#ইস্ক
#সাদিয়া
৯
তিতিল দরজা খুলতেই ইয়াদ দাঁত কিটে দুইপা এগিয়ে গেল। দ্রুত এগিয়ে আসায় তিতিল তাল সামলাতে না পেরে এক পা পিছনে ফেলল। ইয়াদ গিয়েই তিতিলের বাহু চেঁপে ধরেছে। ভয়ে মূর্ছে গেছে মেয়েটা। দাঁত কটমট করে ইয়াদ বলল,
“হাউ ডেয়ার ইউ। এত সাহস কোথা থেকে পাও তুমি?”
“….
“উত্তর দাও। আমাকে এড়িয়ে চলার সাহস আসে কোথা থেকে তোমার? আর এসবেরই বা কি মানে?”
“…
“কথা বলছো না কেন? জবাব দাও। মা তোমাকে কি বলে গিয়েছিল? আর তুমি..”
রাগে কি করবে না করবে ইয়াদ বুঝে উঠতে পারছে না। বাহু ধরে ঝাঁকাতেই তিতিল ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করল। ইয়াদ কপাল কুঁচকে তাকাল তিতিলের দিকে। চোখ মুখ বন্ধ করে আছে মেয়েটা। গাল আর নাক টাও লাল হয়ে এসেছে। খেয়াল করল মেয়েটার চোখের কিনারায় একবিন্দু পানির দেখা মিলেছে। ভেতর থেকে যেন সে ফুপাচ্ছে। ইয়াদ ধ্যান ধরা নয়নে তাকিয়ে আছে ওই মুখপানে। রাগের মাথায় বাহুতেও সে বেশ জোরেশোরে চেঁপে ধরেছিল বলে হাত ঢিলে করে আনল কিন্তু ছাড়ল না। তিতিলের ওমন মুখশ্রী তার মনে আঁচড় কাটছে। খুব ভালো লাগছে তাকিয়ে থেকে দেখতে। তিতিল আস্তেআস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে যখন দেখল ইয়াদ তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তখন শুকনো ঢোক গিলল সে। কাঁপা ঠোঁট গুলি দিয়ে বলল,
“আ আমি ব্যথা পাচ্ছি।”
ইয়াদের কোনো ভাবান্তর হলো না। সে মোহভরা নয়নে দেখছে তিতিল কে। তিতিলের ওই কাজলবিহীন চোখ আর হাল্কা লাল আভা যুক্ত কাঁপা ঠোঁট গুলি তাকেই কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। ইয়াদ ঘোর লাগানো দৃষ্টি দিয়েছে তিতিলের দিকে। তিতিল ইয়াদের চোখের দিকে তাকাল এলোমেলো দৃষ্টি নিয়ে। বাস্তব দুনিয়ার কিছুই তার মাথায় আসছে না। ইয়াদ কি ভেবে হুট করে নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে তিতিলের ঠোঁট স্পর্শ করল। হঠাৎ সারা শরীর কেঁপে উঠল তিতিলের। ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে নিল নিজেকে। ধাক্কা দেওয়ায় ইয়াদ এক পা পিছিয়ে গেল। কিন্তু তবুও সে তখনো নিজের ঘোর থেকে ফিরতে পারছিল না। নরম ঠোঁট গুলি তার শিহরণ জাগিয়ে দিয়েছে। এমন অনুভূতি কখনো সে অনুধাবন করেনি। কখনো কোনো মেয়ের ঠোঁট এতটা কাছ থেকে স্পর্শ করা হয়নি তার। নেশাক্ত চোখে তখনো সে তিতিলের দিকে তাকিয়ে ছিল। দেখতে পেল মেয়েটা খুব ঘাবড়ে গেছে। বিব্রত দেখাচ্ছে তাকে। নিশ্বাসের গতি বেড়ে গিয়েছে মেয়েটার। তিতিল তখনো থরথর করে কাঁপছিল। ইয়াদ তাকে শান্ত করতে একটু এগিয়ে যেতেই তিতিল দুই কদম পিছিয়ে গেল। ইয়াদ বলল,
“ডোন্ট ওরি তিতিল। এতটা ঘাবড়ানো কিছু নেই।”
“….
“ওকে ওকে আ’ম সরি। শান্ত হোও তুমি।”
তিতিল বিছানার এক কোণায় দাঁড়িয়ে কাঁপছে। ভয়ে না অন্যকিছুতে বুঝতে পারছে না। কিন্তু শরীর টা নিস্তেজ লাগছে। আড়চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে সামনের চুল গুলি কানে গুঁজে দিল। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। তার রেশমি অবাধ্য চুল নিজের গন্ডি পেরিয়ে বাহিরে গেল। ইয়াদ দাঁড়িয়ে দেখছিল চুলের কান্ড।
“কি হয়েছে?”
দুজনেই চমকে উঠল। তাকিয়ে রেহেলা বেগম কে দেখতে পেয়ে ইয়াদকে খানিক ভীত দেখাল। দুজনেই চুপ করে আছে দেখে তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে ইয়াদ?”
“মা আমি..”
ইয়াদের কথা না শুনে রেহেলা বেগম তিতিলের কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে তিতিল?”
“….
“কিরে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”
তিতিলের কাছ থেকে জবাব না পেয়ে রেহেলা বেগম ছেলেকে বললেন,
“তুই কিছু করেছিস ওকে?”
ইয়াদ খুব অবাক হলো মায়ের কথায়। বলল,
“মা তুমি এসব কি বলছো? আমি কিছু করিনি ওকে। জিজ্ঞেস করো।”
তিতিল একবার চোখ তুলে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে নামিয়ে নিল। নিজেকে শান্ত করে বলল,
“আম্মা এমনিতেই আমার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।”
“ডাক দিবি না কাউকে?”
