আকাশে অনেক তারা-১১

———
নিজের ঘরের দরজায় এসেই থমকে দাঁড়াল লেখা। স্পষ্টভাবে কারো ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ কর্ণকূহর অবধি পৌঁছাচ্ছে। সে ঘর থেকে বেরিয়েছিল মিনিট পাঁচেক আগে। তাঁর শাশুড়ি ডেকেছিল। যখন বেরিয়েছিল তখন জুবায়ের ঘরে কোরআন তেলাওয়াত করছিল। জুবায়ের যখনই তিলাওয়াত করে তখনই সে মন দিয়ে শুনে। মাঝেমধ্যে তো তাঁর কোলে মাথা রেখে শুয়েই মুখস্থ আয়াত পাঠ করে সে। স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে তাঁকে শোনানো যে নবীর সুন্নত লেখা আগে জানত না ব্যপারটা। কান্নার শব্দটা হুট করে বেড়ে তৎক্ষনাৎ থেমে ধীমি হয়ে গেল। লেখা চিন্তিত হয়ে ঘরে প্রবেশ করে। জুবায়ের কাঁদছে। তাঁর কপোল ভিজে আছে পানিতে। কোরআন শরিফ বন্ধ করা রয়েছে তাঁর সামনেই। লেখা দ্রুত কদমে এগিয়ে গিয়ে তাঁর সামনাসামনি বসল। চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

”কি হয়েছে? কাঁদছেন কেন?”

জুবায়ের চোখ খুলে। ভেজা চাহনিতে অশান্ত দৃষ্টিতে তাকায় লেখার দিকে। কোনোভাবে উচ্চারণ করে,

”জুলেখা!”

”কি? কাঁদছেন কেন হুঁট করে? একটু আগেই তো ঠিক ছিলেন?”

”আল্লাহর দয়া যেমন সীমাহীন, নিষ্ঠুরতা তেমনই ভয়ানক!”

”এমন কথা বলছেন কেন আপনি? আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন!”

”’আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে হেদায়াত করতে পারবেন না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করে থাকেন!’ এই আয়াতটা সূরা কাসাসের ৫৬ নম্বর আয়াত। আমি আমার জীবন দিয়ে এই আয়াতের মর্মার্থ উপলব্ধি করেছি জুলেখা!
আমি বুঝতে পারছি, একটু আগে আমার শব্দচয়ন ভুল ছিল। আল্লাহ কখনোই বান্দাদের প্রতি নিষ্ঠুর নন।
বরঞ্চ, আমরা বান্দারা অকৃতজ্ঞ!”

লেখা চুপ কি বলবে ভেবে পেল না। আয়াতটার মর্মার্থ সত্যিই ভীষণ গভীর আর কষ্টদায়ক। জুবায়ের তাঁকে নিরব থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল,

”একটা কথার জবাব দিবেন জুলেখা?”

”বলুন!”

”দ্বীণের পথে নিজেকে সম্পূর্ণ সপে দিতে পেরেছেন আপনি?”

লেখা নিরব রইল। জুবায়ের তাঁর দিকে ভেজা চোখে চেয়ে অধীর আগ্রহে। জবাব প্রত্যাশি সে। লেখা মুখ খুলল অবশেষে,

”যদি বলি পারিনি কিংবা সম্পূর্ণ পেরেছি দু’টোই মিথ্যে বলা হবে। এখনো সম্পূর্ণ পারিনি। ইন শা আল্লাহ আমি সম্পূর্ণ নিজেকে সপে দেব!”

জুবায়ের হাসল। লেখা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখল। সে শুনেছে অশ্রুসিক্ত লোচনে নারীদের মুগ্ধতা ঘিরে রাখে । পুরুষের এমন সৌন্দর্যের বর্ণণা কেউ কোনোদিন দেয়নি। পুরুষের মধ্যেও সৌন্দর্য আছে। জুবায়েরকে দেখে সে টের পায়। বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ উভয় সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই মানুষটা। নিজের ললাটে সিক্ত স্পর্শ পেয়ে তাঁর ধ্যান ছুটে। সে শুনতে পায় জুবায়ের বলছে,

”ইন শা আল্লাহ! আল্লাহ প্রতিবার আমার প্রতি নিষ্ঠুর হতে পারেন না!”

