আকাশে অনেক তারা – ৯
———
”লেখার বিয়ে হয়ে গেছে। সে এখন শশুর বাড়িতে আছে।”
”অসম্ভব! আপনি মিথ্যে গল্প সাজাচ্ছেন।”
মুহিব হাত ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে। মাথা দু’দিকে ঝাঁকিয়ে নিজের অবিশ্বাস জাহির করছে সে। খুব বেশি বিকার নেই এতে জনাব আশরাফের চেহারায়। তিনি স্বাভাবিকভাবেই মুহিবের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে জবাব দিলেন,
”আমি তোমাকে মিথ্যে বলবটা কেন? সত্যিই লেখার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এখন তাঁর শশুর বাড়ি থেকেই ফিরছি।”
মুহিব সংকুচিত চোখে তীক্ষ্ম নজরে তাকাল জনাব আশরাফের দিকে। উনার দৃঢ়চিত্তে মুহিব একটু নিভল।
বুকটা ঢিপঢিপ করছে তাঁর। সত্যিই কি লেখার বিয়ে হয়ে গেছে? এক মূহুর্তের জন্য ফুসফুসটা যেন বেইমানি করল তাঁর সঙ্গে। পরক্ষণে, বুক ভরে অম্লজান সেবন করে সোফায় বসে পড়ল হাত-পা ছড়িয়ে। মাথাটা নিচু করা। পুরো শরীর অসার অসার লাগছে। মুহিবের অবস্থা দেখে বিচলিত হলেন জনাব আশরাফ। তিনি নিজের জায়গা থেকে উঠে গিয়ে চিন্তিত হয়ে মুহিবের কাঁধে হাত রাখলেন,
”আর য়ু অল রাইট মুহিব?”
মুহিব ধীরে নিজের মুখটা উপরে তুলল। চাহনি মলিন। ভগ্ন গলায় আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
”আপনি মিথ্যে বলেছেন?”
এক মূহুর্ত নিশ্চুপ থেকে জনাব আশরাফ শক্ত গলায় জবাব দিলেন,
”না!”
মুহিব চাহনি নামিয়ে নিল। অক্ষিকোটরে স্বচ্ছ পানি টলমল করছে। আক্ষেপটা যেন সুবিশাল আকাশের সীমানা অতিক্রম করে মহাকাশ ছুঁয়েছে।
___________________________________
কিছুর শব্দে মুখ তুলল মুহিব। কাঁচে কাঁচে লাগার শব্দ। সম্মুখে টি-টেবিলে তাকিয়ে লেখার বাপের দিকে চাইল। তাঁর চোখের পাপড়ির ভিড়ে বিস্ময়। স্মিত হেসে তিনি মুহিবের মুখোমুখি বসে পড়লেন। মুহিব একবার জনাব আশরাফের দিকে তাকাচ্ছে তো সামনে রাখা ব্রান্ডেড পানীয়ের বোতলের দিকে তাকাচ্ছে। মুহিবের নজর পরোখ করে তিনি বললেন,
”লেখা নেই। দু’টো পেগ নিতেই পারো।”
মুহিব কোনো জবাব দিল না। লেখার নাম উচ্চারণে তাঁর চোখের পাতা নড়ল।
আশরাফ সাহেব দু’টো গ্লাসে পানীয় ঢেলে নিয়ে সোডা মিশিয়েছেন তাতে। মুহিব চুপচাপ দেখছে বসে। কেমন নির্জীব লাগছে সবকিছু তাঁর কাছে। গ্লাস দু’টো একটু নেড়েচেড়ে পানীয় আর সোডা মিশিয়ে একটা গ্লাস মুহিবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি। একটু হিচখিচ করে শেষে হাতে নিল মুহিব। লেখার বাবা ইতোমধ্যে কয়েক সিপ নিয়েছেন। মুহিব শুধু গ্লাসটা দেখেই যাচ্ছে। এক চুমুকও দেয়নি।
”ইয়াং ম্যান, কি ভাবছ?”
অন্যমনস্কভাব থেকে সম্বিত ফিরতে মুহিব জবাব দিল,
”হুঁ!”
”জাস্ট ড্রিংক! ডোন্ট থিংক এবাউট এনিথিং এলস।”
মুহিব বেশি ভাবনাচিন্তা না করে গ্লাসে ঠোঁট বসাল। সে এক চুমুকে প্রায় এক তৃতীয়াংশ শেষ করে ফেলেছে। পরের চুমুকে পুরো গ্লাস খালি। লেখার বাবাকে পরের পেগ বানিয়ে দিতে হল না। সে নিজেই এক ভাগ সোডা আর তিনভাগ পানীয় মিশিয়ে ইচ্ছেমত তৈরি করে নিল।
”কি করছ তুমি? নেশা হয়ে যাবে তো!”
