গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_২০
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

সায়শীর অবস্হা স্হিতিশীল হতেই পৃথিশাকে বাড়ি চলে যেতে বলল ফারুকী খালা।পৃথিশা প্রথমে না বললেও পরে ভেবে দেখলো না গেলে ঝামেলা হবে।যতই হোক সে এখন আর নিজের বাড়িতে নেই। ফারুকী খালার কথায় সম্মতি জানিয়ে পৃথিশা মারুফকে খুঁজতে গেলো।
হাসপাতালের এক কোণায় মারুফকে চোরের মতো উঁকিঝুকি মারতে দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পৃথিশা।গিয়ে দেখে মারুফ ডান হাতটা ঝাঁকাচ্ছে,আর তা থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। চোখ-মুখ কুঁচকে আছে তার। ডান হাতের প্রথম আঙুলটা অন্য হাত দিয়ে চেপে রেখেছে।কৌতুহলি হয়ে পৃথিশা মারুফের দিকে এগিয়ে যায়।পৃথিশাকে দেখা মাত্রই মারুফ চমকে উঠে।হাত দুটো পিছনে নিয়ে রাখার আগেই পৃথিশা তার হাত ধরে সামনে আনে। মারুফের হাতের আঙুল দেখে চমকে উঠে।হাতের আঙুলে নখ নেই,রক্তে মাখামাখি।হতভম্ব দৃষ্টিতে একবার মারুফের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে পৃথিশা।অসহায় দৃষ্টিতে একবার পৃথিশার দিকে চেয়ে বাম হাত দিয়ে তাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।পৃথিশার মাথায় হাত বুলিয়ে মারুফ কান্না থামানোর চেষ্টা করে চলছে।পৃথিশা কান্না থামায় না।
মারুফের হাত টেনে ধরে তাকে ডাক্তারের কেবিনে নিয়ে যায়। নার্স মারুফের হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। মারুফ ব্যাথায় মুখ শক্ত করে আছে।পৃথিশা একটু দূরে দাঁড়িয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলেই নার্স পৃথিশাকে প্রেসক্রিপশনে ডাক্তারের বলা কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে চলে যায়।মারুফের হাত শক্ত করে ধরে কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকে পৃথিশা। হসপিটালের নিচে থাকা ফার্মেসীতে মারুফ ঔষুধ কিনতে যায় আর পৃথিশা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে।

রাত গভীর হতে চলছে।পৃথিশার হাতে থাকা হাত ঘড়িটা শব্দ করে জানান দেয় রাত দুইটা বাজতে চলেছে।ঠান্ডা চুপচাপ পরিবেশ।রাস্তার এক পাশে থাকা কিছু বখাটে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পৃথিশার দিকে।তারা পৃথিশার পিছনের দিকে থাকায় পৃথিশা তাদের এখনো দেখেনি।হুট করে কারো শিষ বাজানোর শব্দ পেয়ে পৃথিশা ঘুরে তাকায়।ছেলেগুলোকে হেলেদুলে নিজের কাছে আসতে দেখে মাথায় গরম হয়ে যায়।কথা না বলে ফার্মেসীর দিকে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরে।
পিছন থেকে একটা ছেলে জোড়ে বলে উঠে, “আমাদেরও সাথে নাও।আমরা সঙ্গী হই তোমার!”
অন্য একটা ছেলে হেলেদুলে এগিয়ে এসে পৃথিশার হাত ধরতে নিলেই পৃথিশার রাগ উঠে যায়।নিজের জুতা খুলে ঢিল মারে ছেলেটার মুখের উপর। ভারী জুতা মুখে পড়ায় ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।সাথে থাকা বাকি তিনটা ছেলে একসাথে এবার পৃথিশার দিকে এগিয়ে আসে। যে ছেলেটা প্রথমে পৃথিশার সাথে কথা বলেছিলো সে পৃথিশার দিকে এগিয়ে আসতেই মাথা থেকে হিজাব পিন খুলে তার পেটে গেঁথে দেয় পৃথিশা।ব্যাগ থেকে চিলি স্প্রে বের করে বাকি দুটো ছেলের মুখে স্প্রে করে দিতেই তারা চিল্লিয়ে চোখ ধরে বসে পড়ে। তাদের চিৎকার শুনে আশেপাশের দোকানে থাকা মানুষগুলো এগিয়ে আসে। মারুফও খার্মেসী থেকে বেরিয়ে আসে।পড়ে থাকা ছেলেগুলোর মাঝে পৃথিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝে যায় কি হয়েছে। হাত মুঠ করে তাদের দিকে যেতে গেলেই পৃথিশা তার হাত ধরে ফেলে।মাথা নাড়িয়ে না বলে বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য রিকশা নেয়। পুরোটা রাস্তা রাগে পৃথিশার সাথে কথা বলে না মারুফ।

