#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৬

কাজী সাহেব সব কাগজপত্র গুছাচ্ছেন।আমি আর শুভ্র পাশাপাশি বসা।শান্ত, শান্তর বাবা বিশেষ করে মা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে।শুভ্রের বন্ধুবান্ধব শান্তকে ঘিরে রেখেছে।যাতে ও কোনো ঝামেলা করার সুযোগ না পায়।আচ্ছা!শুভ্র যে আমায় বিয়ে করছে,ওর বাবা মা কি রাজি আমায় তাদের পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে?আস্তে করে ফিসফিস করে বলি,,,

-আংকেল আন্টি কি আমায় মেনে নেবেন?
-কল দেম বাবা মা।আম্মু তোমায় বরণ করার জন্য বসে আছে।আম্মুই সব প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র গুছিয়ে দিয়েছেন।সো প্যারা নাই চিল।
-আপনি ভাইয়া সব আগে থেকেই জানতেন না?তাই দুজন এত প্যারা নাই চিল কাওয়া করছিলেন?
-তুমি যা ধরে নাও।

শুভ্র নিকাহনামায় সই করলো।উনার হয়ে গেলে আমি নিকাহনামায় সাইন করি।চিরদিনের জন্য আমরা একে অপরের হয়ে গেলাম।কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাদের। শুভ্র আমার দিকে চোখ মেরে বলেন,,

-প্যারা নাই চিল।

আমি হেসে দিই।আমার এই মুহুর্তটাকে চট করে ক্যামেরা বন্দী করে ফেলে শুভ্র বন্ধু রোদ।সবাই মিষ্টিমুখ করে।শুভ্র আমার হাতে একটা কাতান শাড়ি দিয়ে বলে,,

-আম্মু নিজে পছন্দ করে কিনেছে।যাও চট করে পরে সেজে আসো।ফটোশুট হবে।তুমি তো বলেছো বিয়েতে ছবি ভালো না হলে তুমি আবার বিয়ে করবে!

উপস্থিত সবাই হেসে দেয়।খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলছে।সবার মুখ হাস্যজ্বল।দাদি কেমন করে যেন মেনে নিয়েছে শুভ্রকে।শুধু শান্ত আর শান্তর মায়ের মুখে যেন রাজ্যের বিষন্নতা এসে গিয়েছে। শান্তর বাবাও মেনে নিয়েছেন।যা হওয়ার হয়ে গেছে।আমার সাথে শান্তর বিয়ে হলে আমরা কেউ ভালো থাকতাম না।উনি মেনে নিয়েছেন তা। আমি আর শুভ্র হেসে হেসে কথা বলছি। ঠিক সেই সময় রোদ,,,

-ভাইয়া ভাবিজী স্মাইল

বলে আমাদের মুহুর্তটাকে ক্যামেরা বন্দী করে ফেলে।

বিকেলের মিষ্টি রোদে আমরা ছাদে যাই ছবি তুলতে।আমার বাবা শখ করে কবুতর পোষেন।ছবি তুলার সময় হঠাৎ খেয়াল করলাম পাশে রেলিংয়ে একজোড়া পায়রা বসে আছে।হঠাৎ করেই পায়রা দুটোর মাঝখানে একটা কাক এসে বসে।শুভ্র কাকটাকে তাড়িয়ে দিয়ে আমায় বলে,,,

-আমি আর তুমি হচ্ছি পায়রা দুটো।আর শান্ত ব্যাটা ওই কাওয়া!

শুভ্রর কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিই।পারেনও উনি।শেষমেষ কাকের সাথে শান্তের তুলনা?শুভ্রের কথা শুনে বাকিরাও হেসে দেয়।কিছু ছবি তোলা হয়ে গেলে আমি আর শুভ্র ছবিগুলো দেখছিলাম।হঠাৎ করে শুভ্র বলে উঠে,,

-এই গুলো আপ দিবে না?
-হু,হ্যাশট্যাগ মাই হাবি।
-আগে বলতে।আমি মাস্ক পরে তুলতাম ছবিগুলো।
-ঘোড়ার ডিম এত ঢং করা লাগবে কেন?
-তোমার জিনিস অন্যকেউ দেখুক তুমি নিশ্চয়ই তা চাইবে না।