মুহিব না তাকিয়েই আক্ষেপ মিশ্রিত গলায় বলল,
”হোক!”
_________________________________
টেবিলে থাকা দু’টো কাঁচের বোতলই প্রায় খালি। মুহিব সোফায় চোখ বন্ধ করে টালমাটালভাবে পড়ে আছে।
লেখার বাবার চোখও ঢুলুঢুল। ঝিমুনি দিচ্ছেন তিনি। প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই পানীয় খাওয়া হয়ে গেছে।
মুহিব বিরবির করছে শুয়ে শুয়ে। তিনি কৌতূহলবশত একটু কানটা এগিয়ে দিলেন। শোনা যাচ্ছে না মুহিব কি বলছে! আরো একটু এগিয়ে এলেন। আবছাভাবে শুনতে পেলেন,
‘আপনি মিথ্যে বলছেন! লেখা আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারে না। লেখার বিয়ে হয়নি! হয়নি! মিথ্যে বলছেন আপনি।’
মুহিবের স্বর অদ্ভুত শোনাচ্ছে। সেটা তিনি নেশা করায় নাকি অন্যকারনে বুঝে উঠতে পারছেন। আরো এগিয়ে আসেন তিনি। মুহিবের চোখ বদ্ধ মুখের দিকে নেত্র দৃষ্টি ফেলেন তীক্ষ্ণভাবে। ছেলেটার চোখেমুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ। তিনি নিজের ডান হাতটা দিয়ে চাপড় মারলেন মুহিবের গালে। বিকার নেই তাঁর আচরণে। সে বিরবির করছে অবিরাম। একটু শক্তি দিয়ে বেশ ক’বার দিলেন এবার। মুহিব ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। অস্ফুটস্বরে বলল,
”কে, কে? লেখা?”
কয়েক মূহুর্ত চুপ করে রইলেন আশরাফ সাহেব। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
”তুমি কি লেখাকে ভালোবাসো মুহিব?”
মুহিবের কোনো জবাব পাওয়া গেল না তৎক্ষনাৎ। সে কিছুক্ষণ পরেই বন্ধ চোখদুটো পাতা ঝাপটে খুলতে চেষ্টা করল। অবশেষে, সফল হয়ে লেখার বাপের মুখে ঝাপসা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জড়ানো গলায় বলল,
”লেখা তুই ভীষণ আদুরে!”
জবাব দিয়েই চোখ মুঁদল ফের। আশরাফ সাহেব সন্তুষ্ট হলেন না মুহিবের জবাবে৷ তিনি ফের খোঁচাতে লাগলেন তাঁকে।
”পছন্দ কর না সত্যিই তুমি লেখাকে!”
মুহিব মুখভঙ্গিতে বিরক্ত ভাব ফুঁটিয়ে জবাব দিল,
”লেখা খোঁচাবি না খবরদার!”
”লেখার বিয়ে হয়ে গেছে। এখানে নেই লেখা।”
মুহিব এদিকসেদিক হাত হাতরে উঠে বসার চেষ্টা করে।
না পেরে কাঁদোকাঁদো গলায় চোখ খুলে চারপাশে চেয়ে বলে,
”লেখা নেই। নেই। আই মিস হার!”
”আমিও মিস করছি তাঁকে!” দীর্ঘশ্বাসযুক্ত স্বর জনাব আশরাফের।
”আপনি কেন লেখাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন? আপনি খুব খারাপ আঙ্কেল! ভীষণ খারাপ!”