যেভাবে ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ঠিক সেভাবেই লুকিয়ে তারা বাড়িতে প্রবেশ করে।রুমের ভিতর ঢুকে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে বারান্দা বসে থাকে।পৃথিশা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়।তারপর পানি আর ঔষধগুলো নিয়ে মারুফকে জোড় করে খায়িয়ে দেয়। পৃথিশা মারুফের পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসে আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে মারুফের দিকে তাকায়। মারুফকে এমন ভাবলেশহীন দেখে পৃথিশার রাগ হয়।রাগে ধুপধাপ পা ফেলে চলে যেতে নিলেই হাতে টান পড়ে। রাগ হাত ছাড়িয়ে আসতে নিলেই পেছন থেকে মারুফের ব্যাথাতুর শব্দে হুড়মুড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। মারুফের ডান হাতের আঙুল চাপ লেগেছে তাই এমন শব্দ করেছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি পৃথিশার।

ব্যতিব্যস্ত হয়ে মারুফের হাত চেপে ধরে পৃথিশা ছলছল চোখে বলে উঠে, “সরি, সরি!বেশি ব্যাথা লেগেছে?”
মারুফ একহাত দিয়ে সন্তপর্ণে পৃথিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কিছুই হয় নি।খালি একটু চাপ লেগেছে।কান্না করতে হবে না!”
পৃথিশা ব্যান্ডেজে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “কিভাবে হলো এমন?আমাকেও তো বলেননি।আমি না দেখলে তো ওরকমভাবেই থাকতেন সারারাত।”
মারুফ মুচকি হেসে বলল, “তেমন কিছুই হয়নি। গাড়ির দরজা লাগাতে গিয়েই ভুলবশত হাত চাপা পড়ে গেছে।কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে!”
পৃথিশা কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল, “হায় খোদা!সাবধানে থাকবেন না আপনি।”
ছলছল চোখে মারুফের ব্যান্ডেজ করা হাতটার দিকে তাকিয়ে একটা চুমু খেলো পৃথিশা।মারুফ তা দেখে হেসে বলল, “হাতটার কি সৌভাগ্য!”
পৃথিশা রেগে মারুফের দিকে তাকালে মারুফ সশব্দে হেসে বলল, “আচ্ছা সরি সরি!কন্টিনিউ করো! ”
পৃথিশা অবাক হয়ে বলল, “হোয়াট?”
মারুফ হেসে দিলো।পৃথিশা বোকা বোকা মুখ করে তার দিকে চেয়ে রইলো।

___________

পরের দিনের সকালটা ছিলো বেশ সুন্দর।হালকা রোদ আর মেঘলা আকাশের সম্বনয়ে আকাশটাকে দেখতে অনেকটা বর্ষণের পরের আকাশেটার মতো লাগছিলো।এক রশ্মি রোদ এসে মারুফের মুখে পড়তেই চোখ-মুখ কুঁচকে গেলো তার। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই মুখের উপর এক গোছা চুলের অস্তিত্ব টের পেলো।যত্ন নিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিতেই পৃথিশার দেখা পেলো সে।মারুফের বুকের উপর গুটিশুটি হয়ে মুখ গুঁজে ঘুমাচ্ছে পৃথিশা।চুলগুলো আশচেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সকাল সকাল এমন দৃশ্য দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো তার।ঘড়ির দিকে চোখ গেলে দেখলো আটটা বাজতে চলেছে।তারমানে আজকে ফজরের নামাজটা মিস!পৃথিশাকে সড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হতে চলে গেলো সে।

