আকাশে অনেক তারা – ১
———–
”এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক! নে তোর ইচ্ছা পূর্ণ। আর কোনোদিন আসবি না আমার সামনে তুই! এই মুখ দেখাবি না!”
হরিণী চোখে টলমলে অশ্রুর ঢল রুখে রাখার দৃশ্য চক্ষুগোচর হলো না জুবায়েরের। সে চোখমুখ শক্ত করে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাত দু’টো মুঠোবন্দি। কপাল আর হাতের শিরা-উপশিরা যেন নিজস্ব প্রদর্শণীতে সুন্দরভাবে চামড়া ভেদ করে ফুঁটে উঠেছে। সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে। অসহায়ত্বে না-কি তীব্র রাগের প্রকোপ বোধগম্য হচ্ছে না তাঁর। নিরবচ্ছিন্ন পিনপতন নিরবতায় ঘড়ির কাটায় টিকটিক শব্দে সময় বেশ অনেক্ক্ষণ পার হয়ে গেছে জাগতিক নিয়মে। নিঃশব্দ সময়ে একটু একটু ক্ষয়ে ক্রোধের জমিনে ভাটা পড়তেই জুবায়ের পিছু ঘুরে। চোখেমুখে উদ্বীগ্নতা। ততক্ষণে জুবায়ের অনুধাবন করে সেই হরিণ চোখী কৃষ্ণমনিধারী রমণী বহুদূরে। একেবারে দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেছে। সে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ। সে রাগের বশে শেষ আশাও শেষ করে দিয়েছে। এক বিন্দু দু’বিন্দু করে চোখে পানি জমে। একসময় দৃষ্টি ঝাপসা হতে হতে সম্পূর্ণ নিংরশু হয়। আকস্মিক সে ফুসফুসে শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রে সঞ্চয় করে চেঁচিয়ে উঠে,
-”না!”
চিৎকার দিয়ে হুরমুরিয়ে বিছানায় উঠে বসে জুবায়ের। সেই একই স্বপ্ন আজ-ও দেখেছে। প্যলপিটিশন হচ্ছে ভীষণ বাজেভাবে। পুরো শরীর ঘামে ভিজে চুপচুপে অবস্থা। পরনের টি-শার্ট ভিজে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে গেছে। চুলের ফাঁক গলিয়ে ঝর্ণাধারার মতো ঘাম কপাল পথে নিচে নামছে অবিরাম। ঘাড়ের দিক দেখে মনে হচ্ছে সে মাত্রই গোসলকার্য সমাধা করেছে। ফ্যন চলছে তবুও এই বিচ্ছিরি অবস্থা। শরীরটা কেমন ম্যজম্যজ করছে। কপালের ঘাম মুছে নিঃশ্বাসের গতি স্বাভাবিক করতে উদ্যত হয় জুবায়ের। কুকুরের ঘেউ ঘেউ ধ্বনি ভেসে আসে বাহির থেকে। নিস্তব্ধ রাতে কুকুরের বাজখাঁই ঘেউ ঘেউ ধ্বনি কেমন ভীতিকর শোনায়। মনে সঙ্কার উদ্রেক হয়। সে হাত বাড়িয়ে ল্যম্পলাইট জ্বালায়। মূহুর্তে ঘর কিছুটা আলোকিত হয়। তবুও, কেমন বিষন্ন একটা ভাব ছেয়ে থাকে রুম জুড়ে। বিশেষ করে তার মনে। কুকুরের ঘেউ ঘেউ ধ্বনি থামার কোনো নামগন্ধ নেই। অনবরত গলা হাঁকিয়ে ডেকেই যাচ্ছে রাস্তার নেঁড়ি কুকুর। হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নেয়। সময় দেখে। তিনটা পঁয়তাল্লিশ। তাহাজ্জুদের নামাজের সময়। তেত্রিশ সেকেন্ড মত জুম ধরে থেকে বিছানা ছাড়ে। নামাজ পড়লে নিশ্চয়ই স্বপ্নের কারনে মনের ভেতরে উদ্ভুত খচখচানিটা দূরীভূত হবে।