ভুল তো বলে নি তালগাছটা।আমার জিনিস অন্য কেউ দেখে তাতে শকুনের নজর দেবে এটা আমি কখনোই মেনে নেবো না।ভাইয়াকে দিয়ে ঘর থেকে একটা মাস্ক আনাই।তারপর রোদকে বলি ছবি তুলতে।ইনস্টায় আপ দেবো হ্যাশট্যাগ মিস্টার এন্ড মিসেস মাস্ক।


এসেছিলাম একা।ফিরছি জোড়ায়।আমার ক্লাস আছে।সন্ধ্যায়ই রওনা দিই।ভাইয়া একটা গাড়ি মেনেজ করে দেয়। সেই গাড়িতেই আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।রাজ্যের ক্লান্তি ভর করেছিলো আমার ওপর।ঠান্ডা হাওয়া পেয়ে আমার চোখের পাতা লেগে আসে।

হঠাৎ কারও উষ্ণ নিঃশ্বাসের স্পর্শে আমার ঘুম ভাঙে।চোখ মেলে নিজেকে শুভ্রের বাহুডোরে আবিষ্কার করলাম।আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।সারাদিনের ক্লান্তি তাকেও ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।আগে খেয়াল করিনি।আজকে খেয়াল করলাম তার চোখের পাপড়ি গুলো অনেক সুন্দর।আমার খুব হিংসা হচ্ছে।উনার চোখের পাপড়ি গুলো এত সুন্দর আর এদিকে মেয়ে হয়েও আমার চোখের পাপড়ি বিশ্রী।শুধু চোখের পাপড়ি কেন!আমার তো চোখও বিশ্রী।তবে একটা কথায় খুব হাসি পায়।উনি নাকি প্রথমে আমার চোখের প্রেমে পড়েছেন।এক বিশাল মায়ার সাগর নাকি দেখেছিলেন আমার চোখে শুভ্র।


কোনো এক কারণে এইবার রাস্তায় জ্যাম কম ছিলো।তাই তাড়াতাড়িই ঢাকায় পৌঁছাই।গিয়ে দেখি আন্টি আমায় পুত্রবধূ রূপে বরণ করার জন্য বসে আছেন।আমিই বোধহয় প্রথম মেয়ে যে রাত বারোটায় বধুবরণের ইতিহাস গড়লো!আমি ভাবতেও পারিনি এভাবে আন্টি আমায় আপন করে নেবেন।শিশির তো আমায় ম্যাম বলে দৌড়ে এসে শুভ্রের চোখ রাঙানি দেখে আমায় ভাবি বলে জড়িয়ে ধরলো!
শুভ্রের ঘরে গিয়ে দেখি ঘর পুরো গোয়ালঘর।বিছানায় জামা কাপড় পড়ে আছে।আন্টি আমাদের পেছন পেছন এসে বলেন,,,

-আমি গুছাতে গেলেই বলতো এগুলো তার বউ গুছাবে।নেও এবারর যখন বউ হয়ে এসেছোই আমার এই বাদরের দায়িত্ব তোমার।

আমি হেসে দিইই।কোনো রকমে খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি।

সকালে উঠে আন্টির কাছে কিছু সাহায্য করি।শুভ্রকে ছয়টা থেকে ডাকাডাকি করছি।সাড়ে সাতটা বেজে গেছে কোনো হুশ নেই তার।মরার মতো ঘুমচ্ছেন।নয়টা থেকে ক্লাস শুরু। আচ্ছা!সিনেমা সিরিয়ালে তো দেখেছি বউ জামাইকে চুলের পানির ছিটায় উঠায় ঘুম থেকে।আমি তো এখন উনার বউ।সেই হিসাবে উনাকে আমি চুলের পানি ছিটায় ঘুম থেকে উঠাতেই পারি!যা ভাবনা তাই কাজ!চুলের পানির ছিটা দিই উনার মুখে।পানির স্পর্শে উনার ঘুম ভাঙে।ঘুমের ঘোরে বলেন,,

-উফফ আম্মু উঠতেছি তো!
-আমি মেঘ।উঠুন।ভার্সিটি যেতে হবে।ক্লাস আছে।

উনি উঠে বাথরুমে যান ফ্রেশ হওয়ার জন্য।আন্টি মানে আমার শ্বাশুড়ি মা ইতিমধ্যে চিল্লা চিল্লি শুরু করে দিয়েছেন।