ড্রয়িংরুমের পরিবেশটা কেমন বদ্ধ। মুহিবের আক্রোশপ্রসূত স্বরের জবাবে আশরাফ সাহেব বললেন,
”সে যেন সারাজীবন ভালো থাকে তাঁর জন্যই বিয়ে দিয়েছি।”
নিরবচ্ছিন্ন নিরবতা। অ্যলকোহলের ভোঁটকা গন্ধ পুরো রুম জুড়ে। অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজমান। মুহিবের কথায় নিরবতার জালে ছিদ্র হল।
”যদি কোনোদিন দেখি লেখা ভালো নেই। আমি আপনাকে খুন করে ফেলব! একেবারে খুন করে ফেলব বলে দিলাম।”
যতটা জোরাল হওয়ার কথা ছিল শব্দগুলো। ততটা শোনাল না। কেমন জড়ানো শুনিয়েছে। লেখার বাবা চোখ খুলে মুহিবের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লেন। যেন লেখা ভালো না থাকলে মুহিব চাইলে সত্যিই তিনি নিজের জীবন দিয়ে দেবেন। মুহিবের মুখে হাসি ফুঁটে উঠেছে। সে হাসছে। এই মূহুর্তে যেকেউ তাঁকে দেখে বোকারাম বলে আখ্যায়িত করলে অযাচিত হবে না।
______________________________
স্ত্রী’র অসন্তোষ ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন মোতালেব সাহেব। রাতের ভোজন শেষ হবার পর ঘরে এসেছেন থেকে একটা কথাও বলেনি নাহার ওনার সঙ্গে। নকশি কাঁথা সেলাই করছেন নাহার। এই কাঁথা সেলাই শুরু করেছিলেন মাস তিনেক হবে। এখনো শেষ হয়নি। বয়স হয়েছে। এখন আর যৌবণের মত কাজে চৌকসতা নেই। স্ত্রীর এরূপ আচরণের কারণটা তিনি জানেন। জুবায়েরের জন্য স্ত্রী হিসেবে আঁখিকে ঠিক করেছিলেন নাহার। মোতালেব সাহেব নিজেও তাই চেয়েছিলেন। মাঝে থেকে আশরাফ সাহেব গোছানো সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছেন। জুলেখা মেয়েটা খারাপ নয়। জুবায়ের তাঁকে নিজের মত করে গড়ে নিতে পারলে তাঁর সংসারে সুখ-শান্তির কোনো অভাব হবে না। শুধু একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে তাঁকে। কিন্তু, নাহার গো ধরে বসে আসেন। এই মেয়ে কোনোদিন ওনার ছেলেকে সুখী করতে পারবে না। এই ধরনের মেয়েরা ঘর-সংসারের মর্ম বোঝে না। তিনি মানবেন না জুলেখাকে। বহু চেষ্টা করেও মোতালেব সাহেব স্ত্রীকে বোঝাতে পারেননি। বিছানায় পাশ ঘুরলেন তিনি। ঘুম নেই চোখে। স্ত্রী’কে ছাড়া ঘুমানোর অভ্যেস নেই ওনার আজ বিশ বছরের বেশি। বারান্দায় আলো জ্বালিয়ে কাঁথায় সুঁচ ফোটাচ্ছেন তিনি। বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দিকে গেলেন মোতালেব সাহেব। স্ত্রী’র রাগ ভাঙ্গানো দরকার।
”নাহার!”
মুখ তুললেন না নাহার। কাজে মনোযোগ রেখেই বললেন,
”উঠে এলে যে? ঘুমাও নি?”
”না!”
”কেন?”
”তোমাকে ছাড়া যে আমার ঘুম হয়না জানো না!”
মোতালেব সাহেবের অকপট স্বীকারোক্তি।
এক মূহুর্তের জন্য হাত থেমে যায় নাহারের। এরপরে কোনো কথা হয়না দু’জনের মাঝে। মোতালেব সাহেব বারান্দার দরজায়ই দাঁড়িয়ে স্ত্রীর কাজ দেখেন। নাহার কাঁথা আর প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে ঘরের দিকে আসেন নিঃশব্দে। মোতালেব সাহেবও আসেন পিছু পিছু। সবকিছু জায়গামত রেখে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিতেই মোতালেব সাহেবকে পেছনে দেখে তিনি ভ্রু বটেন।
”বাথরুমেও কি সঙ্গে সঙ্গে যাবে নাকি?”
মোতালেব সাহেব মৃদু হাসেন। প্রফুল্ল গলায় বলেন,
”তোমার আপত্তি না থাকলে যেতেই পারি।”
চোখ রাঙ্গান নাহার,
”বুড়ো বয়সে ভীমরতি! চুপচাপ বিছানায় যাও!”
তিনি বলেই দেরি করেন না। বাথরুমে ঢুকে শব্দ করে দরজাটা লাগান। হেসে মোতালেব সাহেব বিছানার দিকে এগোন। প্রথম দেখা কিশোরী মেয়েটার চঞ্চল ছোঁয়া আজও নাহারের মাঝে রয়ে গেছে। কেমন গাল ফুলান এখনো। মুখের হাসিটা বিস্তীর্ণ হল মোতালেব সাহেবের।
_____________________________
”মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তো নাহার!”
