একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়
#পর্ব_১১
##Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)

আমি আড় চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।
ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরি।
জড়িয়ে ধরে বলি, ভালোবাসি আপনাকে আমি।
খুব ভালোবাসি আপনাকে।
না আর তাকাবোনা ঐ চোখের দিকে।
উনার ঐ চোখের মায়া আমাকে ভষ্ম করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

গাড়ি স্টার্ট দিতেই উনি দৌড়ে এসে জানালার পাশে দাঁড়ালেন।
বাবা-মা উম্মি আমি সবাই উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
উনি হাতে থাকা চকলেটের একটা বক্স খোলা জানালার ভেতরে হাত রেখে এগিয়ে দিলেন।
আমি হাত বাড়িয়ে নিতে যাবো তখনই উনি বললেন–

— উম্মি এটা রাখ, বাসায় গিয়ে খুলিস।

সঙ্গে সঙ্গেই হাত গুটিয়ে নিলাম আমি।
ইশশ হাত বাড়িয়ে নিতে গেলে কি লজ্জায় পড়তে হতো আমাকে!
উনি এভাবে আমাকে অপমান করতে পারলেন?
খুব লজ্জা লাগছে আমার, মাথা নিচু করে হাত দু’টো মুঠ করে আছি।
একে তো মন ভীষন খারাপ তার উপর উনার এমন কাজে চোখে এবার সত্যিই পানি চলে এলো।

উম্মি হাত বাড়িয়ে চকলেটের বক্সটা নেয়ার সময় আমি রেহান ভাইয়ার দিকে আবারো আড় চোখে তাকালাম।
উনি উম্মির হাতে বক্সটা দিয়ে আমার চোখে এক মুহূর্তের জন্য তাকালেন।
আমিও বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
উনার এক মুহূর্তের ঐ দৃষ্টিই আমাকে বলে দিচ্ছে উনি কতটা নিরুপায়।
আমার দিকে তাকিয়ে হয়তো উনি আমার চোখে জবাবদিহিতার কারন খুঁজছিলেন।
চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।
উনার প্রতি এখন অধিকার দেখাতে গিয়েও থেমে গেলাম।
বড্ড হাসি পাচ্ছে আমার, হ্যাঁ অবশ্যই আমার উনার প্রতি অধিকার আছে।
ভালোবাসায় একটা অধিকার থাকে, একটা জবাবদিহিতা থাকে; আমিও নিশ্চয়ই এর ঊর্ধে নই।

🥀

আবারো চোখের দেখার অপেক্ষাকে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যাচ্ছি আমি।
রেহান ভাইয়া রাস্তার এক পাশে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
ঐ দৃষ্টি বিদায়ের, একটু আফসোসের, কিছু কথা বলতে না পারার আফসোস আর হয়তো এক সমুদ্র কষ্টের।
রেহান ভাইয়াকে পেছনে রেখেই গাড়ি আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে চলছে।
গাড়ির সাইড মিররে তাকিয়ে তাকিয়ে রেহান ভাইয়াকে দেখছি আমি।
আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনার থেকে খুব দূরে চলে যাচ্ছি আমি।
মনে হচ্ছে উনাকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবো আমি।
মনে হচ্ছে রেহান ভাইয়াকেএবারের দেখাই আমার শেষ দেখা।
আমার বুকটা কেমন ছটফট করছে।
আচ্ছা এমন কেনো মনে হচ্ছে আমার?
উনাকে কি আমি সত্যিই হারিয়ে ফেলবো?

আস্তে আস্তে উনি ব্যস্ত শহরের মাঝে মিলিয়ে গেলেন।
দূর থেকে আর দেখা যাচ্ছে না উনাকে।
গাড়ি চলছে নিজ গন্তব্যে, কানে আমার হেডফোন।
বর্তমানের ভালো লাগার ঐ যে, ঐ গানটা

O khuda …
Bata de Kya lakreeron mein likha
Humne toh…
Humne toh bas ishq hai kiya

গানটা কেনো জানিনা ইদানিং প্রচুর ভালো লাগে আমার।
মনে হয়, আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি এই গানটায় ফুটে উঠেছে।