“….
“ইয়াদ তুই তোর রুমে যা। আজ আমি তিতিলের সাথেই থাকি। কাল থেকে না হয় দুজন এক সাথে থাকবি।”
কেউ কিছু বলল না। মুখ গোমড়া করে ইয়াদ বের হয়ে গেল। তিতিল দরজার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
“কিরে কি হয়েছে?”
“কি কিছু না আম্মা।”
“চল ঘুমাতে যাবি।”
“হুম” বলে হাসার চেষ্টা করল তিতিল।
—-
তিতিল তখন রান্না করছিল দুপুরের। একটু আগেই ইয়াদ বাদে সবাই ব্রেকফাস্ট করে গেল। তিতিল দ্রুত রান্নার কাজ করছে। এমনিতেও এত দেরি হয় না তার। কারণ ফরিদা আন্টি হাতে হাতে সব কাজ করে দেয়। রান্নার সময় সামান্য একটু কাজও যে কতটা সময় বাঁচিয়ে দেয় একজনের তা যে রান্না করে সে’ই বুঝে। সব একবারে তৈরি করে তিতিল রান্না বাসালে এতটাও দেরি হয় না তার। চুলায় তরকারি বসানো। নাড়াচাড়া করছিল যেন লেগে না যায়। হঠাৎ কারো কথায় একদম চমকে গেছে। পিছন ফিরে তাকিয়ে ইয়াদ কে এতটা কাছে দেখে আরো ভয় পেয়ে গেল তিতিল। পিছিয়ে যেতে চাইলে ইয়াদ দ্রুত তার পিঠে হাত রেখে নিজের দিকে এগিয়ে আনে।
“ওই মেয়ে এতটা কেয়ারলেস কেন কাজে? এখনি তো গায়ে আগুন লাগত।”
তিতিল হা করে তাকিয়ে দেখছে ইয়াদ কে। তিতিলের ওমন চাউনি দেখে ইয়াদ ঠোঁট টিপে হাসল। তিতিল থতমত খেয়ে খানিক দূরে সরল। ইয়াদ তিতিলের দিকে ছোটছোট চোখে তাকালো। কোমরে ওড়না পেছানোতে মেয়েটা কে ভয়ংকরী সুন্দরী লাগছিল। তিতিল কোমর থেকে ওড়না খুলে মাথা ঢেকে নিল। সাথে সাথে ওই অবাধ্য চুল গানের পাশ থেকে এসে মুখ ঢেকে দিল। এবার বিরক্ত হলো ইয়াদ।
“মেয়ে তোমার ওই দুষ্ট চুল গুলি কে মন চায় নিজ হাতে সরিয়ে দেই।”
মনে মনে আওড়ালো কথাটা ইয়াদ। হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে মন চাইলেও সে তা করল না। তিতিল আবার কি ভেবে বসবে। কাল ঘোরে ঠোঁট স্পর্শ করতেই মেয়ের শরীরে কি কাঁপুনি! ইয়াদ এক পা এগিয়ে গিয়ে খানিক নুয়ে গেল। ফু দিয়ে তিতিলের মুখ থেকে চুল গুলি সরিয়ে দিল। তিতিল সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ওড়না খামছে ধরল। থেমে থেমে হৃদপিন্ড শব্দ করছে। ভেতরে রুরু করা এক অনুভূতি হচ্ছে তার।
সাথেসাথে চোখে হাত দিল হিমা। আঙ্গুল ফাঁক করে আবার দেখল ইয়াদ আর তিতিল কে। মুখে হাসি ফুটে উঠেছে তার। রোমান্টিক সিন দেখলেই তার কেমন যেন লাগে। রোমান্টিক সব মুভি মনে হয় তার দেখা। হিমা ভাই আর ভাবির এমন সিন দেখে মিস করতে চাইছে না। সে আঙ্গুল আরেকটু ফাঁক করল সবটা দেখার সুবিধার্থে। হঠাৎ মাথায় চড় পরায় ভূত দেখার মতো চমকে উঠল মা কে দেখে। কিছু না বলে ভু করে দৌড় দিল। নিচে তাকিয়ে রান্না ঘরে ইয়াদ আর তিতিল কে এক সাথে দেখে মুচকি হেসে তিনিও চলে গেলেন। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন ‘ইয়াদের মনে যেন তিতিলের জন্যে ভালোবাসা জন্ম হয়।’
—-
রাতের খাবারের সময় ইয়াদ ফোন দেখতে দেখতে নিচে এলো। খাবার দেখে বলল,
“মা আমি চিকেন স্যুপ আর লাচ্চি খাবো।”
পাশ থেকে ইনা বলে উঠল,
“কিন্তু ভাই ও গুলি তো..”
“আপু আমার খেতে ইচ্ছা লাগছে।”
অবশেষে তিতিল কে রান্নাঘরে যেতে হলো স্যুপ আর লাচ্চি বানাতে।
ইয়াদ তখন ফোনে মুখ রেখেই বলল,
“মা রান্না শেষ হলে ওগুলি আমার রুমে দিয়ে আসতে বলো। আমার কাজ আছে।
“ঠিক আছে তুই যা। তিতিল তোর রুমে দিয়ে আসবে।”
ইয়াদ চুপচাপ চলে গেল। সিঁড়ির শেষ মাথায় গিয়ে ইয়াদ ঘাড় ঘুরিয়ে নিচে তাকাল। তিতিল তখন গোসত সিদ্ধ করতে ব্যস্ত। ইয়াদ বাঁকা হাসল। মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“আজ দেখব আমার থেকে কি করে পালাও তুমি তিতিল।”
চলবে♥
(ইয়াদ এতটা খারাপ না😒 আমার খুব পছন্দের ও🖤🤎)