#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(১৩)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
আর্মি মেয়ে গুলো ঘুরে দাঁড়িয়ে মুখ চেপে হাসছে। স্বামী স্ত্রী দুজন একে অপরকে পেয়ে আশেপাশের কথা যেন ভুলেই বসেছে। একে অপরকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।
ইসরাক দুষ্টু হেসে যখন বললো,
-“তাহলে তো আমাকেও দূরে সরে যেতে হয়!
এই কথা শুনে তাকিয়া আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইসরাক কে বললো,
-“আপনার মাথায় একটাও চুল অবশিষ্ট থাকবে না কিন্তু! মিষ্টার ভ’ন্ড।
ইসরাক ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হেসে বললো,
-“আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে আমি একজন আর্মি অফিসার।সো যাদের দেখে ভয় পেয়ে আমাকে এভাবে জড়িয়ে আছেন আমিও তো তাদেরই একজন।তাই তো দূরে যেতে হবে।
-“কে বললো আপনাকে এসব?
ইসরাক ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে বললো,
-“কোন সব?
-“এই যে বললেন,আমি ওদের ভয়ে আপনাকে জড়িয়ে আছি। আমি তো..
এতটুকু বলে থেমে গেল তাকিয়া। ইসরাক আড়ালে ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে রেখে তাকিয়া কে সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“আমি তো কি?ধানি লঙ্কা!
তাকিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। ইচ্ছে করছে এক ছুটে পালিয়ে যেতে। তবে যদি এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ইসরাক তার সবুজিনীর অবস্থা বুঝতে পেরে তার ইচ্ছা হলো আরো লজ্জায় ডুবিয়ে দিতে তার সবুজিনী লজ্জাবতীকে ।আর তাই ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় তাকিয়ার গোলাপী রাঙা ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে!
স্বামী স্ত্রীর এহেন কান্ডে খুক খুক কাশি শুরু করে মেয়েগুলো। এতে করে হুঁশ ফিরে ইসরাক এর। ছেলে হয়েও খানিকটা লজ্জায় পড়ে ইসরাক। সত্যি বলতে এই মুহূর্তের মতো করে কখনোই তার সবুজিনী কে এমনি করে পায়নি সে।তাই আশেপাশের সবকিছু ভুলে বসে।
ইসরাক শুকনো কাশি দিয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“মিস তান্না,রাহি,মুনতাহা আর নিশা আপনাদের অনেক ধন্যবাদ এত কষ্ট করে আমার কথা এখানে আসার জন্য। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমার স্ত্রীর পাগলামো? যাইহোক আবারো বলছি ধন্যবাদ আপনাদের।
মিস তান্না বললো,
-“স্যার এভাবে বলবেন না প্লিজ। এখানে এসে ম্যামের সাথে পরিচিত হয়ে আমাদেরও অনেক ভালো লেগেছে। আমি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা এবার ক্যাম্পে ফিরে যেতে পারি?
সাথে রাহি মুনতাহা আর নিশা ও একই কথা বললো। তাদের কথা শুনে তাকিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। স্বাগতিক করে বললো,
-“আপনারা চলে যাবেন? আমাদের বাসায় চলুন প্লিজ?
-“কিন্তু ম্যাম আপনি তো আমাদের ভয় পাচ্ছেন! তাহলে কি করে যাই বলেন?