লেখা কোনো কথা বলল না। মনে মনে উচ্চারণ করল,

‘আমিন!’
________________________________

জুবায়েরের সঙ্গে আঁখির বিয়ের ব্যপারে আলোচনা তখন নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি প্রধাণীয়া দম্পতি। বিশেষ করে নাহার। নিজেদের ইচ্ছার কথা তিনি আঁখির মা’কেও জানিয়েছিলেন চুপিসারে, আকারে-ইঙ্গিতে। সেজন্যই তিনি লেখাকে মেনে নিতে আরোবেশি গড়িমসি করেছিলেন প্রথমে। যদিও তখন কোনো কথা পাকাপাকি হয়নি। তবুও নিজেকে ছোট ছোট মনে হয় নাহারের। আঁখির মায়ের শরীরটা খারাপ যাচ্ছে ইদানীং। বিছানায় পড়ে থাকেন দিনের সিংহভাগ সময়। নাহারের সম্মুখীন হলেই কেমন দৃষ্টিতে জানি তাকান। নাহারের ভীষণ ভয় করে তখন। যেন হাজারো নিরব অভিযোগ থাকে সেই চাহনিতে। মনে হয়, তিনি মুনাফিকের কাতারে পড়ে গেছেন। নিজের ভয়ের কথা তিনি মোতালেব সাহেবকেও জানিয়েছেন। মোতালেব আশ্বস্ত করেছে তাঁকে। তিনি ওনাকে কোনো কথা দেননি। শুধু নিজেদের ভাবনার কথা জানিয়েছেন। সেটা বাস্তবায়ন হবে কি হবে না তাঁর অনিশ্চয়তার কথাও বলেছিলেন। তবুও, নাহার কেমন মানসিক অবসাদে ভুগেন। আঁখির মা নিশ্চয়ই আশা করে ছিল। আঁখি জুবায়েরের বউ হবে! তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেননি ঠিকই তবে কারো আশা ভঙ্গ করেছেন। এই হীনমণ্যতা শেষ করে দিচ্ছে নাহারকে। নিজেকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে তিনি নতুন চিন্তা করেছেন। আঁখিকে তিনি ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দেবেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব খরচে। মোতালেব সাহেবকে এই ভাবনার কথা এখনো তিনি জানাননি। সময় করে জানাবেন একদিন। যতদিন না আঁখি মেয়েটাকে ভালো সৎ কোনো পাত্রস্থ করতে পারছেন ততদিন এই অবসাদ, বিষন্নতা থেকে মুক্তি নেই ওনার। সেটা তিনি ভালো করেই বুঝতে পারেন।
_________________________________

”আচ্ছা, আমি এখনো জানিই না আপনি পড়াশোনা কতদূর করেছেন! কি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন!”

জুবায়ের লেখার দিকে তাকাল। তাঁর চাহনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বিয়ের বেশ কয়েক মাস পেরিয়েছে। তবুও লেখা এ সম্পর্কে জানে না। এ নিয়ে অবশ্য তাঁর বিশাল কোনো অভিযোগ নেই। সে শুধু জিজ্ঞেস করল,

”আপনি জানেন না?”

লেখা অজ্ঞভাবে না সূচক মাথা নাড়ল। জুবায়ের সংক্ষেপে জানাল,

”ইসিই, বুয়েট!”

লেখার মুখটা হা হয়ে রইল। কানে তর্জণী ঢুকিয়ে সে ঠোকাঠুকি করে বের করে আনল। বুঝতে পারছে না ঠিক শুনেছে নাকি ভুল। সে ঢোক গিলে ধাতস্থ হয়ে উচ্চারণ করল,

”বুয়েট! ইসিই!”

জুবায়ের কাঁধ ঝাঁকাল। সে আজ নিজেই লেখাকে পড়াতে বসিয়েছে। মেয়েটার পরীক্ষা চলছে অথচ কোনো মনোযোগ নেই পড়াশোনায়। তাঁর নাকি এখন আর পড়াশোনা করতেই ভালো লাগে না। মন দিয়ে সংসার করবে এখন সে। মাস্টার্স করবে কি করবে না সেটা তাঁর ব্যপার! জুবায়ের চায়, অনার্সটা অন্তত ঠিকঠাকভাবে শেষ করুক। লেখা উত্তেজনায় নিজের সামনে থাকা বইটা বন্ধ করে দিয়ে জুবায়েরের দিকে একটু ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল,

”সত্যি?”

”আমি আপনাকে এখনো অবধি কোনো মিথ্যে বলেছি?”

লেখা কাঁধ নাচাল। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল,

”তাহলে, এতদিনে তো আপনার ভালো চাকরি হয়ে যাওয়ার কথা। এখনো চাকরি পাননি আপনি?”

”পাইনি বললে ভুল হবে। নিজেই খুঁজিনি!”

”বাবার টুকিটাকি যা ব্যবসা আছে তাতেই ইন শা আল্লাহ দিন চলে যাবে!”