স্বামীর কথায় পাশ ঘুরলেন তিনি। বিছানায় এসে শুলেও অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিলেন এতক্ষণ।
ঝাপসা আলোয় স্বামীর মুখটা তিনি দেখতে পাচ্ছেন।
কেমন বিষন্ন লাগছে দেখতে। বুকটা ধক করে উঠল নাহারের। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে তিনি হাত রাখলেন স্বামীর মাথায়। বিলি কেটে দিচ্ছেন নিঃশব্দে।
”নাহার!” মৃদুস্বরে ডাকলেন মোতালেব সাহেব।
অভিন্ন গলায় নাহার জবাব দিল,
”হুঁ!”
”রেগে আছ?”
”আমার রাগে কিছু যায় আসে তোমার?”
নিচু আওয়াজে হাসেন মোতালেব সাহেব। হাসির শব্দ নাহারের কান অবধি পৌঁছায়। তিনি নিজের হাতের মুঠোয় থাকা চুলির গাছিতে সজোরে টান দেন। ব্যথায় কুঁকিয়ে ওঠেন মোতালেব সাহেব।
”ষোলো বছরের খুকির মত কি শুরু করেছ নাহার!”
”বেশ করেছি। আমি রেগে আছি দেখেও তুমি হাসছ!”
”হাসব না! অহেতুক কেন রাগ দেখাও কিশোরীর মত। ”
স্বামীর পাশ থেকে বিছানায় উঠে বসেন নাহার। তীক্ষ্ণ গলায় ওনার দিকে চেয়ে বলেন,
”অহেতুক রাগ দেখাইনি আমি। তুমি ছেলের বিয়ে দিয়েছ। নিজের পছন্দের পাত্রীর সঙ্গেই দিয়েছ। কিন্তু, কি ছিরি পাত্রীর সেটা দেখনি! চুল দেখছ? কথার ধরন দেখেছ এই মেয়ের? কি করে পারলে তুমি? ছেলেটার জীবন শেষ হয়ে যাবে একেবারে!”
মোতালেব সাহেব নিজেও উঠে বসেন। দু’জনে মুখোমুখি। একটা নিঃশ্বাস নেন তিনি। বলেন,
”দেখেছি। সব দেখেশুনেই তো ছেলের জন্য তাঁকে বেছেছি আমি। ভরসা নেই আমার উপর তোমার?”
নাহার তৎক্ষনাৎ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেন না। স্বামীর প্রতি কথায়, কাজে তিনি আস্থা রাখেন। তবে, এবার কেন জানি পারছেন না। মন সায় দিচ্ছে না একেবারেই। দোনোমনা করে তিনি পরোক্ষভাবে জবাব দেন,
”তোমার এই কাজটা আমার পছন্দ হয়নি!”
”কেন?” দৃঢ়স্বর মোতালেব সাহেবের।
নাহার কতক্ষণ চুপ থেকে বলেন,
”বিয়ে হয়েছে একদিন হয়নি। অথচ জুবায়ের কেমন বদলে গেছে দেখেছ তুমি?”
ভ্রু উঁচিয়ে চাহনি খরশান করেন মোতালেব। জিজ্ঞেস করেন,
”যেমন?”
বিকালে খাবারের ঘটনাটা বলেন তিনি। মোতালেব সাহেব গম্ভীর স্বরে বলেন,
”সে ভুল কিছু বলেনি। অবশ্য, তোমার উচিত ছিল নিজে গিয়ে তাঁর দেখভাল করা। মেয়েটা নতুন এই বাড়িতে। তোমরা মা মেয়ে কেউই তো গেলে না মেয়েটার সঙ্গে। তাঁর দেখভাল করা তোমাদের দায়িত্ব ছিল। দূরে দূরে থেকেছ তুমি, মেয়েরা। তবে, জান্নাতের থেকে আমি এটা আশা করিনি। শশুর হিসেবে আমার যাওয়া অশোভন দেখাত। তাছাড়া, আশরাফ ছিল আমার সঙ্গে। কে জানে তোমাদের আচরণে সে কিছু মনে করে কিনা! একমাত্র, জুবায়েরই ছিল যে কিনা তাঁর দেখাশোনা করতে পারত। কারন, সে তাঁর স্বামী। নিজের পরোক্ষ ভুলের জন্য ছেলেকে দোষারোপ কোরো না নাহার!”
স্বামীর কথায় মিইয়ে যান নাহার। তবে, দমে যাননি। তিনি নিজের পক্ষে ডিফেন্সসরূপ বলেন,
”দোষটা আমাকে দিও না তুমি। কি দেখে এই মেয়েকে পছন্দ করব আমি? দেখেই বোঝা যায় দ্বীন নেই এই মেয়ের মধ্যে। আমার ছেলেটাও দেখবে এর সহচর্যে এমন হয়ে যাবে!”
”কি যা-তা বলছ?”
”ঠিকই তো বলছি। মাগরিবের নামাজে আজ জুবায়ের মসজিদে যায়নি। এশার নামাজেও যায়নি। তুমিও তাঁকে কিচ্ছুটি বলোনি। এমন তো আজকের আগে এ বাড়িতে কোনোদিন হয়নি।”
মোতালেব সাহেব চুপ করে বসে আছেন। জুবায়ের একফাঁকে ওনাকে তাঁর আর লেখার মধ্যে হওয়া সব কথোপকথন খুলে বলেছিল। তিনি সবটা শুনে শেষে বলেছেন,’এরপর থেকে নিজেদের মাঝের কোনো কিছু আর আমাকে এসে বলবে না। মেয়েটাকে দ্বীনের পথে আনার দায়িত্ব নিয়েছ তুমি। যেভাবে ভালো মনে করবে সেভাবেই সবকিছু করবে। শুধু স্মরণে রেখ, সে এখন তোমার বৈধ দায়িত্ব।’ লেখার ব্যপারে সবকিছু খোলাখুলি স্ত্রীকে বলা হয়নি ওনার। সমস্ত দ্বিধাবোধ কাটিয়ে তিনি স্ত্রীকে খুলে বললেন লেখার ব্যপারে।
নাহার হতভম্ব।
”নামাজও পড়তে জানে না এই মেয়ে?”
মাথা দোলান মোতালেব সাহেব,
”না!”
”এমন মেয়েকে তুমি আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিলে?”
”ঝুলাইনি। তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছি। যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। তাঁর থেকে সুখী মানুষ কমই থাকবে পৃথিবীতে।”
”তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! কি করেছ তুমি!”
”ইন শা আল্লাহ সবকিছু সুন্দর হবে!”
”যদি না হয়!”
”সেটা আল্লাহর ইচ্ছা!”
নাহার কোনো কথা বলেন না। মোতালেব সাহেব ফের বলেন,
”শুধু জুবায়ের কেন, তুমি, আমি, মেয়েরা সবাই মিলে মেয়েটাকে দ্বীনের পথ চেনাব ইন শা আল্লাহ! জানো, ছোটোবেলা থেকে সে মায়ের সংস্পর্শ পায়নি। আমি চাই তুমি মায়ের মমতা দাও মেয়েটাকে। অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে নিজের মত করে গড়ে নাও। নিজের ধাঁচে তৈরি কর। তোমাকে দেখে জুবায়ের আরোবেশি সাহস পাবে। উৎসাহ পাবে।”
মৃদু কাঁপছেন তিনি। মোতালেব সাহেব বুকে টেনে নেন স্ত্রী’কে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
”নাহার, মায়ের দোয়া অব্যর্থ। তুমি তোমার ছেলের সফলতার জন্য বেশি বেশি দোয়া কর আল্লাহর কাছে। দেখবে সে পারবে! ইন শা আল্লাহ সে পারবে!”
নাহার স্বামীর সঙ্গে মিশে থাকেন। লেখার প্রতি মনটা নরম হয়ে এসেছে ওনার।
____________________________________
”এক বিছানায় ঘুমাতে হবে আমাদেরকে?”
লেখার কথা শুনে তাঁর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জুবায়ের। সে বিছানা ঝারছিল। সেটা থামিয়ে স্থির গলায় জবাব দেয়,
”হুম!”
”কেন? কেন? আপনি অন্য কোথাও ঘুমান!”
”আমি অন্যকোথাও ঘুমাব কেন? এটা আমার ঘর। বুঝ হয়েছি পর থেকে এই ঘরেই আমি ঘুমিয়ে আসছি।”
”তাহলে, আমাকে অন্য কোথাও শোবার ব্যবস্থা করে দিন!”
”কেন?”
”আমরা দু’জন এক বিছানায় ঘুমাব কি করে!”
”কেন, কি সমস্যা?”
জুবায়েরের শাণিত দৃষ্টির কবলে লেখা মুখ কাচুমাচু করে জবাব দিল,
”আমি কোনোদিন কোনো পুরুষের সঙ্গে বিছানা শেয়ার করিনি। আনইজি লাগছে।”
”আমি আর কোনো পুরুষ কি এক জুলেখা?”
লেখা জবাব দিতে চাইল। মুখে কিছু আসছেনা। সে মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিল। জুবায়েরের মুখে হাসি ফুঁটল। সে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে বলল,
”আমি কে?”