তাকিয়া কাছে এগিয়ে যেয়ে বললো,
-“সরি আসলে তখন হুট করে আপনাদের দেখতে পেয়ে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সত্যিই আমি আপনাদের অনেক পছন্দ করি সেই ছোট্টবেলা থেকে। রাস্তায় বের হলে কখনো যদি ডিফেন্সের লোকজনকে দেখতে পেতাম তাহলে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হাঁটতাম এর ফলে কত শতবার চেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। এজন্য আম্মু অনেক বকা দিতো আমাকে। আমি তো আমি শুনতামই না আম্মুর কথা। যাই হোক আমাদের সাথে আমার শ্বশুরবাড়ি তে ঘুরে আসলে খুব খুশি হব আমি।
রাহি আর মুনতাহা উৎফুল্ল হয়ে বললো,
-“আমরা যদি যেতে পারতাম তাহলে আমরা অনেক খুশি হতাম ম্যাম। আমরা ডিউটিতে আছি আমাদের ছুটি নেই ম্যাম। এই সময়টাতে কাজ ছিল না বলে এখানে আসতে পেরেছি তাছাড়া স্যারের অর্ডার অমান্য করার সাধ্য নেই তাই আসা। তবে আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুবই ভালো লাগলো ম্যাম।
মেয়ে গুলো অল্প বয়সের দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তাইতো অনেকটা মিশুক মনে হচ্ছে। যদিও বাহিরে থেকে অনেকটা কঠিন মনে হয়। ইসরাক তাদের কথার মাঝে বলে ওঠে,
-“যেতে যখন হবেই তখন সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই। মিস তান্না,রাহি,মুনতাহা আর নিশা আপনাদের নিমন্ত্রণ রইলো। কখনো সময় পেলে আমাদের বাসায় আসবেন।
মেয়ে গুলো বিনিময়ে হাসি উপহার দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল। এত খানিকটা মন খারাপ হলো তাকিয়ার।
________
বাসায় ফিরে পোশাক পরিবর্তন করেন তাকিয়া তাকে দেওয়া রুমে বসে আছে। টুম্পা কিছু ফলমূল নিয়ে আসে তাকিয়ার জন্য। খেতে খেতে তাকিয়া উসখুস করছে ইসরাক কোথায় আছে জানার জন্য। টুম্পা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো,
-“আপনার উনি বড়দেরকে বোঝাতে ব্যস্ত আছেন। যে কাণ্ড করে দুজন বিয়ে করেছ ভাবা যায় এগুলা? একদম সিনেমাটিক ব্যাপার-স্যাপার।
এই বলে টুম্পা হাসছে,তাকিয়া বললো,
-“তুমি কিন্তু লজ্জা দিচ্ছো আমাকে ভাবী।
একটু পর আরিসা আর আনিসা ও হাজির হয়ে যায় এই ঘরে। তারা বড়দের বকা খেয়ে নীরবতা পালন করছে। এখনো যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তাদেরই সামনে তাকিয়া আহত হয়েছে। তাকিয়া ওদের দুজনকে কাছে নিয়ে বললো,
-“বড়রা আমার জন্য বকেছে বলে রাগ করে আছো তাই না? কি থেকে কি হয়ে গেল আমি না বুঝতেই পারিনি। সরি আমার কিউট ননদিনী গুলো। তোমরা এভাবে মনমরা হয়ে থাকলে আমার মোটেও ভালো লাগেনা।
আরিসা আর আনিসা নিমিষেই হেসে দিল। ওরা এতটাই ভালো যে এটুকু কথাই সব ভুলে গেল। একেই বলে স্বচ্ছ মন। স্বচ্ছ মনে বেশিক্ষণ রা’গ অভিমান জমিয়ে রাখা যায় না।
_____
বসার ঘরে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বড়রা সবাই রয়েছে এখানে। সবার কাছে বর্তমানে একজন আ’সামি হিসেবে উপস্থিত আছে ইসরাক মুনতাসীর। সবার একই কথা, বিয়ে যদি করতেই হয় তবে পরিবারকে জানানো হলো না কেন? না জানিয়ে এত বড় একটা কাজ কি করে পারলো ইসরাক? যেখানে পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের বিশ্বাস ভরসার পাত্র ইসরাক।তার জন্য গ্রামের মানুষজন কটুক্তি করে কথা বলতে ছাড়েনি। এটা কি আদৌও প্রাপ্য ছিল?