”যেহেতু ব্যবসাই করবেন তাহলে কষ্ট করে ইসিই কেন পড়েছেন। কোনোমতে বানিজ্য নিয়ে পড়াশোনা করে পাশ করলেই তো হত।”

”আমারও চাকরি করার ইচ্ছা ছিল।”

”এখন আর নেই?”

”নেই আবার আছেও!”

”এটা কেমন কথা?”

”কোনো কোম্পানিতে ঢুকব না। বিসিএসটা দেব। সিরিয়াসলি না। হলে দু’এক বছর চাকরি করব।”

”দু’একবছর কেন?”

”বাবার বয়স হচ্ছে। কতদিন তিনি একাএকা সব সামলাবেন? ছেলে হিসেবে আমার নিজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।”

লেখা মাথা নাড়ল। পরক্ষণে, কিছু ভেবে জিজ্ঞেস করল,

”আচ্ছা, আপনার কোন শিক্ষাবর্ষ?”

”নয়-দশ!”

”কি নয়-দশ! আমার এক কাজিনও ইসিই নিয়ে পড়েছে। তাঁর শিক্ষাবর্ষ ছিল দশ-এগারো। আপনি হয়ত চিনবেন তাঁকে। সে অনেক পপুলার ছিল ক্যম্পাসে।”

জুবায়ের কিছুক্ষণের জন্য একটু অন্যমনস্ক হয়। পরক্ষণে, সে মৃদু হেসে লেখার মুখের দিকে চেয়ে জবাব দেয়,

”হয়ত!”

লেখা আরো কিছু বলবে তাঁর পূর্বেই সে লেখার সামনের বইটা হাতে নেয়। খুঁজে চ্যপ্টারটা বের করে তাঁর সামনে রাখে। লেখাকে বাড়তি কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়না। বলে,

”দ্রুত নিজের পড়া শেষ করুন। জেনেছেন তো আমি কি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আর কোনো কথা নয়।”

লেখা মুখটা বেঁকিয়ে বইটা হাতে নেয়। অনিচ্ছায় সে বইয়ে মুখ ডোবায়। একটা সময় সত্যি সত্যিই মনোযোগ বসে যায়। জুবায়ের নির্নিমেখ তাকিয়ে দেখে তাঁকে। মনে করে তাঁর একজন প্রিয় মানুষকে। এখনো প্রিয় আছে বললে ভুল হবে। অতীতে ভীষণ প্রিয় ছিল সে। জুবায়েরের মনে পড়ে মাস খানেক আগের কথা। তাঁর বড় বোন আর দুলাভাই এসেছিল বাড়িতে। বড়বোন অন্তঃসত্তা। এই খুশির খবরই তারা ভাগাভাগি করতে এসেছিল। নাহার নাকি খুশির আমেজে লেখাকে বলে বসেছিল,’তোমরা কবে বাচ্চাকাচ্চা নেবে?’ লেখার তৎক্ষণাৎ লাজুকলতা মুখভঙ্গির পেছনে চাপা বিষন্নতা নাহার টের পায়নি ঠিকই তবে সেটা জান্নাতকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। সে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছে। এই বিষয়েই টুকিটাকি রিসার্চ করছে। সেদিন রাতেই জুবায়েরকে ছাদে ডাকে সে। জিজ্ঞেস করে,

‘তোদের মধ্যে সব ঠিকঠাক?’

জুবায়ের চিরায়ত মুচকি হেসে জবাব দেয়,

‘আলহামদুলিল্লাহ!’

একটু নিশ্চিন্ত হয় জান্নাত। তবে, পরিপূর্ণ হতে পারে না।

‘তাহলে মেনে নিয়েছিস মেয়েটাকে?’

‘যেদিন আল্লাহর কালাম পড়ে বিয়ে করেছি সেদিন থেকেই!’

‘তাহলে, তোদের সম্পর্কটা এখনো পূর্ণ হয়নি কেন?’

চমকে উঠে বোনের দিকে তাকায় জুবায়ের। থতমত খাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘মানে?’

তীক্ষ্ণ গলায় জান্নাত ধারাল দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

‘মানেটা বুঝিয়ে দিতে হবে তোকে!’

জুবায়ের চুপ করে যায়। কি বলবে বহু খুঁজেও পায়না।
জান্নাত নিরবতা ভঙ্গ করে,

‘এখনো ভুলতে পারিসনি?’

জুবায়েরের নিঃশ্বাস ভারি হয়। সে বড় করে দম ছাড়ে।
একটু ম্লান গলায় জবাব দেয়,

‘জুলেখাই এখন আমার জীবনে একমাত্র সত্য!’