লেখা কোনো প্রতিত্তুর করল না এবারেও। আরো দু’কদম এগিয়ে লেখার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জুবায়ের বলল,
”বলুন জুলেখা! আমি কে?”
লোকটার কথায় কি সম্মোহনী গুণ আছে কে জানে! সে ফরফর করে বলে দিল,
”আমার স্বামী!”
”কার স্বামী?”
”আমি, জুলেখা বিনতে আশরাফের স্বামী!”
জুবায়েরের মুখে বিস্তীর্ণ হাসি। সে দুপ করে এক কদম এগিয়ে লেখার গালে হাত স্পর্শ করে,
”গুড গার্ল!”
সম্বোধন করে বিছানার দিকে ফিরে গেল। লেখা হতভম্ব। যতক্ষণে সে চোখ দু’টো সংকুচিত করে বিছানার দিকে তাকিয়েছে ততক্ষণে জুবায়ের বিছানা ঝেড়ে মশারি টাঙানো শেষ করেছে।
”আপনাদের এখানে মশারি টাঙিয়ে ঘুমান?”
জুবায়ের মশারি একটু উঠিয় বিছানা থেকে নামতে নামতে স্বাভাবিকভাবে জবাব দিল,
”হুম!”
”আমি মশারির নিচে ঘুমাতে পারি না।”
ডান ভ্রু উঁচাল জুবায়ের। লেখার দিকে চেয়ে বলল,
”এর আগে আপনি নামাজ পড়েছিলেন বয়স হয়েছে থেকে? পড়েননি, না। অথচ আজ পড়েছেন। জোহর, আসর, মাগরিব, এশা। ইন শা আল্লাহ মশারির নিচে ঘুমাতেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না।”
”ধুর, দু’টো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।”
জুবায়ের বলল,
”একটা কথার জবাব দেবেন জুলেখা?”
”কি?”
”নামাজ পড়ে কি আপনার খারাপ লেগেছে?”
লেখা কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছে না। জোরপূর্বক শর্তসাপেক্ষে নামাজ পড়তে হয়েছে তাকে। খারাপ লেগেছে সেটা সে বলতে পারবে না। বরং, ভেতরে কেমন শান্তি শান্তি একটা অনুভূতি হয়েছে। যেটা আগে কোনোদিন হয়নি।
”জবাব দিন জুলেখা!”
সে ধীরস্থিরভাবে বলল,
”খারাপ লাগেনি।”
জুবায়ের হাসল। হাসিটা লেখার থেকে গোপন করতে উল্টোদিকে ঘুরে ওয়াশরুমের দিকে গেল সে। লেখা দেখল তাকিয়ে তাকিয়ে তাঁকে। লোকটা তাঁর দেখা সকল পুরুষ চরিত্রের থেকে সম্পূর্ণরকম আলাদা
ব্যক্তিত্বের। কখনো গম্ভীর, কখনো সরস, কখনো যত্মশীল। লোকটা রহস্যপূর্ণ। আর এই রহস্যপূর্ণ লোকটাই তাঁর স্বামী। লেখার অদ্ভুত লাগছে খুব।
সে সত্যিই সম্পর্কটার সঙ্গে খুব স্বাভাবিকভাবে খাপ খাইয়ে গেছে। যতটা কঠিন হবে ভেবেছিল মোটেও ততটা নয়। হয়ত, অপরপক্ষের মানুষটা কোনোকিছুই কঠিন হতে দেয়নি তাই।
_______________________________________
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে জুবায়ের দেখল লেখা ফোন দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। অন্যরকম একটা দ্যুতি ছড়ানো তাঁর মুখয়বে। ধিমি পায়ে সে লেখার দিকে এগিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে,
”কি নিয়ে এত হাসছেন?”
হকচকিয়ে গিয়ে ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিতে গিয়েও শেষমেশ ক্যচ করতে পারল লেখা। হাফ ছাড়ার ভঙ্গি করে সে সামনে দাঁড়ানো জুবায়েরের দিকে একটু কঠিন চোখে তাকাল৷
”এভাবে আচমকা কেউ কথা বলে! যদি ফোনটা ভেঙ্গে যেত পড়ে।”
”ফোন পড়ে ভেঙ্গে গেলে যেত। আপনি আমি কেউ তো আঁটকাতে পারতাম না!”
নাক ফুলাল লেখা। চোখ ছোট করে জুবায়েররের দিকে চেয়ে থেকে ঝাঁঝাল স্বরে বলল,
”ফোন ভেঙে গেলে আমি ফোন পেতাম কোথায়! আমার বাপ জীবনেও ফোন কিনে দিত না এখন আর।
এত টাকাও নেই আমার কাছে। নাকি আপনি দিবেন কিনে? হুঁ?”