সাহারা মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদছেন।তার কলিজার টুকরা ইসরাক মুনতাসীর।সে যে সবসময় বলতো বড্ড বেশি ভালোবাসে তার মাকে এই কি তার নমুনা?যদি এতই ভালোবাসে তবে এতো বড় একটা কাজ কি করে পারলো লুকিয়ে করতে?আজ তার অভিমান পাহাড় সম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতো সহজে মনে হয় না কাটবে।
ইসরাক বার বার তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইছে। কিন্তু বড়রা মানতে নারাজ। তখন ইসহাক ব্যাপারি বললেন,
-“কি হয়েছিল শুনি?যার কারণে এমনটি করলি?খুলে বল সবটা শুনে তারপর একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাইবো।
ইসরাক মাথা নিচু করে বললো,
-“আমি বিয়ের প্রস্তাব রেখেছিলাম কিন্তু উনি তার নাকুজ করে দেন। তারপর তাকিয়ার মা হুট করে ওর বিয়ে ঠিক করেন।অথচ তাকিয়া বিয়েতে রাজি ছিল না।
তারপরের ঘটনা সবটা ক্লিয়ার করে বললো ইসরাক।সবটা শুনে সবাই নিরব হলেও জামাল ব্যাপারি বললেন,
-“না হয় বিয়ের পরেই কইতে? এত্ত গুলা দিন লুকাইয়া রাখলা ক্যামনে?ভাবলে না এতে আমাগো বদনাম রটাইতে মানুষ দুই বার ও ভাববো না?
এর মধ্যে লাবিবা ফুরুন কেটে বললেন,
-“আমার ছেলেডারে শুধু শুধু তোমারা কাঠ গড়ায় দাঁড় করাও এখন কি করবে?
লাবিবা’র কথায় খলিল ব্যাপারি রে’গে গেলেন। বললেন,
-“তুমি মুখটা বন্ধ রাখবা?তোমার পুত্র কতোটা ভালা এডা বেক্কে (সবাই)জানে। তোমার আর তার অয়ে ঢোল পিটাইতে হইবো না।
এদিকে লাবিবার কথায় আরো অপমানিত বোধ করে জামাল ব্যাপারি উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,
-“আমি এই বিয়া মানি না!
তারপর বড় বড় পা ফেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেলেন।তার সাথে সাথে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও চলে গেলেন নিজের রুমে। শুধু বসে আছে ইসরাক মুনতাসীর।সে গভীর ভাবনায় মশগুল হয়ে আছে।ভাবছে এবার সময় এসেছে এক ঢিলে দুই পাখি মা’রার!এতে ভালো বহি খারাপ হবে না ইনশা আল্লাহ।
সুখী চায়ের কাপ গুলো গুছিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরাক জিজ্ঞাসা করলো,
-“সুখী তোর ভাবী কোথায়?
-“বড় ভাবী না মেইজ্জা ভাবী?
সুখীর সাথে সাথে ইসরাক ও বলে বসে মেইজ্জা। তারপর আবার ঠিক করে বলে,
-“মেজ ভাবী?
-“ভাবীরা আফারা বেক্কে মিল্লা গপ্প করতাছে (সবাই মিলে গল্প করতেছে)
-“অহ আচ্ছা ঠিক আছে।
_______
ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে বারোটার উপরে বাজে। ইসরাক বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করেও চোখে ঘুম আসেনা।এক অদম্য ইচ্ছা করছে তার!ধরা পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো বেগ পেতে হবে। তবুও একটা রিস্ক নেওয়াই যায়।পরের টা পরে দেখা যাবে ক্ষন।
নিজের রুম থেকে বের হয়ে লম্বা বারান্দায় এসে দেখলো সবসময়ের মত বসার ঘরে আলো জ্বলছে। সেই আলোর কিছু অংশ বারান্দায় এসে আঁধার কাটিয়ে দিয়েছে। ইসরাক খুব সাবধানে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কাউকে দেখা যায় কিনা?যখন কাউকে দেখলো না তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। একটা রুমের বাইরে এসে দরজায় টোকা দিল!বেশ কয়েকবার দেওয়ার পরও দরজা খোলা হচ্ছে না।এতে খুব বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে ফিরে যাচ্ছে ইসরাক। তখন কানে দরজা খোলার আওয়াজ পেল। ঘুরে দেখলো তার সেই কাঙ্খিত ব্যক্তি এদিক ওদিক তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছে কে দরজায় কড়াঘাত করলো? ইসরাক আবার ফিরে দরজার সামনে আসে। ইসরাক কে দেখতে পেয়ে তাকিয়া আপনি এখানে বলতে যাবে তার আগেই ইসরাক মুখ চে’পে ধরে পাজা কোলে তুলে নিল!অরুনলোচন আঁখি মেলে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে তাকিয়া। ইসরাক ঠোঁট চেপে হেসে তার রুমের দিকে এগিয়ে গেল।….
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।