ফ্রেশ হয়ে আসার পরই পৃথিশাকে বিছানায় ঢুলুঢুলু অবস্হায় থম মেরে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো মারুফ। তার কাছে বসে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল, “ঘুম ভেঙেছে ঠিকমতো?”
ধপ করে বিছানায় শুয়ে মারুফের পৃথিশা জড়ানো গলায় বলল, “না।”
মারুফ হেসে আর কথা না বাড়িয়ে নামাজ পড়তে বসলো।চোখের তন্দ্রা ভাব কেটে যেতেই পৃথিশা ঘড়িতে সময় দেখে লাফিয়ে উঠলো।ড্রয়ার থেকে একটা শাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। অতি দ্রুত রেডি হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হাত চুড়ি পড়তে লাগলো সে।ততক্ষণে মারুফের নামাজ পড়া শেষ।

পৃথিশাকে তাড়াহুড়া করতে দেখে মারুফ বলল, “এত তাড়াহুড়ার কি আছে।আস্তে-ধীরে কাজ করো।”
পৃথিশা গলায় চেন পড়তে পড়তে উত্তর দিলো, “দেখেছেন কয়টা বাজে!অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।”
হুট করে নিজের হাতের দিকে চোখ যেতেই পৃথিশা শকড্ হয়ে মারুফের দিকে তাকালো।মারুফ তখন টি-শার্ট পড়ছিলো।অনেকটা লাফিয়ে গিয়েই মারুফের গলা জড়িয়ে ধরটলো পৃথিশা।
হতভম্ব হয়ে মারুফ পৃথিশাকে আগলে ধরে বলল, “আরেহ! এভাবে লাফায় কেউ?”
পৃথিশা নিজের হাতের আংটি দেখিয়ে বলল, “এটা আপনি দিয়েছেন তাই না?”
মারুফ হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
উচ্ছ্বসিত হয়ে পৃথিশা মারুফের গালে চুমু খেয়ে বলল, “অনেক সুন্দর হয়েছে।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।”
কথাটা বলেই পৃথিশা রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।

________

পৃথিশা রান্নাঘরে ঢুকে দেখে মারুফের মা ও তার বড় বোন একসাথে গল্প করছে আর সবজি কাটছে।
পৃথিশা অপরাধী ভঙ্গিতে রিনা খাতুনের দিকে তাকিয়ে বলে, “সরি মা আমার দেড়ি হয়ে গেছে।”
রিনা খাতুন হেসে পৃথিশাকে বলল, “আরে আজকে তো কিছুই রান্না হচ্ছে না।রেস্টুরেন্টে থেকে আনিয়ে নেয়া হয়েছে।এতজনের খাবার রান্না করা সম্ভব না।আর তোর মুখে মা ডাক শুনতে তো বেশ লাগছে।”
পৃথিশা মৃদু হাসি দিয়ে বলে উঠে, “আচ্ছা!কিন্তু আমাকে একটা কাজ দাও।তোমরা কাজ করবে আমি বসে থাকব তা তো হয় না!”
রিনা খাতুন ভেবে বলল, “আচ্ছা তুই তাহলে টেবিলে খাবারগুলো সাজা।আর এতজন মানুষ তো এই ছোট টেবিলে খেতে পারবে না।তাই তোর আর মারুফের খাবারটা আজ একটু কষ্ট করে রুমে খেয়ে নে।”
পৃথিশা বলল, “আরে এটা কোন সমস্যাই না মা!”

খাবারগুলো টেবিলে সুন্দরমতো সাজিয়ে একটা প্লেটে নিজের আর মারুফের জন্য খাবার নিয়ে রুমে চলে গেলো পৃথিশা। মারুফ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বই পড়ছিলো।পৃথিশাকে আসতে দেখে বই নামিয়ে রাখল। হাত ধুয়ে এসে মারুফকে খাওয়ানো শুরু করলো পৃথিশা।
খাওয়ার মাঝেই মারুফ বলল, “ভালোই হয়েছে হাত কেটেছে।”
পৃথিশা অবাক হয়ে বলল, “আজব তো!কারো হাত কেটে গেলে ভালো হয় নাকি!”
মারুফ মেকি হাসি দিয়ে বলল, “এই যে তোমার হাতে খেতে পারছি।”
অবাক হয়ে তাকিয়ে হেসে দিলো পৃথিশা।

চলবে,,

গল্প এতজনের ৪০০+ মানুষের কাছে পৌঁছায় অথচ রেসপন্স ১০০ ও উঠে না।গল্পে রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো।
অনিয়মিত হওয়ার জন্য আমি দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here