_________________________________
ঘড়ির কাটায় সময় সাতটার কাছাকাছি। প্রধানীয়া ভিলায় সকাল হয়ে গেছে সেই ফজরের আজানের পরপরই। নামাজ ব্যতীত এ বাড়িতে কারো খাবার জোটে না। বাড়ির কর্তা মোতালেব সাহেব মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছেন। হাতে চায়ের পেয়ালা। এই সময় তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে খবরের কাগজ আর চায়ের সঙ্গে বেশ উপভোগ্য সময় পাড় করেন।
শহরের মানুষের এই সময়ে দিন শুরু হয়না। আরো পরে জেগে উঠবে তারা। তাই নিরিবিলি বেলকনিতে বসে ফাঁকা ইট পাথরের রাস্তাটা দেখেন তিনি। কিছু লেজকাটা নেঁড়ি কুকুর ছাড়া তেমন কিছুরই দেখা মেলে না। কখনো কখনো সেগুলো লেজ নেড়ে নেড়ে এদিক সেদিক ঘুরে। আবার কখনো সখনো শহরের সভ্য মানুষগুলোর মতো কংক্রিটের বুকে পড়ে পড়ে ঘুমায় বেলা অবধি। মোতালেব সাহেবের ভাষ্যে এই মানুষ আর কুকুরগুলো ভীষণ অসভ্য। পাশের দক্ষিণ দিকের বাড়িটা একতলা। একেবারে ওনার বেলকনির মুখোমুখি। উপরে কোনো ছাদ নেই। টিন দিয়ে ছাদ করা। মাঝেমধ্যে বিড়াল ঘুরঘুর করে টিনের চালায়। আর মেও মেও শব্দ করে ওনার সংবাদপত্র পড়ার মনোযোগ বিঘ্ন ঘটায়। কয়েক গজ দূরে ময়লা ফেলার জায়গা থেকে অবশ্য কাকের বাজখাঁই কা কা ধ্বনি প্রায় সময়ই প্রধানীয়া ভিলা অবধি ভেসে আসে। বিশেষ করে যখন কাকেরা সব সাঙ্গপাঙ্গরা একত্র হয়। সেদিন আর মনোযোগ সহকারে সংবাদপত্র পড়া হয়না মোতালেব সাহেবের। প্রতিদিন খবরের কাগজ না পড়লে দিনটা কেমন পানসে পানসে লাগে ওনার। নূন ছাড়া তরকারি। মনে হয়, কোন কুক্ষণে যে তিনি এই এলাকায় জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন। আজকে খবরের কাগজে বিএনপি, আওয়ামীলীগ নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়েছে। দেশের দুই প্রধান দল। মোতালেব সাহেব খুঁজে খুঁজে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ গুলোই আগে পড়ছেন। ওনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মানে যে খবরটার হেডলাইন মনপুত হবে সেটাই।
‘শরীয়তপুরে বিএনপি আওয়ামী নেতৃবৃন্দ একে অপরকে জুতা ছুড়ে মেরেছেন জন সম্মুখে।
জামালপুরে আওয়ামীছাত্রলীগ সম্মেলন করেছে। ককটেল ফাঁটানো হয়েছে সম্মলনে। ধারনা করা হচ্ছে দেশের একমাত্র বিরোধী দলই এর পেছনে কারসাজি করেছে। অবশ্য ধারনা এখন আর ধারনা অবধি নেই।
বেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। একে অপরকে উদ্দেশ্য করে কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে বিষয়টাকে কেন্দ্র করে।