‘তোর কর্মকান্ড সেটা বলছে না! অন্যদিকে নির্দেশ করছে! তখনই নিষেধ করতে পারতি বাবাকে!’

‘তুমি ভুল বুঝছ!’ জুবায়েরের স্বর করুন।

‘ভুল বুঝছি?’

‘হুঁ!’

‘তাহলে, কোনটা ঠিক! বলবি? বিয়ের ছয় মাসেও কোনো সবল পুরুষ নিজের স্ত্রী’কে স্পর্শ করবে না! সেটা? কখন এটা হবে যখন কোনো সম্পর্কে ভালোবাসা থাকবে না, ঘৃণা থাকবে কিংবা মোস্ট ইম্পোট্যন্ট যেখানে পুরোনো পিছুটান থাকবে! তোর কোনটা?”

‘কোনোটাই না!’

‘কোনোটাই না! তাহলে অন্য কি?’

‘প্রথমে আমি নিজেদের দু’জনকেই সময় দিতে চেয়েছি একটা পূর্ণ সম্পর্কে যাওয়ার আগে। আমি ভাবিনি, সময়টা এত দীর্ঘ হবে। আমি জুলেখাকে ভালোবেসে বা নিজে পছন্দ করে বিয়ে করিনি ঠিকই। তবে, এখন ওনার প্রতি আমার দুর্বলতা আমি নিজেও বুঝতে পারি। এতদিন একটা মানুষের এত কাছাকাছি থাকলে তাঁর প্রতি দুর্বলতা আসেই। তারউপরে আমরা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু.. ‘

জুবায়ের চুপ করে গেল। ভ্রু বটে নিরবতা ছিন্ন করে জান্নাত একটু দ্বিধান্বিত গলায় বলল,

‘মাইসোফোবিয়া?’

জুবায়েরের সঙ্কোচপূর্ণ মাথা নাড়ানো রাতের ঝাপসা আলোয় স্পষ্ট দেখতে পায় জান্নাত। দু’জনেই নিশ্চুপ মূহুর্ত পাড় করে অনেক্ক্ষণ।

‘আমার পরিচিত একজনের নাম্বার দিচ্ছি কালই যাবি। যোগাযোগ করবি। আমার এই অবস্থায় তোর কোনো ট্রিটম্যান্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

জুবায়ের বোনের দিকে পূর্ণ চাহনি মেলে তাকায়।
জান্নাত তার চাহনির মানে বুঝতে পেরে শীতল কণ্ঠে জবাব দেয়,

‘আরো আগেই তোর যাওয়া উচিত ছিল!’

‘আরেকটা কথা!’

নিচে নেমে যেতে যেতেও জুবায়ের থেমে দাঁড়ায়। পিছৃ ফিরে জিজ্ঞেস করে,

‘কি?’

‘জুলেখাকে নিয়ে আরো একটা সত্যি আছে। সে কিন্তু.’

জুবায়ের হাত উঁচায় সম্মুখে। ধরা গলায় জবাব দেয়,

‘আমি জানি। বলতে হবে না।’

সেদিন আর কোনো কথা হয়নি দু’ভাইবোনের মধ্যে। তবে, সে জান্নাতের কথা মতই কাজ করেছিল। লেখা বই থেকে মুখ তুলে। জুবায়ের কিছু ভাবছে গভীর মনোযোগে। লেখা ভ্রু উঁচায়। তাঁকে ডাকে,

”শুনছেন?”

জুবায়ের এখনো নিজের ভাবনা জগতে মশগুল। বেশ জোরে চেঁচিয়ে ওঠে লেখা এবারে,

”শু-ন-ছে–ন?”

হকচকিয়ে গিয়ে চেয়ারসহ পেছনে হেলে যায় জুবায়ের। পড়তে পড়তে কোনোক্রমে টেবিল ধরে বাঁচে। জুবায়েরের মুখভঙ্গি দেখে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল লেখা। জুবায়ের চোখ দু’টো ছোট ছোট করে তাঁর দিকে তাকায়। লেখা হাসি থামিয়ে বলল,

”কি?”

”সেটা তো আপনি বলবেন? হাসছেন কেন? হাসির কিছু ঘটেছে কি? আমি পরে যাচ্ছিলাম।”

”আমার কি হাসতেও মানা?”

”হাসতে মানা নেই। আমি চাই আপনি বেশি বেশি হাসবেন। তবে, আপাতত পড়াটা শেষ করবেন পরে যতখুশি হাসবেন! দেখি, পড়াটা দিন।”

”মানে কি? আপনি বাচ্চাদের মত ট্রিট করেন কেন আমাকে?”