শেষ কথাটা শুনে ভ্রু বটল জুবায়ের। কি বোঝাতে চাইল লেখা? সে অস্বস্তি দমিয়ে না রেখে রাশভারী স্বরে বলে বসল,
”প্রথমত, আপনার বাবা কেন কোনো জিনিস আপনাকে কিনে দিবে। আপনি এখন বিবাহিত। সুতরাং, আপনার সমস্ত দায়িত্ব আমার। দ্বিতীয়ত,
আমি কিনে দিব কিনা মানে? নিজের সামর্থ্যনাসুরে আমি আপনার সকল চাহিদা পূরণ করব ইন শা আল্লাহ! আপনি আমার অর্ধেক অংশ জুলেখা!”
অপরাধী ভঙ্গিতে মাথা নামিয়ে রাখল লেখা। সে একটু বেশিই কর্কশভাবে কথাগুলো বলে ফেলেছে। নিঃশ্বাস ফেলল জুবায়ের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,
”আপনি কি ওয়াশরুমে যাবেন! গেলে গিয়ে আসুন।
বারোটা বেজে গেছে প্রায়। লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ব। সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়তে হবে।”
লেখা মাথা না তুলেই ঘাড় কাঁত করে সায় জানায়।
”আচ্ছা! আসুন।” বলেই হাতের তোয়ালেটা রেখে বিছানার দিকে যায় জুবায়ের। পেছন থেকে লেখা ডাকে তাঁকে।
”শুনুন!”
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পিছু ঘুরে তাকায় সে। লেখা জড়তা অনেকটা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
”আমি আমার বান্ধুবীর বিয়ের ছবি দেখছিলাম। সে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিল। আমিও তো তাঁকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছি। ভাবছিলাম, সে যখন শুনবে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? আমার থেকে বেশি না কম! তবে, যাই হোক আমি শোধবোধ করতে পেরেছি!”
জুবায়েরের মুখে বিস্ময়ভাব। লেখার মুখে সেই কিছুক্ষণ পূর্বের হাসিটা। লেখা এরমধ্যে বলল,
”দেখবেন, আমার বান্ধুবীকে? দেখুন। আপনি যেহেতু আমার স্বামী। আমার সবকিছুই আপনার জানার অধিকার আছে।”
বলতে বলতে সে ফোনটা নিয়ে জুবায়েরের চোখের সামনে ধরেছে। জুবায়ের পূর্ণদৃষ্টি মেলে চেয়ে দেখল।
লেখা দিবার বেশ অনেকগুলো ছবি দেখাল একের পর এক। ধৈর্য্য নিয়ে জুবায়েরও দেখে গেল। হাই তুলছে এবারে লেখা নিজেই। জুবায়ের তাঁর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। চমকে লেখা তাঁর দিকে তাকাল।
তাকানো দেখে জুবায়ের বলল,
”সারাদিন অনেক স্ট্রেস গেছে। এখন ঘুমানো উচিত। সারাজীবন পরে রয়েছে আপনার সম্পর্কে জানতে।”
আকস্মিক কিছু ভাবনায় লেখা ছিটকে জুবায়েরের থেকে কয়েক মিটার দূরে সরে গেল। জুবায়ের তাঁর এই কাজের কোনো কারন খুঁজে পেল না। জিজ্ঞেস করল,
”কি হয়েছে?”
লেখা একটু জড়সড় হয়ে বলল,
”এই আপনি আবার আমাকে স্পর্শ করবেন না তো?”
”মানে?”
”দিস ইজ আওয়ার ফার্স্ট নাইট!”
জুবায়ের ততক্ষণে লেখার কথার আসল মানে বুঝল।
ঠোঁট বটে সে বলল,
”আপনি কি চান?”
লেখা জবাব দিল,
”অবশ্যই চাই আপনি আমাকে সময় দিন।”
”সময় চাচ্ছেন?”
লেখা দ্রুত মাথা নাড়ায়,
”হ্যাঁ, হ্যাঁ, চাচ্ছি।”
”আপনি বিয়ে করেছেন তো স্বামীকে নিজেকে স্পর্শ করতে দেবেন না! কেন?”
লেখা মুখ কাচুমাচু করে জবাব দিল,
”আমি এর আগে কোনোদিন কোনো পুরুষের সংস্পর্শে যাইনি।”
লেখার ভয়ার্ত মুখটা দেখে মজাই লাগছিল জুবায়েরের। সে আকস্মিক শব্দ করে হেসে উঠল।
লেখা অবাক হয়ে তাকিয়ে তাঁর দিকে।
”আমি হাসির কি বলেছি হাসছেন কেন?”
