গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ১৬
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া

রুহানঃ দেখ না সাহেল,,,রুহি না কেমন যেন করছে,,, আমার সাথে কথাই বলছে না,,,ওকে কত ডাকলাম কিন্তু কোনো জবাব দেয় নি রুহি আমাকে,,,,ও কি আমার সাথে রাগ করেছে সাহেল,,,,[ কান্না করতে করতে ]

সাহেলঃ রুহান,,শান্ত হো,,,ওর কিছু হবে না,,,ও তোর সাথে কথা বলবে,,,,একটু অপেক্ষা কর,,,

রুহানঃ না ও বলবে না আমার সাথে কথা,,,আমার জন্যই তো ওর এ অবস্থা তাই না,,,,আমি যদি জিদ না করতাম,,, তাহলে ও আজকে আমার সাথে বাইরে যেত না,,,আর এ এক্সিডেন্টও হতো না,,,তাই না,,,,

সাহেলঃ এখানে তোর কোনো দোষ নেই রুহান,,,যা হওয়ার ছিল তাই-ই হয়েছে,,,দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,

রুহানঃ না কিছু ঠিক হবে না,,,, ও আমাকে মাফ করবে না,,,, আমার জন্য ওর এ অবস্থা,, ও আমার সাথে রাগ করেছে সাহেল,,,ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে আমার,,,প্লিজ সাহেল আমাকে রুহির কাছে নিয়ে যা,,আমি ওর সাথে একটু কথা বলব,,,প্লিজ নিয়ে যা আমাকে রুহির কাছে,,,,

সাহেলঃ পাগল হয়ে গেছিস,,,এখন কিভাবে তোকে রুহির কাছে নিয়ে যাবো,,,,ওর অপেরেশন হচ্ছে রুহান,,,,

রুহানঃ না আমি রুহির কাছে যাবো,,,প্লিজ নিয়ে যা আমাকে ওর কাছে,,, আমার না ওকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হচ্ছে,,,,মনে হচ্ছে ও চলে যাবে আমাকে রেখে,,,,আমি ওর হাতটা ধরব একটু,,,, প্লিজ সাহেল নিয়ে যা না ওর কাছে আমাকে,,,[ সাহেলের হাত শক্ত করে ধরে ]

সাহেল বেশ বুঝতে পারছে রুহান এখন নিজের মধ্যে নেই,,,,এখন কিছু বললেও রুহান তা বুঝার চেষ্টা করবে না,,,, তাছাড়া সাহেল রুহানের জেদ সম্পর্কে জানে,,,তাই সাহেল রুহানকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করে,,,কারন সময় যত যাচ্ছে রুহানের পাগলামিও আর বেশি বাড়ছে,,,তাই উপায় না পেয়ে সাহেল রুহানকে ইঞ্জেকশন দেয়,,,,

.
.
.
রুহান যেভাবে পারে সেভাবে রুহিকে হাসপাতাকে নিয়ে যায়,,,,হাসপাতালে রুহিকে নিয়ে যেতেই ডাক্তাররা রুহিকে অপেরেশন থিয়েটরে নিয়ে যায়,,,রুহান কি করবে বুঝতে পারছে না,,,, চোখ মুখ লালা হয়ে আছে তার,,,,অসস্ত্বি হচ্ছে খুব রুহানের,,,,,,কেমন যেন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে রুহানের,,,উপায় না পেয়ে সে সাহেলকে ফোন দেয়,,,আর হাসপাতালে আসতে বলে,,,,

কিছুক্ষনের মধ্যেই সাহেল সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হয়,,,,আর রুহানকে খুঁজতে থাকে,,,খুঁজতে খুঁজতে এক সময় সাহেল রুহানকে হাসপাতালের ৩য় তালার পায়,,,,রুহান গুটিসুটি মেরে এক কোণে বসে আছে আর নিজের মাথার চুল টানছে,,,সাহেল রুহানের কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখতেই রুহান তাকে জড়িয়ে ধরে,,, আর এসব কথা বলে,,,,

.
.
.
.