গাজীপুরে আওয়ামী বিএনপি সংঘর্ষে নিহত তিন, আহত দুই। বিস্তারিত পড়তে গিয়ে জানলেন, ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রাত নয়টা নাগাদ। দুটি অাট নয় বছরের শিশু পার্শ্ববর্তী শিক্ষক গৃহ থেকে প্রাইভেট পড়ে ঘরে ফিরছিল। বইয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার প্রসঙ্গে আলোচনা ঘিরেই শুরু হয় ঝগড়া। একসময় তর্কে বহুদূর এগিয়ে গিয়ে কথা-কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায়। দু’জনের পরিবারই দৌঁড়ে আসে চেঁচামেচি শুনে। বিবাদ থামার বদলে পরিবারে পরিবারে রাজনৈতিক আদর্শকে কেন্দ্র করে মুখে কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। একসময় এই বিবাদ পরিবারিক সীমানা পেরিয়ে পাড়া প্রতিবেশীদের আকৃষ্ট করে। সে অবধি ক্ষান্ত হয়না। পুরো এলাকার লোক শেষে তর্কে জড়ায় নিজের নিজের রাজনৈতিক আর্দশ আর দল নিয়ে। পরিশেষে, ফলাফলরূপে তিনজন নিহত আর ফ্রন্টে দু’জন লিখলেও বিস্তারিত খবরে অনেকে আহত হয়েছেন বলে লিখেছে। এই বিশৃঙ্খলাপূর্ণ, খুনখারাবি অবস্থা অনুকূলে এসেছিল পুলিশি লাঠিচার্জে। এই ঘটনার মূল হোতা দুই শিশু। পুলিশ কি করবে তা নিয়ে এখন বেশ চিন্তিত! সাংবাদিকগন জনসাধারণের অভিমত জানতে চেয়েছেন!’
’জেলে পুরে দেক সবকটাকে! বিশেষ করে বাচ্চাদু’টোর পরিবারকে। ছোট শিশুদের রাজণীতি শেখায়। বদের দল। দেশটাকে আর দেশ রাখে নি। অরাজকতার কারখানা বানিয়ে ফেলেছে!’
নিজে নিজে বিরবির করে বিতৃষ্ণ ভঙ্গিতে খবরের কাগজ পাশে রেখে চায়ে চুমুক দেন। বিচ্ছিরি একটা মিষ্টি শীতল স্বাদে মুখটা সঙ্গে সঙ্গে বিকৃতি করে চেঁচিয়ে উঠেন,
”নাহার!”
________________________________
বেলকনি থেকে স্বামীর হাঁক শুনে ভ্রু কুঁচকান নাহার।
প্রতিদিন তো তিনি এই সময়ে নিঃশব্দে খবরের কাগজ পড়েন। সেই সময়ে ওনাকে কোনোরূপ বিরক্ত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আজ হঠাৎ কি হয়েছে? এমন গলা ছেড়ে ডাকছেন নিজেই। সকালের নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নাহার। নামাজ পড়েই ছেলে মেয়েগুলো ঘুম দিয়েছে আবার। আহারে, ওনার মানিকেরা! ঘুমাক।
বিশেষ করে মেজ মেয়েটা একটু ভালো কর শান্তির ঘুম ঘুমাক। দু’দিন বাদেই শশুড়বাড়ি চলে যাবে সে। আজ সকাল থেকেই তো বাড়িঘর সাজানো শুরু হবে। বিকেলে সুন্নাহ মেনে মসজিদে খেজুর খাইয়ে বিয়ে হবে। রাত্রে মেহেন্দি আর কাল থেকে যত অনুষ্ঠান আছে সব শুরু। এই বিয়ে উপলক্ষে সকল আত্মীয় স্বজনকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। লতাপাতায় কাউকে বাদ রাখেনি। গুণে গুণে লিস্ট করে নিজে দাওয়াত করে এসেছেন মোতালেব সাহেব। বড় মেয়ের বিয়ে বেশ ঘরোয়াভাবে হয়েছিল। একেবারে হুঁট করেই। কোনো বার্তাবিহীন। মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছিলেন নাহার। বড় মেয়েটা বেশ পর্দাশীল। যখনই সে বাহিরে বেরোয় নাক-মুখ, হাত-পা ঢেকে বোরকা পরে বের হয়। ইসলামি রীতিনীতি সে মেনে চলার চেষ্টা করে যথাসাধ্য। সেদিন তাঁর চোখ দেখেই নাকি সেই ডাক্তারের ভালো লেগে গেছিল। পরবর্তীতে তিনি মেয়ের কাছ থেকে গোপনসূত্রে অন্য একটা খবর জেনেছেন। সেদিন হাসপাতালে কোনো এক ফাঁকে মেয়েটা নিকাব খুলে পানি পান করেছিল। সেখানে তার চেহারা স্পষ্টভাবে দেখেছিল সে। একসপ্তাহের মধ্যে মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি এসে হাজির। সবদিক দেখে শুনে ছেলেটাকে বেশ সুপাত্র-ই মনে হয়েছে। পেশাও বেশ ভালো। বেশি দোনোমনা না করে নিজেদের সম্মতির কথা জানান ছেলেপক্ষকে। ব্যস দু’দিনের মাথায় দেখাশোনা শেষ হতে ঘরোয়াভাবে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছিল কোনো বাজানাবাদ্য ছাড়াই। সেদিনই তাকে শশুড় বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কম কথা শোনায়নি সকলে দাওয়াত না পাওয়ায়। যদিও সামনে সরাসরি কেউ কিছু বলেনি। তবে, নিজেরা নিজেরা ফুসুরফাসুর করেছে পেছনে। অনেকেই নাহারের কাছে ভালো সাজতে পেছনে এসে লাগিয়েছেন সেসব কথা। আবার ওনার কথা-ও এসে লাগিয়েছেন অন্যজন। সবকটাকে চেনা আছে নাহারের। অনেকে পরোক্ষভাবে খোঁচা দিয়ে-ও কথা বলতে ছাড়েনি। সব দিক বিবেচনায় মেজ মেয়ের বিয়েতে কোনো কমতি রাখেননি তাঁরা। বেশ বুঝতে পারছেন, এই ক’দিন খুব খাঁটুনি যাবে ওনার। সবজি নাড়ানো বন্ধ করেন তিনি। নিচু গলায় হাঁক ছাড়েন,
”আঁখি!”
কয়েক মূহুর্তে হুড়মুড়িয়ে বয়স সতেরোর কিশোরী এসে উপস্থিত হয় নাহারের কাছে। নাহার মেয়েটার দিকে একপলক তাকান। শেষবার সবজিটা নেড়ে
গ্যাসের চুলাটা বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান।
জিজ্ঞেস করেন,
”তোর মা কই?”
”ছাদের ঘরটা পরিষ্কার করে!”
জ্ঞাত ভঙ্গিতে মাথা দু’দিকে একটু দোলান নাহার। মনে পড়েছে। তিনিই পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। কয়েক মূহুর্ত কি যেনো ভাবেন।
”ওহ্, আঁখি!”
”জ্বি, আন্টি?”
”তাহলে তুই রুটি বেলে রাখ। আমি এসে ভাঁজবো।”
আঁখি বাধ্যগত দাসের ন্যায় ঘাড় কাত করে সায় দেয়।
নাহার রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। মোতালেব সাহেব কেন ডেকেছেন দেখা দরকার!
_____________________________________
”ডেকেছ কেন?”
মোতালেব সাহেব ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকান। এমনিই দেরি করে এসেছে তার উপর নাহারের চাঁড়া গলা শুনে মেজাজটা যেন আরোবেশি চড়ে গেল ওনার।
”কি চা দিয়েছ?”
”কি চা দিয়েছি? প্রতিদিন যেটা খাও সেটাই তো।”
কাপটা হাতে তুলে শব্দ করে স্ত্রীর দিকে টি-টেবিলে রেখে কটমট করে বলেন,
”নিজেই খেয়ে দেখো একবার!”
