#একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১৩
#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
বইয়ের উপর আমার গভীর মনযোগ।
এই মুহূর্তে ব্যাকরণের গভীর সংঙ্গা গুলো মনে রাখাই আমার উদ্দেশ্য।
সম্পূর্ণ ধ্যান যখন আমার বইয়ের ভেতর ঠিক তখনই মেসেজের ছোট্ট শব্দে আমি পাশ ফিরে তাকাই।
ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এসেছে।
— “কাল যাওয়ার সময় রিকশার হুডি উঠিয়ে তবেই পরীক্ষা দিতে যাবে।
যদি কথা মতো কাজ না হয়, রাস্তার মাঝেই রিকশা ভেঙে গুড়িয়ে দেবো।
অপরিচিত নাম্বার থেকে এমন হুমকি আসাতে বেশ বড় একটা ধাক্কাই খেলাম আমি।
কে হতে পারে! আমাকে রিকশার কথাই বা কেনো বললো?
আমি আজকে রিকশার হুড খোলা রেখেছি সেটাই বা জানলো কি করে!
আর আমার নাম্বার, আমার নাম্বার পেলো কিভাবে! কেউ কি আমাকে ফলো করছে?
আজকে আমার রিকশার পেছনে যে ছিলো সেই নয়তো?
কি হচ্ছে আমার সাথে কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
ফোন এক হাতে নিয়ে হা করে বসে আছি।
আচ্ছা আমি কি রিপ্লাই দেবো!
নাকি সরাসরি কথা বলবো!
সঙ্কচবোধকে পেছনে ফেলে অপরিচিত নাম্বারটায় কল করেই বসলাম।
মাত্র আমায় মেসেজ করলো আর এখনই বলছে সংযোগ দেয়া সম্ভব না!
কি অদ্ভুত!
যাক গে, আর মাথা ঘামালাম না।
বইয়ের উপর আবার মনযোগ দিতেই হারিয়ে গেলাম আমি সাহিত্যের রাজ্যে।
🥀
🥀
দিনগুলো আমার কেমন যেনো যাচ্ছে তাই ভাবে চলে যাচ্ছে।
কোনো মুহূর্ত খুব বেশি খারাপ আবার কোনো মুহূর্ত কোনোরকম কাটছে।
পরীক্ষাগুলোও একটা একটা করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিদিনই আসা যাওয়ার সময় লক্ষ্য করছি; কেউ একজন আমি বাসা থেকে বের হতেই আমাকে ফলো করে।
সেদিনের ঐ অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজটা আসার পর আমি আর রিকশার হুড খুলে রাখার সাহস করিনি।
তবে রিকশার ফাঁক ফোঁকর থেকেই তাকিয়ে দেখতাম কেউ একজন খুব নিরবে রিকশার পিছু নেয়।
কখনও বা সিএনজিতে কখনও বা বাইকে করে।
মুখ দেখার সাধ্য হয়নি অবশ্য, কালো প্যান্ট কালো ফুল হাতা টি-শার্ট কালো গ্লাবস, মাথায় হ্যালমেট।
আপরিচিত নাম্বারটা থেকেও দ্বিতীয়বার কোনো মেসেজ কিংবা কল আসে নি, বরাবরই বন্ধ ছিলো।
আজ আমার শেষ পরীক্ষা।
সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ যে করেই হোক ঐ অপরিচিত মানুষটার সাথে কথা বলবোই।
এমিতেও আমার সাথে আর কেউই আসে না, তাই কথা বলতেও অসুবিধা হবেনা।
যেই ভাবা সেই কাজ।
রিকশা বড় রাস্তায় উঠতেই দেখলাম আগে থেকেই রাস্তার এক পাশে সেই লোক বাইকে বসে আছে।
ইচ্ছে করেই আজ রিকশার হুড খোলা রেখে দিলাম।
পেছন পেছন যে বাইকে থাকা লোকটা আসছে সেটা আমি ঢের বুঝে গেছি।
ভাবছি এখনও কেনো কিছু করছেনা বা বলছেনা!
তবে কি মেসেজ দেয়া লোক আর এই লোক ভিন্ন?
প্রায় পনেরো মিনিট যেতে না যেতেই আমি রিকশাওয়ালাকে বললাম রিকশা থামাতে।
আমার রিকশা থামতেই বাইকে থাকা লোকটিও বাইক থামিয়ে দিলো।
রিকশা থেকে নেমে একটুু পেছন হেঁটে বাইকের কাছে আসতেই দেখলাম লোকটি দু’পায়ে ভর দিয়ে বাইক থামিয়ে রেখেছে।
লোকটির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।
বোঝার চেষ্টা করছি তাকে আমি আদৌ চিনি কিনা।
এমন গড়নের লোককে আমি আমার জীবনের কষ্মিন কালেও কখনও দেখেছি বলে আমার মনে পড়ছে না।
চোখগুলোও হ্যালমেটের আড়ালে ঢেকে আছে।
ভেতর থেকে বোধহয় সেও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
রাস্তায় খুব বেশি গাড়ি চলাচল করছে না, তবে এতটুকু আত্মবিশ্বাস আছে আমি চিৎকার করলেই এখানে লোক জড়ো হয়ে যাবে।
সে যাই হোক, এক চিমটি ভয় আর অনেকটা সাহস নিয়ে তাকে আমি বললাম–
এই যে, আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন কেনো?