🥀
🥀
🥀

একদিন আমি আকাশ হবো।
এক বিশাল আকাশ,
বুকের জমিন আপনার নামে দলিল করে দেবো।
সাদা মেঘের ভেলা হয়ে আপনার মাথার উপর ছায়া হবো।
তারপর আমি একদিন প্রেমিক হবো।
একদিন হঠাৎ করেই আপনাকে ভালোবাসি বলে চমকে দেবো, একই শব্দে ছুঁয়ে যাবো আপনার হৃদয়ে।
দুটি চোখে সেদিন সুখের ছলছল জল হবো।
তারপর একদিন আমি বিশ্বাস হবো।
আপনার সকল আশা আপনার সকল ইচ্ছের কথার ঝুড়ির আমিই একমাত্র শ্রোতা হব।
চোখের কোনে লেগে থাকা ভালোবাসা হবো।
আয়নার সামনে বসলেই আমাকে মনে পড়ার মুখ হবো।
আপনার বুকের ভিতর হঠাৎ করেই জেগে ওটা অনাকাঙ্খিত এক সুখ হবো
তারপর একদিন আপনার অংশীদার হবো।
আপনার সুখ দুঃখের অংশীদার।
আপনার রাগ করে বায়না করার মানুষ হবো।
ঘুম থেকে জেগে দেখা মুখ হবো।
একদিন আপনার অনামিকা আঙুলের পূর্ণতা দেয়ার মানুষ হবো।
আমি একদিন ঠিক আপনারই হবো।

.
.
.

আজ রেহান ভাইয়ার সাথে আমার আংটি বদল হবে।
হাজারো প্রতিক্ষা শেষে আমি আজ সত্যিই উনার হবো।
অবশেষে আমার লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা পূর্ণতা পাবে, উনাকে আমি নিজের করে পাবো।
আজ উনি সত্যিই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে আমাকে নিজের জন্য বাবার কাছ থেকে চাইতে পেরেছেন।
উনার মুখের হাসিটা আজকে সব কৃত্তিম আলোকে হার মানিয়ে দিচ্ছে।
উনার মুখে তৃপ্তির হাসি; দেখে মনে হচ্ছে আজকে আমার চেয়েও উনি হাজারগুন খুশি।
আকাশি রঙের পাথরের কাজ করা পাঞ্জাবী পরে দাঁড়িয়ে আছেন আমার বাড়ির সবার সামনে।
উনার সাথে মিলিয়ে আমিও আমার নীল রঙা শাড়ীটা পড়ে নিলাম।
নিজেকে উনার জন্য সাজিয়ে নিলাম।
আজ তো উনার জন্যই সাজবো আমি।

পর্দার ফাঁক থেকে উনাকে একবার দেখে নিলাম।
ইশশ কি অধৈর্য্য মানুষ উনি, একটু অপেক্ষা করতে পারছেন না যেনো।
বার বার আমার রুমের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছেন।
মুচকি হেসে সবার সামনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম আমি।

রুম থেকে আমি বেড়িয়ে আসতেই কোথা থেকে রাফি ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।
আজ রাফি ভাইয়ার প্রতিও আমার কোনো অভিযোগ নেই।
উনাকে দেখলে এখন আর অস্বস্তি লাগে না আমার।
রেহান ভাইয়াকে পাওয়ার খুশিতে সব কিছু যেনো ভুলেই গেছি আমি।

হুট করেই রাফি ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে আমাকে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছেন।
আমি অবাক হয়ে একবার রাফি ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার রেহান ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।
রেহান ভাইয়া কেনো কিছু বলছেন না?
উনার তো উচিত রাফি ভাইয়ার হাত থেকে আমাকে ছিনিয়ে নেয়া, তাহলে উনি কেনো কিছু করছেন না?
বাড়ির বাইরে রাফি ভাইয়া আমাকে টেনে এনে গাড়ির সাথে সজোড়ে ধাক্কা দিলেন।
মাথায় হাত দিয়ে ব্যাথায় আমি কুকিয়ে উঠলাম।
ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙে যায়।

ঘুম ভাঙতেই মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছি আমি।
জানালার কাঁচে ধাক্কা লেগে কপালের এক সাইড প্রায় সাথে সাথেই ফুলে গেছে।

ওহ এটা তাহলে আমার স্বপ্ন ছিলো।
কেমন উদ্ভট স্বপ্ন দেখলাম আমি।
স্বপ্নেও আমি আপনাকে এতো কাছ থেকে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি।
এই স্বপ্ন মিথ্যে হোক, কোনো দিনও বাস্তবে পরিনত না হোক।

🥀
🥀
🥀

এই বুকে আরেকটি পৃথিবী নিয়ে প্রতিদিনের মতোই বেঁচে আছি আমি।
প্রায় দু’মাস পেরিয়ে গেছে অথচ আমার জীবনের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
সেই আগের মতোই রুটিন করে জীবন চলছে আমার।
ওমম চলছে বললে ভুল হবে, ঠিক চালিয়ে নিচ্ছি আমি।
পরীক্ষাটাও প্রায় হাতের কাছে চলে এসেছে আমার।
আজ বাড়ান্দায় বসে হাতে বই নিয়ে পড়ছিলাম ঠিক তখনই আমার পাশে….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here