স্বামীর আচরনে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলেন নাহার। চাহনিতে বিস্ময় আর অবিশ্বাস্য ভাব। কি ভুল করেছেন তিনি? চা নিজ হাতে তিনি বানিয়েছেন। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে সেটা নিয়ে মন খারাপ থাকলেও আঁখি কিংবা তার মা-কে বানিয়ে দিতে বলেননি। তিনি জানেন সকালের চা নাহারের হাতে বানানো খেতেই মোতালেব সাহেব পছন্দ করেন। গত ত্রিশ বছর ধরে এই নিয়মই নিত্য পালিত হয়ে আসছে।
রাগটা থার্মোমিটারে পারদ চড়ার মতো তরতর করে মাথার শিরায় চড়ে গেল নাহারের। তিনি তেতে উঠে চায়ের পেয়ালাটা হাতে তুলে নিয়ে আছাড় মারলেন। কাচ ভাঙ্গার শব্দ করে মূহুর্তে খন্ডবিখন্ড হয়ে গেল কাঁপটা। এটা সাধারণ কোনো কাপ না। এটা মোতালেব সাহেবের অতি শখের বিশেষ কাপ। গত দশ বছর ধরে তিনি এই কাপে চা খেয়ে আসছেন। কাপটা ওনার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দিয়েছিল। সে আবার এনেছিল দক্ষিন আফ্রিকা থেকে। অবশ্য একটা না, একসেট দিয়েছিল। সব ভেঙে ভেঙে একটাই অবশিষ্ট ছিল। সেটাও শেষ হয়ে গেল নাহার বেগমের হাত ধরে। রেগে অগ্নিমূর্তি হয়ে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন মোতালেব সাহেব।
অসহায় চাহনিতে ভঙ্গুর কাপটার দিকে একবার তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে স্ত্রীর দিকে তাকালেন আগুন চোখে। থোরাই পাত্তা দেন নাহার। স্ত্রীর মাঝে কোনোরূপ বিকার কিংবা অপরাধবোধ না দেখে বেশ রুক্ষভাষী হয়ে উঠলেন,
”নাহার কি করেছ তুমি? এত্ত বড় সাহস তোমার! চা তো খেলেই না। কাপটাও ছুঁড়ে ফেলার দুঃসাহস দেখিয়েছ তুমি! আমার প্রিয় আফ্রিকান কাপ।”
”বেশ করেছি কাপ ছুঁড়ে ফেলেছি। তোমার ভাগ্য ভালো এই বারান্দায় গ্রিল আছে। নাহলে তোমাকে ছুঁড়ে ফেলতাম। তুমি একেবারে গিয়ে আফ্রিকার আদিবকসীদের কাছে পড়তে। আর শোনো, আরো বেশি বেশ করেছি চা না খেয়ে!”
”নাহার!”
”কি নাহার?”
”তুমি কেন খাওনি চা! কিছু মিশিয়েছিলে না? সেজন্যই এত বিস্বাদ লাগছিল?”
মোতালেব সাহেবের চোখ দু’টো সংকুচিত হয়ে সন্দেহ নিয়ে নাহারের দিকে তাকিয়ে। নাহারের ভ্রু কুঁচকে কপালে ভাঁজ পড়ল। উনি কথাটার মানে বোঝার চেষ্টা করছেন। বুঝে উঠতেই চেঁচিয়ে উঠলেন সশব্দে,
”কিহ? কি বললে? কিছু মিশিয়েছি। যদি পারতাম তাহলে সত্যিই মিশিয়ে দিতাম। তোমার বুড়ো ভামগিরি আর সহ্য হয়না!”
”কি? আমি বুড়ভাম? ওহ্, এখন আর আমাকে ভাল্লাগে না! সেজন্যই তো দেখি ফেসবুকে অন্য পুরুষের পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দেওয়া হয়।”
”এই এই কি বলো? কার পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দিয়েছি?”
”কেন ভুলে গেছ? ঐযে তোমার কিশোরী বয়সের প্রেমিক। মো. শফিক!”
