#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_৩
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

সকালে নাস্তা করে সবাই রেহান ভাইয়াদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
রুমে বসে হিজাব বাঁধছি ঠিক তখনই রেহান ভাইয়া আমার রুমে প্রবেশ করে।
হাতে পিন নিয়ে হিজাবে লাগাতে যাবো তখনই রেহান ভাইয়াকে দেখে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।
বেখায়ালি ভাবে হোক আর যেভাবেই হোক হাতে থাকা পিন আমার আঙুল ভেদ করতেই আমি চিৎকার করে উঠলাম।
আমার চিৎকার খুব বেশি জোড়ে না হলেও রেহান ভাইয়ার কান অবদি ঠিকই গেলো।
দৌড়ে রেহান ভাইয়া আমার কাছে এসে দু’হাত দিয়ে আমার আঙুল চেপে ধরলেন।
সঙ্গে সঙ্গেই যেনো ব্যাথা উধাও হয়ে গেলো আমার।
মনে হচ্ছে পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে।
এক ফোটা রক্ত বের হলেও এখন তাও আর দেখা যাচ্ছে না।
উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি উনার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
পানিতে হাত ডুবাতে একদমই ইচ্ছে করছে না আমার।
রেহান ভাইয়ার স্পর্শ যে আছে আমার হাতে, কি করে মুছে ফেলি?
নিজের আঙুলেই চুমু খেয়ে দাঁত বের করে হেসে দিলাম।

খুব করে চাইছি উনি যেনো রুম থেকে চলে যান।
দরজাটা হালকা খুলে রুমে চোখ বুলাতেই দেখলাম উনি চলে গেছেন।
স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম আমি।
উনি চলে যাওয়ার পর আমিও নির্বিঘ্নে তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম।

🥀
🥀
🥀

গাড়িতে সবার আগে উঠে বসলাম আমি।
সবার আগে উঠার কারনটা জানালার পাশে বসার জন্যই হয়তো।
গাড়িতে বসে ভেতর থেকেই বাহিরে তাকিয়ে দেখি রেহান ভাইয়া এদিকেই আসছেন।
মিষ্টি কালারের পাঞ্জাবীতে তাকে একদম শুভ্র লাগছে।
এটা অবশ্য মানতেই হয় পাঞ্জাবীতে সব পুরুষকেই পবিত্র লাগে, কিন্তু রেহান ভাইয়াকে আজ বেশিই সুন্দর লাগছে।
চোখ নামিয়ে নিলাম আমি, ইশ কিভাবে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
লজ্জা শরম কি সব খেয়ে বসে আছি নাকি আমি?
কিন্তু রেহান ভাইয়াকে দেখার ব্যাকুলতা যে সব পূর্ণতাকে হার মানায়।
ঐ যে ঐ গানটা ও হে শ্যাম তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিবো।
মুহূর্তটা ঠিক যেনো মিলে যাচ্ছে গানের সাথে।

🥀

জানালার দিকে তাকিয়ে দু’হাত মুঠ করে বসে আছি আমি।
আর আমার পাশে রেহান ভাইয়া বসে ফোনে ব্যস্ত হয়ে আছেন, যেনো কোনো দিকেই তার হুশ নেই।
কিছুক্ষণ বাদেই বাবা এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রেহান ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন–

— রেহান, তুমি বরং সামনে বসে পড়ো।
পেছনে উপমা উম্মি আর তোমার আন্টিকে বসতে দাও।

বাবার বলতে দেরি কিন্তু রেহান ভাইয়ার উঠে যেতে দেরি হয়নি।
বাবা বলতেই রেহান ভাইয়া উঠে সামনে বসে পড়লেন।
একবারও আমার দিকে পেছনে ফিরে তাকালেন না।
খুব মন খারাপ হয়ে গেলো আমার।
উপরে উপরে যতোই তার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই, কিন্তু আমি মন থেকে তো তাকে আমার পাশেই চাই সব সময়।
কিন্তু কে শোনে কার কথা, উনি কি জানেন আমার কিসে ভালো লাগে!

জানালার পাশে বসলেও চোখ আমার লুকিং গ্লাসে।
লুকিয়ে লুকিয়ে বার বার রেহান ভাইয়াকে দেখতে আমার ভালোই লাগছে।
আচ্ছা উনিও তো পারেন আমাকে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে।
না উনি কেনো দেখবেন? উনি কি আমাকে ভালোবাসেন?

আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি কেমনে।
গাড়িতে থাকা রেডিওর গানটা যেনো এই মুহূর্তটাকে বাস্তবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
সত্যিই তো, এত বাঁধা হওয়া সত্তেও ভালোবাসা কিন্তু থেমে নেই।
হাত পা শেকলে বাঁধা যায়, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত থাকা ভালোবাসার সেই আদিম নদীতে যখন ঢেউ উঠে, তা কি আটকানো যায়!

জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমোচ্ছিলাম ঠিক তখনই উম্মি জোড়ে জোড়ে আমাকে ডাকতে থাকে।
তড়িঘড়ি করে জেগে উঠি আমি।
এই যাহ্ এইটুকু রাস্তাতেই ঘুমিয়ে গেলাম আমি?
ধ্যাৎ… আমাকে ঘুমিয়ে যেতে রেহান ভাইয়া দেখে ফেলেনি তো?

আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে উম্মি চলে গেলো বাড়ির ভেতরে।
গাড়ি থেকে নেমে একবার এদিক সেদিক তাকিয়ে নিলাম।
নাহ্ কেউ নেই, সবাই ভেতরে চলে গেছে।
বুকে হাত রেখে বড় একটা শ্বাস নিয়ে সামনে এক পা বাড়াবো ঠিক তখনই গাড়ির পেছন থেকে রেহান ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকে।
মুহূর্তেই আমার পা বরফের মতো জমে যায়।
পেছন থেকে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন–

— উপমা, তুই কি সবসময় মুখ হা করেই ঘুমাস?

এটা কি বললেন রেহান ভাইয়া?
কেনো বললেন? আমাকে ঘুমিয়ে থাকতে কি দেখে ফেলেছেন?
কেনো দেখেছেন? আচ্ছা আমি কি মুখ হা করে ঘুমিয়ে ছিলাম!
ইশশ কি লজ্জা, এখন কি উত্তর দেবো আমি?
উনিও না, যখন উনাকে দেখার জন্য আমার মন আকুপাকু করছিলো তখন একবারও আমার দিকে ফিরে তাকালো না, আর যখনই আমি ঘুমিয়ে গেলাম ওমনি আমাকে দেখতে হলো!

নিজের মনে সাহস যোগানোর জন্য বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিলাম আমি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন আমায়,

— কি হলো, চুপ করে আছিস কেনো?

তড়িঘড়ি করে জবাব দিলাম —

মা.. মা ডাকছে আমাকে, আমি গেলাম।

🥀
🥀
🥀

রেহান ভাইয়াদের বাড়িটা বেশ বড়।
আমাদের সরকারি বাড়ির মতো আবদ্ধ না।
বিশাল বাড়ান্দা, নজরকারা ছাঁদ, দেখলেই মন জুড়িয়ে যায় আমার।
মনে হয় যেনো এটা আমার বাড়ি, একান্তই আমার বাড়ি।
আর কারো অধিকার নেই এ বাড়ির উপর।

প্রায় দু’বছর পর এলাম এ বাড়িতে।
কিছুই পরিবর্তন হয়নি এখানের।
কত স্মৃতি এ বাড়ির, সেই ছোট্ট বেলায় এ বাড়িতে আসলে রেহান ভাইয়ার সাথে সারা বাড়ান্দা দৌড়ানো।
ছাঁদের ফুল গাছে পানি দেয়ার সময় রেহান ভাইয়াকে বিরক্ত করা।
আর উনার আঙুল ধরে বুড়িগঙ্গার নদীর পারে হেঁটে হেঁটে আইসক্রিম খাওয়ার সময়টুকু সবই চোখে ভাসে।

🥀

বাড়ান্দাটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম ঠিক তখনই পেছন থেকে আমার নাম ধরে পরিচিত কিংবা অপরিচিত পুরুষ কণ্ঠে কেউ একজন ডেকে উঠলো।
কিন্তু কে সে?
রেহান ভাইয়াতো এখনও নিচেই আছে, ভেতরে এলে তো আমার সামনে দিয়েই আসতে হবে।
কণ্ঠ অনুসরন করে পেছনে ফিরতেই দেখি…..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here