আসতে আসতে চোখ মেলে তাকায় রুহি,,,চোখ খুলতেই রুহি প্রথমে রুহানের চেহারা দেখতে পায়,,,কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে রুহানের মুখটা,,,ক্লান্তির ছাপও স্পষ্ট,,,, চোখ ভীষণ লালা হয়ে আছে তার সাথে অনেকটা ফুলেও গেছে,,,,রুহির হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে রুহান,,,,যেন ছেড়ে দিলেই রুহি তাকে রেখে চলে যাবে,,,,

রুহিকে চোখ খুলতে দেখতেই রুহানে ফ্যাকাশে মুখ মুহূর্তেই উজ্জল হয়ে যায়,,,রুহির সারা মুখে চুমু দিয়ে সে বলে,,,,

রুহানঃ রুহি কেমন লাগছে এখন তোমার,,,কোনো কি কষ্ট হচ্ছে,,, যদি বলো ডাক্তার কে ডাকব,,,,

বলেই রুহান ডাক্তার ডাকতে যাবে তখন রুহি রুহানের ১ আঙ্গুল ধরে ফেলে,,,আর মুখ থেকে মাক্স খুলে রুহানকে কিছু বলার চেষ্টা করে,,,তা দেখে রুহান নিজের মুখ রুহির মুখের একদম কাছে নিয়ে যায়,,,,রুহি আসতে আসতে রুহানের কানে বলে,,,

রুহিঃ কোথাও জাবেন না আপনি,,,আমার সাথে একটু থাকেন প্লিজ,,,,

রুহির কথা শুনে রুহানের মুখে আপনা আপনি হাসি চলে আসে,,,, রুহির কপালে ভালোবাসার একটা স্পর্শ দিয়ে রুহান বলে,,,,

রুহানঃ সারা জীবনের জন্য থাকবো তোমার সাথে,,, থাকবে আমার সাথে রুহি,,,,

রুহি কিছু বলে না,,, নিজের চোখ আবার বন্ধ করে ফেলে,,,সাথে রুহানের আঙ্গুলও খুব শক্ত করে ধরে রাখে সে,,,,

প্রায় ২ দিন পর রুহির জ্ঞান ফিরে,,,এ ২দিন রুহিসহ রুহানও অজ্ঞান ছিল,,,ঠিক অজ্ঞান ছিল না,,, রুহানকে অজ্ঞান করা হয়েছে,,,,রুহির অপেরেশন সাক্সেস ফুল হলেও রুহি কোমায় চলে যায়,,,,ডাক্তারদের মতে রুহির যদি ২ বা ৩ দিন পর জ্ঞান না ফিরে,,,তাহলে রুহি জীবনের জন্য কোমায় চলে যাবে,,,এ কথা কিভাবে যেন রুহান জেনে ফেলে,,,,পাগলের মতো আচরণ করা শুরু করে রুহান,,,,রুহির শরীরে লেগে থাকা সব যন্ত্রপাতি খুলে ফেলে বাসায় নিয়ে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল সে,,,তাই বাধ্য হয়ে রুহানকে অজ্ঞান করা হয়,,,,কিন্তু লাস্টবার যখন রুহানের জ্ঞান ফিরে,,, তখন সে খুব কান্না করে সাহেল আর ডাক্তারের কাছে,, যেন তাকে রুহির কাছে একটুর জন্য হলেও নিয়ে যাওয়া হয়,,,, রুহানের এমন আচরণে সাহেল আর ডাক্তারের অনেক মায়া হয়,,,,তাই তারা রুহানকে রুহির কাছে যাওয়ার পারমিশন দেয়,,,রুহানকে রুহির কাছে নিতেই রুহান রুহিকে জড়িয়ে ধরে,,,কিছুক্ষন ওভাবে থেকে রুহান রুহির হাত খুব শক্ত করে ধরে,,,, আর রুহিকে খুব গভীর ভাবে দেখতে শুরু করে,,, কত কষ্টের পর রুহান রুহিকে দেখে পেয়েছে,,,,মনটা একটু হলেও শান্ত হয়েছে তার,,,,রুহান রুহির হাত ধরে রুহিকে পর্যবেক্ষন করছিল আর তখনই রুহি জ্ঞান ফিরে,,,,

.
.
.