”আল্লাহ, শফিক ভাই নাতনির ছবি পোস্ট করছিল সেটায় আমি রিয়েক্ট দিছি। সেটাও তুমি ধরবা? আর নিজের ফ্রেন্ডলিস্ট যে কচি কচি সুন্দরী মেয়ে দিয়ে ভরা সেটা? সেটার বেলায় কি? নিজের চরিত্রের ঠিক নেই আবার অন্যের চরিত্রে আঙ্গুল তুলো?”
”নাহার!”
স্বামীর ধমকে এবার মিইয়ে যান নাহার। থতমত খেয়ে গেছেন অবস্থা পুরো। মোতালেব সাহেব আর যাই সহ্য করুক নিজের চরিত্র নিয়ে কোনো কটু কথা তিনি সহ্য করতে পারেন না। নাহার নিজে-ও জানেন চরিত্রগত কোনো সমস্যা কোনোদিন মোতালেব সাহেবের ছিল না।
______________________________
আঁখি এতক্ষন চুপচাপ শুনে গেলেও এখন আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ঝামেলা তো বাড়ছেই বাড়ছে। নাহার রেগে গেলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, মোতালেব সাহেব রেগে গেলেন তো মহাঝামেলা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবেন। দু’তিন দিনেও দেখা সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে না ওনার। তাছাড়া আজ থেকেই মেজ বুবুর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু। উল্টাপাল্টা কিছু ঘটলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এই দম্পতি সহজে ঝগড়া করে না। বেশ ভাবভালবাসা দু’জনের। গুরুতর অনেক বিষয়ও হালকার উপরে নিয়ে শেষ করে দেন। যেন হাওয়া। তবে, যখন দু’জনে লাগেন তখন অবস্থা বেশ বেগতিক হয়ে যায়। আর খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েই দু’জনের ঝগড়ার সূচনা হয়। ধীরে ধীরে এক কথায় দুই কথায় বিরাট আকার ধারন করে। শেষমেশ মোতালেব সাহেব ক’দিনের জন্যে বাড়ি ছাড়েন ঝগড়ায় পরাজিত হয়ে গিয়ে। আঁখি গিয়ে বড় বুবুর দরজার সামনে দাঁড়ায়। সে সঙ্কোচ বোধ করে ডাকতে। ভেতরে দুলাভাই আছে। সমীচীন হবে না। মেজ বুবুকে ডাকা যাবে না। তাহলে, আরো একদফা কেলেঙ্কারি ঘটাবে নাহার নিজেই। ছোট বুবুর ঘরে গিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ। বেশ ক’বার ডেকেও সাড়া পেল না। উপায়ান্তর এই বাড়ির একমাত্র পুত্রের ঘরের দিকে যায়। ভাগ্য সহায়। দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেছে। তবে, ভেতরের দৃশ্য দেখে সে ভীষণ হকচকিয়ে গেল। বিব্রত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিজের দৃষ্টি অবনত করে নেয়। অপর দিকের মানুষটা নিজে-ও আঁখির উপস্থিতি এই মূহুর্তে নিজের ঘরে আশা করেনি। সে কয়েক কদম আঁখির দিকে এগিয়ে এসে থেমে দাঁড়ায়। মুখটা কিয়ৎ গম্ভীর করে বলে,
”তোকে নিষেধ করা হয়েছে যখন তখন কারো ঘরে ঢুকতে। বিশেষ করে আমার ঘরে। আমি পুরুষ মানুষ।
তোর তো আমার সামনেই পড়া উচিত না। হাদিসজ্ঞান পরিপূর্ণভাবে কবে শিখবি! শুধু ঘোমটা দিয়ে থাকলেই হয়না তার মানও রাখতে জানতে হয়!”
কথা শেষ করতে করতে ততক্ষণে সে তোয়ালে সরিয়ে শার্ট নিজের গায়ে গলিয়ে নিয়েছে। আঁখি দৃষ্টি অবনত করেই রেখেছে। সে পুণোরায় শুনল,
”কেন এসেছিস?”