আজকে প্রায় এক মাস থেকে দেখছি আমি রিকশা থেকে না নামা পর্যন্ত আপনি আমার রিকশার পেছন পেছন আসেন।
সমস্যাটা কি আপনার, কেনো ফলো করছেন আমাকে?
লোকটি আমাকে অবাক করে দিয়ে কোনো কথা না বলেই এক টানে বাইক নিয়ে একটা গলির ভেতর ঢুকে যায়।
কোনো উত্তর না দিয়েই চলে গেলো?
কথা বলার সময় একবার তাকিয়েছে অবশ্য।
বিস্বয় কাটিয়ে কোনো রকম রিকশায় উঠে বসলাম আমি।
🥀
পরীক্ষা দিয়ে আর দেরি করলাম না কোথাও।
সোজা বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে ফোন হাতে নিয়ে বসে পড়লাম।
উদ্দেশ্য সেই নাম্বাটা।
বার বার বন্ধ বলার পরও ফোন করে যাচ্ছি আমি।
কেনো করছি কোন কারনে করছি কিছুই জানিনা।
🥀
বিকেলে ছাঁদের রেলিংয়ে পিঠ ঘেষে রেহান ভাইয়ার দেয়া মালঞ্চ বইটা নিয়ে বসে আছি।
উনি সেদিন বইটা দেয়ার পর সাথে সাথেই ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম আমি।
বইটা থেকে আমি উনার গন্ধ অনুভব করতে পারি।
মনে হয় যেনো উনাকে স্পর্শ করছি কিংবা উনি এখানেই আছেন।
মালঞ্চ উপন্যাসটা আমার পড়া হয়েছে বেশ ক’বার।
তবুও রেহান ভাইয়ার হাত থেকে নেয়ার মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে।
ভালোবাসার মানুষের হাত থেকে নিয়েছি বলে কথা।
এই যে, বাস্তবে আপনি আমার পাশে নেই অথচ মনে হয় যেনো আমার পাশে পিঠ ঘেষে বসে আছেন।
অনুভবে তো আপনি প্রতিটা সেকেন্ডেই আমার পাশে থাকেন।
মাঝে মাঝে আমার অনুভবটাকেই আমার বাস্তব মনে হয়।
মনে হয় যেনো আমি ছাড়া আপনাকে আর কেউই দেখতে পায়না।
মনে হয় আপনার সাথে আমি কথা বলছি, আচ্ছা আমি কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছি?
আপনি তো বাস্তবে ঠিকই আছেন কিন্তু আমার পাশে থাকেন না।
তাহলে আমি কেনো আপনাকে সবসময় আমার আশে পাশে দেখতে পাই, আপনাকে অনুভব করতে পারি!
শুনেছি এমনটা নাকি মৃত মানুষের সাথে হয়, তারা মরে গেলে কারো আশে পাশে থাকতে পছন্দ করে।
আপনি তো বেঁচে আছেন!
তাহলে কি আমি মরে গেলাম?
কে জানে, বেঁচেই বা আছি কোথায়?
প্রতিনিয়তই দীর্ঘশ্বাসের সাথে কষ্টগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে বেশ তো একা বেঁচে আছি।
আপন মানুষগুলোর প্রতিদিন দেয়া কষ্টগুলো নিয়েই সহশ্র অভিযোগ আর অভিমান জমে জমে হৃদপিন্ডটা টইটুম্বুর হয়ে আছে।
দলবদ্ধ হয়ে যেদিন অভিযোগ আর অভিমানেরা বিদ্রোহ করবে, ওরা সেদিন সামলাতে পারবে তো?
🥀
প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে।
আমার অবশ্য অন্ধকার নিয়ে ভয় নিয়ে।
অন্ধকারেই যার বসবাস সে আবার অন্ধকারে ভয় পায় নাকি?
দিন দিন অবশ্য কালো রাতের সাথে বন্ধুত্বটাও বেশ গাঢ় হচ্ছে।
বইটা বুকে জড়িয়ে নিয়েই নিচে নেমে এলাম আমি।
অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পরও ঘরের বাইরে ছিলাম বলে আমাকে না আবার কথা শুনতে হয়।
তাই দেরি না করেই রুমে চলে আসবো ঠিক তখনই শুনতে পেলাম মায়ের কণ্ঠ।
রুমে বসে বাবার সাথে কিছু একটা নিয়ে খুব উত্তেজিত হয়ে আছেন।
কথার মাঝখান থেকে শুনে প্রথমে আগাগোড়া কিছু বুঝতে না পারলেও পরে যা শুনলাম তাতে আমার মন আরো বিষিয়ে গেলো…..
চলবে…