#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১৮
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাহিরে যেতেই রেহান ভাইয়াকে বাবা-মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে আমার মনে ভয় ডুকে গেলো।
আবার কি কিছু হয়েছে নাকি!
রেহান ভাইয়াকে বাবা সেদিনের মতো আবার কিছু বলেন নি তো!
উনার মুখটাও কেমন শুকনো দেখাচ্ছিলো।
ইশশ কেনো যে বেলা করে ঘুমাই আমি, কি হয়েছে কিছুই জানতে পারলাম না!
ছাই পাশ ভাবতে ভাবতেই রান্নাঘরে ঢুকেই দেখি মায়ের চেহারা গম্ভীর হয়ে আছে।
হালকা কেশে মাকে বললাম,
মা কিছু হয়েছে?
আমার সহজ সোজা প্রশ্ন বোধহয় মা-র মোটেও পছন্দ হয়নি।
চোখ মুখ কুচকে চেহারা মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে ফেলে আমাকে বললেন–
.
— কি আর হবে?
নষ্টামির তো আর কোনো যায়গা বাদ রাখলি না।
ছেলে দেখলেই তোর ডেং ডেং করে নাঁচতে হবে তাইনা?
রেহানের সাথে তোর এতো কিসের কথা শুনি?
কি চলছে তোদের দু’জনের মাঝে।
কতদিন থেকে এসব করছিস তোরা?
কে জানে বড় আপা এ ব্যপারে কিছু জানে কিনা, জানলে কোন মুখে আমি বড় আপার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো!
এদিকে আমরা ছেলেটার জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু করছি আর তোরা কিনা ভেতরে ভেতরে এসব চালিয়ে যাচ্ছিস?
লজ্জা করে না তোর!
মনে তো চাইছে তোকে মেরে গাল লাল করে দেই।
যা আমার সামনে থেকে।
.
শান্ত দৃষ্টিতে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আমি মায়ের দিকে।
মা কি বললেন সবই আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।
তবে কথাগুলো যে রেহান ভাইয়া আর আমাকে নিয়ে বলেছেন সেটা বুঝতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি।
খুব সম্ভবত মা কোনো এক ভাবে এটাই বুঝেছে আমি আর রেহান ভাইয়ার রিলেশনে আছি।
লাইক সিরিয়াসলি!
কোন যুক্তিতে মা আমাকে এগুলো বললেন!
মা কি জানেন আমি রেহান ভাইয়াকে দেখলে কতটা ঘাবড়ে যাই!
মা কি জানেন আমি রেহান ভাইয়ার সাথে কিভাবে কথা বলি!
মা কি জানেন আমার আর উনার সম্পর্কের এখনও কোনো নাম হয়নি।
🥀
🥀
🥀
কাল সকালেই এ বাড়ি খালি হয়ে যাবে।
সবাই চলে যাবে যার যার বাড়ি।
মায়ের বলা কথাগুলো আমার শরীরে এখনও কাটার মতো বিধছে।
মা কি দেখে আমাকে এতোগুলো কথা শোনালো সেটাই আমার মাথায় ধরছে না।
আচ্ছা রাফি ভাইয়া কি কিছু বলেছেন মা-কে?
কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
🥀
ছাঁদে পানির পাইপের নিচে মাটি জমে সেখান থেকে একটা স্বর্ণলতা গাছ পাইপ বেয়ে উপরে উঠে গেছে, আগাছাও আছে বেশ খানিকটা।
খুটিয়ে খুটিয়ে পাশের পাইপ লাইনের উপর বসে স্বর্ণলতা গাছটা দেখছি আমি।
যত্নহীন এ গাছটা নিজে থেকেই কি সুন্দর করে বেড়ে উঠেছে।
নিজ সৌন্দর্যে বেড়ে উঠা স্বর্ণলতায় হাত দিয়ে ছুঁতে যাবো ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ আমার নাম ধরে ডাকে।
পেছনে না ফিরেই বুঝতে পারছি উনি আর কেউ নন, আমার রেহান ভাইয়া।
মুহূর্তেই যেনো হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থেকে দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমার।
স্বর্ণলতার গোড়ায় দৃষ্টি রেখেই হাত গুটিয়ে নিলাম আমি।
— কি হলো উপমা, তোকে আমি ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?
উনার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি।
দৃষ্টি আমার পায়ের বৃদ্ধাআঙুলে।
কাল মায়ের বলা কথাগুলোর পর উনার সাথে আমার সামনা সামনি হওয়াটাই যেনো কোনো ঘোর অপরাধ।
নিরবতা ভেঙে উনিই প্রথম বললেন–
— উপমা, আন্টি কি তোকে কিছু বলেছেন?
আমতা আমতা করে আমি বললাম– কই, না তো!
আমার উত্তর শুনে উনি দেয়াল ঘেষে পিঠ এলিয়ে দিলেন।
দু’হাত পকেটে রেখে, ডান পায়ে দেয়ালে ঠেশে দাঁড়ালেন।
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ কিছু একটা ভাবছেন হয়তো।
.
উনার চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো।
কেমন যেনো বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে উনাকে।
এলো মেলো চুল আর ফেকাসে মুখে উনাকে বড্ড অসহায় লাগছে।
কি এমন কষ্ট উনার, বাবা কি আবার উনাকে বকেছেন?
আমি বুঝিনা বাবার কেনো রেহান ভাইয়াকে নিয়ে এতো সমস্যা!