আঁখি মাথা না তুলেই জবাব দেয়,
”আন্টি আর আঙ্কেল ঝগড়া শুরু করেছে। আঙ্কেল মনে হচ্ছে বেশ রেগে গেছে! উনি রেগে.. ”
আঁখি নিজের কথা শেষ করার সময় পায়না। চিন্তিত হয়ে সে ঘর থেকে হুরমুরিয়ে বেরিয়ে যায়। বাবা যদি এখন রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! আজ বিকেলেই মেজর আকদ। রাতে স্বপ্ন দেখে সে আর ঘুমাতে পারেনি। সকালের দিকে ঘুমটা এসেছিল নামাজের পরপরই। কিন্তু, আবার কি যেন অগোছালো স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছিল। জেগে দেখে সেই রাতের মতো ঘামে চুপচুপে অবস্থা। তাই গোসলে ঢুকেছিল। এমনিতেও আজ সারাদিন আর সময় পাবে না। পানির শব্দের কারনে বাবা মায়ের ঝগড়ার শব্দ তার কান অবধি পৌঁছায়নি। বাবা যদি সত্যিই রেগে গিয়ে থাকেন বেশ বিচ্ছিরি অবস্থা হবে তাহলে!
_________________________________
জুবায়ের বাপ-মায়ের রুমের বারান্দায় গিয়েই দেখল দু’জনের চোখমুখ লাল হয়ে আছে রাগের প্রকোপে।
নিচে কাচের ছোট ছোট টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
সঙ্গে খবরের কাগজও টুকরো টুকরো হয়ে অবহেলায় এদিকসেদিক পড়ে আছে। সে দিব্যি বুঝতে পারছে এসব দু’জনের ঝগড়ার ফসল। ফলন এখনো আসেনি। তবে, যেকোনো মূহুর্তে আসতে পারে।
ছেলেকে দেখে নাহার দ্রুত ছেলের দিকে এগিয়ে এলেন। জুবায়ের মুখে চ-কারান্ত একটা শব্দ করে
মা’কে সতর্কবার্তা দিল দ্রুত,
”কি করো আম্মু? কাচ পায়ে ফুঁটে যাবে তো!”
নাহার দাঁড়ালেন না। ছুঁটে ছেলের পাশে আসলেন। অসহায় সুরে অভিযোগ তুললেন,
”তোর বাপ কি বলে জানিস? আমি নাকি তার চায়ে
কিছু মিশিয়ে দিয়েছি। নতুন করি নাকি পুরোনো প্রেমিকের সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখছি। তুই বল বাবা, এসব কোন বউ সহ্য করবে? তুই করবি?”
জুবায়ের কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো। মা কিসব বলছে? তবে, মায়ের কান্নার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনটা নরম হয়ে গেল। সে বাপের দিকে জবারের আশায় চাইল। বিব্রত বোধ করছেন মোতালেব সাহেব। নাহার কিযে করে? কিসব ছেলের সামনে বলছে। এতক্ষণে বোধ ফিরেছে অনেকটা মোতালেব সাহেবের। তিনি ঠোঁট ভিজিয়ে আমতাআমতা করে জবাব দেন,
”চা টা মুখে দিয়ে কুলাইনি, কি বিস্বাদ! ভেতর থেকে যেন নাড়িভুড়ি সহ সব বেরিয়ে আসবে অবস্থা। তুই বল কিছু না মেশালে কেন এমন হবে? আমি প্রতিদিন চা খাইনা?”
জুবায়ের মায়ের মুখের দিকে তাকালো। সে জানে মা কিছু মেশায়নি। কয়েক মূহুর্তে সে নিজে নিজে বাপের কথানুসারে সমস্যাটার সমাধাণ করে ফেলল। বাপের দিকে তাকিয়ে বলল,
”তুমিও না বাবা! নিশ্চয়ই তুমি খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়ে রেখেছিলে অনেক্ক্ষণ। আর যতদূর মনে হচ্ছে চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছিল এমনি পড়ে থাকায়। এতে আমি আম্মুর কোনো দোষ দেখছি না বাবা! তুমি দোষী এখানে!”