”আপনি নিজেই বাচ্চাদের মত বিহ্যভ করেন! বেশি কথা না বাড়িয়ে বই দিন। একটু পরেই খেতে ডাকবে মা।”

লেখা বইটা এগিয়ে দিল। মোটামুটি সবই পারে লেখা। জুবায়ের খুশি হয়েছে। মেয়েটার স্মরণশক্তি চমৎকার।
__________________________________

”আচ্ছা, আমাকে বিয়ে করে আপনি সুখী?”

চোখ বন্ধ অবস্থাতেই জুবায়ের জবাব দিল,

”আলহামদুলিল্লাহ!”

জবাব দিয়ে সে লেখাকে আরেকটু কাছে টেনে নেয়।
লেখাও তাঁর নগ্ন বুকে লেপ্টে যায় নির্বিঘ্নে। বেশ অনেক্ক্ষণ নিরবতায় পাড় হয়। লেখার মাথায় কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস ঘুরছে। সে ফের জিজ্ঞেস করে,

”আচ্ছা, আঁখিকে বিয়ে করলে কি আরো বেশি সুখী হতেন?”

জুবায়েরের ঘুম জড়ানো চোখ দু’টো ফট করে খুলে যায়। সে ড্রিম লাইটের আলোয় লেখার ফ্যকাশে মুখটা পূর্ণ চাহনি মেলে দেখে। নিজের মাথাটা একটু পেছনে সরিয়ে এনে ডান হাতে লেখার মুখটা নিজের মুখোমুখি করে জিজ্ঞেস করে,

”হঠাৎ এ কথা কেন জিজ্ঞেস করলেন?”

জুবায়েরের চিন্তা টের পায় লেখা। সে নিশ্চয়ই ভাবছে লেখা হয়ত ভুলটুল বুঝেছে কিছু নিয়ে। এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার কিছুদিন পরেই আঁখি আর জুবায়েরের বিষয়টা জানতে পেরেছে সে। এটা জানিয়েছে নাহার স্বয়ং নিজেই। লেখার মাথায় তেল দিয়ে দিতে দিতে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন। তখন আর পেছনে ফেরার কোনো রাস্তা ছিল না। লেখা জেনেছিল সবটা। তাঁর আগে আঁখিকেই পছন্দ ছিল ওনাদের জুবায়েরের অর্ধাঙ্গিণী হিসেবে। এরপর থেকে অকারণেই চক্ষুশূল মনে হত আঁখিকে তাঁর। তবে, ধীরে ধীরে তাঁর নিজেরই মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার প্রতি। মেয়েটা অসম্ভব ভালো। জুবায়েরের প্রতি অযাচিত কোনো কল্পনা নেই তাঁর। মা’কে আর নিজেকে নিয়েই তাঁর দুনিয়ার যত ভাবনা। লেখা নিজেও দোয়া করে মেয়েটা ভালো থাকুক! লেখার কোনো জবাব না পেয়ে
জুবায়েরের কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে।

”কিছু বলুন! কি ভাবছেন?”

লেখা মৃদু হাসে। বলে,

”তেমন কিছু না।”

”তাহলে, এই প্রশ্ন কেন?”

”এমনিই! তবে, আপনি তো জবাব দিলেন না? খুব কঠিন প্রশ্ন করে ফেলেছি নাকি?”

জুবায়ের কয়েক মূহুর্ত চুপ থেকে জবাব দেয়,

”মোটেও না। আপনি আমার জীবন সঙ্গিনী কেন হয়েছেন জানেন? কারন, আপনার নিকটে আমার কল্যান নিহিত! আর কল্যনকর প্রতিটা জিনিসই শান্তিপূর্ণ, স্বস্তিদায়ক, সুখের!”

”তাই?”

”জ্বি, তাই। দেখি এখন উঠুন। ফ্রেশ হয়ে নামাজটা পড়ে নিবেন!”

”আপনি যান। আমি একটু পর উঠছি।”

জুবায়ের আর কোনো বলে না। লেখাকে নিজের বাহুবন্ধণ থেকে ছাড়িয়ে নিঃশব্দে বিছানা ছাড়ে। তবে, একটা চিন্তা থাকেই। লেখা যতই বলুক এমনি জিজ্ঞেস করেছে। মেয়েটার মনে অন্যকিছু নিশ্চয়ই চলছে।
________________________________

®সামিয়া বিনতে আলম

’ইন শা আল্লাহ কাল একটা পর্ব পাবেন! মন্তব্য করুন! জাযাকাল্লাহ খাইরান!’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here