#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 9

মিতু অনেক কষ্টে নিজেকে স্থির করে নিলো।ফাইলটা আগের জায়গায় রেখে দিলো।মিতু রাকিবকে বুঝতে দিলাে না যে মিতু সব জেনে গেছে।

রাকিব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে মিতু রুমে নেই।বেলকুনিতে গিয়ে দেখে আনমনে বাহিরে দিকে চেয়ে আছে।রাকিব মিতুকে পেছন থেকে মিতুকে জড়িয়ে ধরে মিতুর চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়।কিছুক্ষণ মিতুর চুলের ঘ্রান নিয়ে নিজেকে মাতাল করার চেষ্টা করে।

মিতু কিছু না বলে চুপ করে চোখ দুটি বন্ধ করে রাকিবের পাগলামিটা অনুভব করতে লাগলো।রাকিব নিজের হাত দিয়ে মিতুর পেটে স্লাইট কাটলো।মিতু রাকিবের হাত দুটি ধরে রাখলো।কিন্তু টু টা কোনো শব্দ করলো না।রাকিবের মনে হলো মিতুর মুড অফ।নয়তো একটু হলেও কথা বলতো।

-আমার বাবুইটার কি কোনো কারনে মন খারাপ?
-না,
-তাহলে কিছু বলছো না যে?

মিতু রাকিবের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রাকিবের দিকে ফিরে এক মায়া ভরা দৃষ্টিতে রাকিবকে দেখতে লাগলো।খুব ভালো করে দেখলো রাকিবকে।একাকী বেচারা মিতুর টেনশনে কেমন যেনো শুকিয়ে গেছে।চেহারাটা কিছুটা কালো হয়ে গেছে।

মিতু চিন্তা করতে লাগলো,সে রিপোর্টের কথা জেনে গেছে এটা জানলে রাকিব দিন রাত তার সামনেই ভেউ ভেউ করে কাঁদবে।মিতু মরে যাবে এটা মেনে নিতে পারলেও রাকিবের কাঁন্নাটা মেনে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।

মিতু একটা হাত রাকিবের বাহুতে আর একটা হাত দিয়ে রাকিবের মাথার পেছনের চুল গুলো ধরে নিজের পায়ের আঙ্গুলে ভর করে উচু হয়ে রাকিবের মাথাটা একটু নিজের দিকে এনে আলতো করে রাকিবের ঠোঁট নিজের ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিলো।

রাকিব মিতুর এমন বিহেবে চুপটি করে হা করে রইলো।মিতু রাকিবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।রাকিবও আর কিছু না ভেবে মিতুকে জড়িয়ে ধরলো।

মিতু মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো,আমাদের দিন গুলো কেমন যেনো বদলে গেছে।রাকিব আমাকে খুশি রাখার অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে আর আমিও এখন খুশি থাকার ভান করছি।

রাকিব অভিনয়ে খুব কাঁচা। মিতুর টেস্টের রিপোর্ট পাবার পর থেকেই তার এই বদলে যাওয়াটা মিতু খেয়াল করে ছিলো।ভালোই চলছে দুটো মানুষের দিন রাত অভিনয়ের কার্যক্রম।

-এই টুনির মা,আমি না একটা জিনিস খেয়াল করেছি।
-কি?
-তুমি সুন্দর কিন্তু মোটেও ক্রাশ খাওয়ার মতো সুন্দর না।
-তাই? তাহলে আমার পিছনে লাইন মারতা কেন?
-আমি কই লাইন মারতাম?আমিতো শুধু তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম।তুমি এক্সেপ্ট না করলেই পারতে।
-সেটাই আমার ভুল ছিল।
-শুধু ভুল না মহাভুল।
-আমি বলেই তোমার মত ইয়ে ছেলেকে বিয়ে করছি।
-ইয়েটা কিয়ে?
-জানি না যাও তো।
-উহু বলই না।
-ঝগাড়াটে পোলা।
-ও আমিই শুধু ঝগড়া করি? আর তুমি রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করো?
-জ্বি না। আমি একটা কিউট লক্ষ্মী মেয়ে।
-এক হাতে যে তালি বাজে না। নিশ্চই জানো?
-মানে কি? তুমি বলতে চাও আমি ঝগড়া করি?
-না,ঝগড়া আমি করি।তুমি শুধু চুপ থাকো।কথায় বলে না,চোরের মায়ের বড় গলা।
-এই শুনো তোমার সাথে আমার আর কথা নাই। আর কথাই বলবনা।দূর,আমি কালেই বাপের বাড়ি চলে যাবো।থাকো তুমি একা।
-দেখাই যাবে।আমিও কথা বলবো না।হুম