.
— জানিস উপমা, খুব চেষ্টা করেছি তোর বাবাকে বোঝানোর।
কোনো লাভ তো হলোই না, উল্টো উনারা আমাকে আরো ভুল বুঝলো।
আচ্ছা উপমা তোর কি মনেহয়!
আমি কি খুব খারাপ?
আমি কি তোর যোগ্য নই!
তোর কি মনেহয়, আমি তোকে ভালো রাখতে পারবো না!
.
চোখ বন্ধ করেই উনি কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে গেলেন।
কিন্তু বাবাকে উনি কি বলেছেন!
জানার জন্য মন খুব আকুপাকু করছে আমার।
থাকতে না পেরে উনাকে বলেই বসলাম–
কি বলেছেন আপনি বাবাকে!
উনি আমার কথার কোনো উত্তর দিলেন না।
জবাবে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হাসি দিলেন।
আমি না পারছে চুপ করে থাকতে আর না পারছি উনাকে কোনো প্রশ্ন করতে।
উনাকে বাবা ভুল বুঝেছেন এর মানে কি?
ধ্যাৎ চুপ করে আছেন কেনো উনি!
.
— জানিস উপমা, হুমায়ুন ফরিদী একটা কথা বলেছিলেন–
জীবনে চাইলেই কাউকে কখনো নিজের করে পাওয়া যায় না, তার জন্য ভাগ্য থাকতে হয়!
আমার ভাগ্যেও হয়তো….
হাত বাড়ালেই যদি আকাশ ছোঁয়া যেতো, তবে আকাশ এতো প্রিয় হতো না কখনো।
কিন্তু… তবুও চেষ্টা করবো, আবারো চেষ্টা করবো।
একবারেই কি তোর বাপ আমায় মেনে নেবে নাকি!
আচ্ছা উপমা, একটা কথা সত্যি করে বলতো।
“তুই আমায় ভালোবাসিস তো?”
.
উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
যেনো পলক ফেললেই আমি হারিয়ে যাবো কোথাও।
উনার শেষের কথাটা আমার মাথায় ঢোলের মতো বেজে যাচ্ছে “তুই আমায় ভালোবাসিস তো?”
নিঃশ্বাস ক্রমশই দ্রুত হচ্ছে।
হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে শব্দ হচ্ছে, এখনই বোধহয় বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসবে।
আমার ঠোঁট কাপছে, শরীরে অনবরত ঠান্ডা শিহরণ বইছে।
.
দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম আমি, উনার ঐ দৃষ্টি আমাকে এই মুহূর্তে নির্ঘাত খুন করতে সক্ষম।
গাল নাক কান লাল হয়ে গেছে আমার।
হাত মোচড়াতে মোচড়াতে আমি ছাঁদ থেকে নিচে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
.
এক প্রকার দৌড়ে ছাঁদের দরজার কাছে আসতেই রেহান ভাইয়া আচমকাই আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেললেন।
শুধু অবাক না ভীষন রকম অবাক হলাম আমি।
এক হাত দিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরেছেন, বাকি সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছেন উনি।
আমার পা মুহুর্তেই পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলো।
এক চিমটিও সামনে এগোচ্ছে না।
উনার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নেবো সেই সাধ্য এই মুহূর্তে আমার নেই।
.
প্রায় দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড চুপ থেকে উনি যা বললেন তাতে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।
.
— তুই কেনো বুঝিস না উপমা!
ভালোবাসি তোকে আমি, খুব ভালোবাসি।
ভালোবাসি তোর ঐ হাসি।
ভালোবাসি তোর বাচ্চামো গুলো।
ভালোবাসি তোর গোছানো কবিতার প্রত্যেকটা শব্দ।
ভালোবাসি তোর ঐ লাজুকতা।
তুই দেখতে পাস না আমার ভেতরটা ভালো নেই, উপরে শুধু ভালো থাকার কেসিংটা মুড়িয়ে রেখেছি!
এতো বোকা কেনো তুই উপমা?
ভালোবাসি তোকে আমি কেনো বুঝিস না?
.
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমি।
চোখে বোধয়হ পানির আনাগোনা শুরু হচ্ছে।
ওহুম, এটা কষ্টের না অপেক্ষার প্রহর শেষের অশ্রু।
গলার ভেতর শব্দেরা দলা পাকিয়ে আন্দলোন করছে।
আমার নিচে চলে যাওয়াটা খুব জরুরি এখন, কিন্তু পা আমার চলছেই না।
চোখ ক্রমাগত অশ্রু বিষর্জন দিয়ে যাচ্ছে।
আমার প্রতিটা ফোঁটা অশ্রু উনার বলা প্রত্যেকটা কথার সাক্ষী হয়ে গাল বেয়ে নিচে পড়ছে।
উনি বোধহয় কিছু একটা বুঝতে পেরে আমায় ছেড়ে দিলেন।
.
এক মুহূর্তও দেরি করলাম না আমি।
দ্রুত কাঠের রেলিং ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।
একবারও পিছনে ফিরে তাকাইনি।
তাকালেই বোধহয় উনার অশ্রুশিক্ত চোখ দেখতে পেতাম।
দেখতে পেতাম আমার জবাবের আশায় উনার অপেক্ষায় থাকা চাহনিটা।
নিচে এসে এক দৌড়ে রুমে চলে গেলাম আমি।
দরজা বন্ধ করে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি….
.
.
.
.
.