জুবায়ের হাসতে হাসতে বলল,
”আই সাডেনলি ফাইন্ড-আইট দ্যাট য়ু আর সো ফানি!”
”হ্যঁ?”
জুবায়ের এগিয়ে গিয়ে লেখার নাক টেনে দিয়ে বলল,
”হ্যাঁ! আর নিশ্চিন্ত থাকুন। আগে আমরা একে অপরের মনের মত হয়ে উঠি তারপর বাকিসব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা যাবে।”
লেখা দ্বিধান্বিত চাহনিতে চেয়ে মাথা নাড়ল। জুবায়ের বলল,
”দ্বিধা থাকার কিছু নেই। ইসলামে সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রী’র ইচ্ছাকেও গুরুত্ব দিয়েছে। আর আমি কোনো পশু নই। আমার কাছে জৈবিক চাহিদার চেয়ে মন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে নাহয় আমরা মন থেকে কাছাকাছি আসি। তারপর জৈবিকভাবে আসা যাবে।”
লেখা মুগ্ধ না হয়ে পারছে না। মানুষটা সত্যিই অন্যরকম।
_______________________________
লেখা শেষে বিছানায় আসলেও নেমে গিয়ে রুমের লাইট জুবায়ের কেই নিভিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছে।
সে নিজের বালিশে শুতে শুতে খেয়াল করল লেখা নিজের বালিশ নিয়ে অন্যপাশে একেবারে চেপে গেছে।
মাঝখাণে বিরাট ফাঁকা। ব্যপারটা বিরক্ত করল তাঁকে।
সে বলল,
”কি শুরু করেছেন জুলেখা?”
অপর পাশ থেকে লেখা জবাব দিল,
”কি শুরু করেছি?”
”এত ওদিকে গিয়ে শুয়েছেন কেন?”
”আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি কোনো পুরুষের সঙ্গে বিছানা শে্য়ার করিনি আগে।”
”আপনি তখন নিজেই বলেছেন আমি অন্যকোনো পুরুষ নই। আপনার স্বামী।”
”হুঁ, বলেছি। কিন্তু, বিছানায় উঠতেই অস্বস্তি লাগছিল। কি করব?”
জুবায়ের কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিজেই নিজের বালিশ নিয়ে লেখার দিকে চেপে গেল। হকচকিয়ে আরো পাশে সরতে গিয়ে লেখা বলে উঠল,
”কি করছেন কি? আমি নিচে পড়ে যাব তো?”
”পড়ুন তাতে আমার কি?”
”আপনি তো মশায় বেশ বদ। আমি ভালো ভেবেছিলাম।”
”আচ্ছা, আপনি পড়ুন। আমিও নাহয় পড়ব সঙ্গে। তা-ও আমি চাই না আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝি শয়তান প্রবেশ করুক!”
লেখা কিছুই বুঝল না। অস্বস্তি ভুলে জুবায়েরের দিকে চেয়ে রইল। মশারি না থাকলে এতক্ষণে সে নিশ্চিত ফ্লোরে গড়াগড়ি খেত। জুবায়েরের কোনো নড়চড় না দেখে সে হার মেনে নিয়ে বলল,
”মাঝখাণের দিকে যান। আমি এত এদিকে এসে ঘুমাব না।”
জুবায়ের সরে এল। লেখাও সময় নিয়ে সরে এসেছে।
পাশাপাশি শুয়ে দু’জনে। লেখার শরীর মৃদু কম্পমাণ।
সে শুনতে পেল,
”ঘুমানোর দোয়া জানেন জুলেখা?”
”না।”
ঠোঁট বটে দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করল সে। বলল,
”আমার সঙ্গে সঙ্গে পড়ুন।”
লেখা তাই করল। জুবায়ের তাঁর দিকে মুখটা এগিয়ে আনতে ভয় পেয়ে সে নিজের মাথা পেছনের দিকে সরিয়ে নিল। জুবায়ের হাত বাড়িয়ে তাঁর মাথাটা ধরে কপালে চুমু দিল,
”ঘুমান। সকালে নামাজ পড়তে উঠতে হবে!”
কিছু বলল না আর লেখা। শিহরিত মনে চোখ বন্ধ করে চোখে ঘুম নামার অপেক্ষায় ক্ষণ গুনতে শুরু করল।
______________________________________
®সামিয়া বিনতে আলম