-বিয়ে করে বউ আনলো দুদিন পর বাচ্চার বাপ হবে তাও নবাব জাদার ঘুম ভাঙে না।

শুভ্র ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে আমি কাপড় চেঞ্জ করে নিই।সে ফ্রেশ হয়ে বের হলে দুজন একসাথে খেতে বসি।খাওয়া হয়ে গেলে আমি ঘরে গিয়ে রেডি হই বের হওয়ার জন্য।আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের পাশে শুভ্রর প্রতিবিম্বকে দেখতে পাই।শুভ্র এসে আমার পেছন দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে চুল ঠিক করতে লাগেন।আয়নায় প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

-শর্ট মেয়ে বিয়ে করায় ভালোই হয়েছে।কি সুন্দর আয়নায় দেখা যায়।
-খাটো বলে অপমান করলেন?
-অহংকার করলাম।কারণ আমার হার্টবিট মাপার যন্ত্র আছে।

কথাটা বলেই উনি আমায় জড়িয়ে ধরেন।প্রশান্তির শ্বাস ফেলে বলেন,,

-কি শুনতে পাও?
-ধিক ধিক ধিক ধিক ধিক ধিক
-উহু,মেঘ মেঘ মেঘ মেঘ মেঘ

বলে তিনি আমার কপালে চুমু দেন।আমি চোখ বন্ধ করে তা সাদরে গ্রহণ করি।হঠাৎ করেই ঘড়ির কাঁটায় চোখ যায়।দেরি হয়ে গেছে।নিজেকে ছাড়িয়ে বলি,,,

-রোমান্স পরে কইরেন।ক্লাস আছে।যেতে হবে।চলুন বের হই।

আমি কোনো রকমে চুলটা হাত খোপা করে ব্যাগ নিই।উনি মাস্ক পরে হাত ঘড়ি পরতে পরতে বের হন।


ক্যাম্পাসে গিয়েই দেখি এশা ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমায় দেখে দৌড়ে আসে।

-কিরে মিসেস শুভ্র?
-তোরা আগে থেকেই সব জানতি।আমায় বলিস নি কেন?
-শুভ্র ভাইয়া না করেছিলো।তা কিছু খাওয়াবি না?বিয়ের দাওয়াত তো খাইতে পারলাম না।
-ক্লাস শেষে খাওয়াবো নি।
-আচ্ছা আমি যাই তাহলে।ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে দেখা হচ্ছে।

এশা চলে যায়।আমি ক্লাসে যেতেই ফুলের এক গাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হই। কিভাবে বিয়ে হলো, কাহিনী কী ব্লা ব্লা।এত বড় কাহিনি কি আর এই অল্প সময়ে বলা যায়?ওকে বলি কোনো একদিন সময় করে সব বলবো ওকে।

ক্লাস শেষ করে যাই ক্যান্টিনে।শুভ্রকেও বলি আসতে।এশা আর নাবিল আগে থেকেই ওয়েট করছিলো আমাদের জন্য।শুভ্র মিনিট দশেক পর আসে।এই ব্যাটা সব সময় লেট লতিফ।শুভ্র সবাইকে ট্রিট দেয়।

-তুই তো ছক্কা মাইরা দিলি মেঘ।দেড় বছর প্রেম করেই বিয়ে করে নিলি!
-ঠোঁটের কাছে তিল আছে দুজনেরই।বুঝতে হবে তো!
-শুভ্র ভাইয়ারও আছে?
-জ্বী দুজনেরই আছে।
-দুলাভাইয়ের মুখ দেখলাম না!
-আমার জিনিস শুধু আমিই দেখবো।অন্য কারও দেখার প্রয়োজন মনে করি না।
-বেশিই হয়ে গেলো না মেঘ?আর মানুষের জামাই নাই।
-জামাই আছে তবে শুভ্র নাই।ওটা শুধু মেঘের।

আমি বলার আগেই শুভ্র এশাকে উত্তর দিয়ে দেয়।শুভ্রের কথা শুনে এশা ভেংচি কাটে

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here