কথাটা বলে মিতু হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রাকিব হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।মিতু রুম থেকে চলে যেতেই রাকিব হো হো করে হেসে দিলো।

-পাগলি একটা।একদম বাচ্চা।আর আমি এই বাচ্চা পাগলিটাকেই আমি অনেক ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি।যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমার এই পাগলিটাকে চাই।

রাকিব একা একাই কথা গুলো বলতে থাকে।মিতুর রুম থেকে বের হয়ে তার শাশুড়ি মায়ের রুমে চলে আসে।আজ তার কিছু ভালো লাগছে না।

-মামুনি,আসবো
-সেকিরে,এভাবে অনুমতি নেওয়ার কি আছে। আয় ভেতরে আয়।পাগলি মেয়ে।এটা তো তোর বাড়ি।যখন মন চায় চলে আসবি।বলার দরকার নেই।
মিতু গিয়ে তার শাশুড়ির সামনে বসে তাঁর কোলে মাথাটা রাখলো।

-কিরে মন খারাপ?
-উহু
-রাকিবের সাথে ঝগড়া হইছে?
-না,
-তাহলে?
-আমার কিছু ভালো লাগছে না।
-কেন কি হয়েছে?
-কিছু হয়নি এমনি।
-বাসার কথা মনে পড়ছে?
-হু।আমি এখন একটু তোমার কোলে একটু ঘুমাই?
-আচ্ছা ঘুমা।মিতু শাশুড়ি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকে।আর শাশুড়ি মা মিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।এভাবেই মিতু ঘুমিয়ে পড়ে।

রাকিব মিতুকে খুঁজে কোথাও না পেয়ে মায়ের রুমে এসে দেখে মা আর মিতু এক সাথে ঘুমাচ্ছে।রাকিব আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।সারাটা দিন দুজনের এভাবেই কেটে যায়।মিতুর ঘুম ভাঙ্গে একেবারে রাতে।

মিতু একবারো রাকিবের সাথে কথা বলে নি।রাতের ডিনার শেষ করে মিতু রুমে এসে লিপিসটিকটা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় বড় বড় করে লিখে রাখে,

“সকালে ৭টায় আমাকে ডেকে দিও।আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো”

রাকিব অফিসের একটা কাজ শেষ করে রুমে এসে দেখে মিতু ঘুমিয়ে গেছে।রাকিব আয়নায় লেখাটা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।রাকিব মিতুর পাশে শুয়ে মিতুকে টেনে নিজের বুকে শুইয়ে দিয়ে মিতুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

সকালে মিতুর ঘুম ভাঙ্গলে দেখে রাকিব বিছানায় নেই।মিতু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১১টা বাজে?

-এ আল্লাহ,আমি এতোক্ষণ ঘুমালাম?হারামিটা আমাকে ডাকলো না কেন?আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তার চোখ কপালে,

তার লিখাটা মুছে আয়নায় রাকিব লিখে রেখেছে,

“ওগো বউ উঠে পড়ো।৭টা তো বেজে গেলো।বাপের বাড়ি যাবে না?”

মিতু চোখ গোল গোল করে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে।রাকিব রুমে এসে দেখে মিতু একনজরে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।কারো পায়ের শব্দে মিতু তাকিয়ে দেখে রাকিব।

-তুমি আমাকে ডাকনি কেন?আমিতো বলেছিলাম ৭টায় আমাকে ডেকে দিতে।
-আমার কি দোষ?আমিতো ডেকে দিলাম তুমি উঠো নি কেন?
-কোথায় ডাকলে আমিতো শুনি নি?
-এইতো আয়নায় দেখ কতো বড় বড় করে লিখে দিলাম।
-এভাবে লিখে দিলেই হলো?লিখে ডাকলে কি উঠা যায়?মুখে ডাকতে পারো নি?মুখে কি তালা লাগানো ছিল?
-তুমিও তো আমাকে লিখেই বলেছো।তাই আমিও লিখেই ডেকে দিলাম।
-ভেবেছিলাম আজ আমি নিজের বাড়ি চলে যাবো।
-এখন চলে যাও।কে মানা করেছে।
-তোমার মাথায় কি বুদ্ধি বলে কিছু নেই?এই সময় পুরান ঢাকা থেকে মিরপুর যাওয়া যাবে না জানো না?রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকবে।সারাদিন গাড়িতেই বসে থাকতে হবে।তুমি একটা অপকর্মের ঢেঁকি।তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।বলে মিতু ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

চলবে😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here