা ভাত, আলু ভর্তা, বেগুন ভাজি, পটল ভাজি, ডাল ভর্তা, পাতলা ডাল, ভুনা ডাল, মুড়িঘন্ট, দুই রকমের শুঁটকি, সরিষা ইলিশ, কইমাছ ভাজি, টমেটো দিয়ে ট্যাংরা মাছের ঝোল, মুরগির মাংস, গরুর মাংসের ভুনা, খাসির রেজালা!
আমি হা করে বললাম- আন্টি আপনি এত কষ্ট করবেন জানলে আমি কখনোই বাংলা খাবার খেতে চাইতাম না!
আন্টি বললেন – আরে! বোকা মেয়ে! আমার রাঁধতে ভাল লাগে! সত্যি! রান্না করা আমার হবি!
প্রতিটি আইটেম অসাধারণ হয়েছে। আমিসহ সবাই প্রশংসা করল!
অরণ্য আমাকে নামিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু অর্জুন স্যার ওদিক দিয়েই যাবে। তাই উনি আমাকে নামিয়ে দিবে বলল।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বাসায় যাওয়ার সময় মনে মনে ভাবছি অরণ্যের বাসায় এবার পার্মানেন্টলি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে!
[চলবে]