আজ ৩দিন রুহি হাসপাতালে,,,তাকে আরও ৩ -৪ দিন থাকতে হবে এখানে,,,,কারন রুহি এখনও অতটা সুস্থ নয়,,,রুহি অসুস্থ হলেও রুহানের সাথে তার রোজ ঝগড়া হয়,,,,সামান্য থেকে সামান্য কথা নিয়েই তাদের খুনশুটি শুরু হয়ে যায়,,,যদিও রুহান ইচ্ছা করেই রুহিকে রাগায়,,,তার কেন যেন রুহিকে রাগাতে অনেক ভালো লাগে,,,রুহির রেগে থাকা চেহারা রুহানের অনেক ভালো লাগে,,, তাই সে সদা রুহিকে রাগানোর জন্য প্রস্তুত থাকে,,,,এ-ই তো কালকে রুহান রুহির জন্য চুড়ি আনে,, যা দেখে রুহি খুব খুশি হয়,,,কিন্তু রুহান তো রুহানই,,,রুহির হাত থেকে এক ঝটকায় চুড়ি গুলো নিয়ে বলে,,,,

রুহানঃ দেখো তো রুহি,,,চুড়িগুলো আমার এক্স জিএফকে দিলে ভালো হবে না,,,,[ মুচকি হেসে ]

রুহিঃ কি,,,এটা আপনি আমার জন্য আনেন নি,,,,

রুহানঃ মাথা খারাপ,,,তোমার মতো শাকচুন্নির জন্য কে আনবে,,,

রুহিঃ অসহ্য,,ইতর,,,সয়তান,,আমার কাছে আসবেন না আপনি,,,আপনি একদমই ভালো না,,,,যান এখান থেকে,,,

রুহানঃ তোমার যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তুমি যাও,,, আমাকে কেন বলছো,,,??ও,😁😁আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,,,তুমি তো এখন রুহি না,,,,😁😁

রুহিঃ আমি রুহি না মানে,,,??😠😠

রুহানঃ মানে তুমি এখন রুহি থেকে লেংড়া রুহি হয়ে গেছো,,,,😁😁 হাত পা সব ভাংগা,,,,

রুহিঃ তাই নাকি,,,?? আমার হাত পা ভেংগে গেছে দেখি আপনার এত আনন্দ,,,,দেইখেন,,,আপনার বউ লেংড়া হবে,,,,😠😠

রুহানঃ দেখা যাবে,,,

রুহিঃ হুম দেখা যাবে,,,[ ভেংচি দিয়ে ]

এভাবেই কাটতে থাকে তাদের দিন,,,হঠাৎ একদিন রুহানের কি হয়,,,সে কাজী নিয়ে হাসপাতালে চলে আসে রুহিকে বিয়ে করবে বলে,,,,তার ভাস্য মতে,,, তার মনে হয় রুহি তাকে ছেড়ে চলে যাবে,,,তাই রুহান আগেই রুহিকে নিজের করে নিতে চায়,,যাতে সে রুহান থেকে দূরে না চলে যায়,,,,,

রুহিকে রোদের মা খাওয়াচ্ছিল,,,হঠাৎ ই রুহান কিছু লোককে নিয়ে কেবিনে ঢুকে পরে,,,কথা নাই কোয়া নাই বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয় এক লোক,,,,এসব দেখে সবাই সহ রুহিও হাবলার মতো রুহানের দিকে তাকিয়ে থাকে,,,,,,
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here