জুবায়ের সবটাই বাপের দিকে চাপিয়ে দিতে চাইছে। যেন তিনি ভুলেও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নাম না করেন। মুখটা চুপসে গিয়েও বহুকষ্টে সতেজতা ধরে রাখলেন মোতালেব সাহেব। বললেন,
”আমি কি জানতাম নাকি চা ঠান্ডা হয়ে গেছে! তোর মায়ের দোষ সব। আমি বলামাত্রই সে চা টা খেয়ে নিলেই সব সমস্যা শেষ হয়ে যেত! সে তো বুঝত যে চা ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
তেতে উঠলেন নাহার,
”তুমি কিভাবে বলছিলা? ভালোভাবে বলছিলা?”
”আমি সুন্দর করেই বলছি!”
”কিহ? দাঁড়াও দাঁড়াও প্রমান দেখাই। আঁখি আঁখি!”
মূহুর্তে আঁখি এসে হাজির। নাহার যেকোনো সময়ে ডাকা মাত্রই সে উপস্থিত হয় তৎক্ষনাৎ। যেন সারাদিন সে আলাদিনের প্রদীপের দৈত্যের মতো মনিবের ডাকের অপেক্ষায় থাকে।
”জ্বি, আন্টি!”
”বল, তোর আঙ্কেল কি ভালোভাবে বলছিল, ‘নাহার চাটা খেয়ে দেখ এমন বিস্বাদ লাগে কেন?’ বল বলসে?”
আঁখি অসহায়ের মত এদিকসেদিক তাকায়। জুবায়ের তার দিকে তাকিয়ে। কি বলবে সেটা শুনবে। আঁখি মাথা নাড়ায়। চট করে মোতালেব সাহেব বলে বসেন,
”দেখলে, আঁখি মা স্বীকার করল আমি সুন্দরভাবে বলছি!”
ক্ষিপ্ত চাহনিতে নাহার তৎক্ষনাৎ আঁখির দিকে তাকান।
আঁখি তো বলতে চেয়েছিল সে জানে না। শুধু সে মাথাটাই নাড়িয়ে ফেলেছে মুখে কিছু বলে উঠতে পারেনি।
”কি বললি মেয়ে! তুই মিথ্যা কথা কেন বললি? তুই কি রান্নাঘর থেকে শুনছিস প্রথমে কীভাবে কথা বলছিল তোর আঙ্কেল!”
এবার ভুলের পুনরাবৃত্তি করে না আঁখি। মাথা নাড়ার সাথে সাথে মুখে মৃদুস্বরে জবাব দেয়,
”না!”
”তাহলে বললি কেন শুনেছি?”
এবারে আঁখি কোনো প্রতিক্রিয়ার সুযোগ পেল না। জুবায়ের বিরক্ত হচ্ছে ভীষণ। মেয়েটাকে অহেতুকই কথার মারপ্যাচে ফেলে দোষ দিচ্ছে মা। সে-ই বলে উঠল,
”কি হচ্ছে কি মা? মেয়েটাকে অহেতুক দোষারোপ করছ কেন? তুমিই তুলেছিলে, সে শুনেছে রান্নাঘর থেকে। সে নিজে থেকে কিছু বলেনি।”
”হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক ঠিক!”
আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলেন মোতালেব সাহেব।
নাহার হাঁক ছাড়ল,
”বুড়ো তুমি চুপ করো!”
”কি হচ্ছে? কি শুরু করেছ দু’জনে? ভুলে গেছ কি আজ?”
শব্দের উৎসের দিকে তাকালো সকলে। বড় মেয়ে দাঁড়িয়ে সেদিকে। সে আবার বলল,
”মেজ যদি এসব দেখে কত কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছ তোমরা? তার এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে তোমরা এসব শুরু করেছে। একটু পর থেকেই লোকজন আসা শুরু হবে। তারা যদি দেখে! ভাগ্যিস কেউ সকাল সকাল আসেনি। তাহলে, বিনা টিকিটে ড্রামা দেখে যেত।
নিজের মেয়ের বিয়ে। প্লিজ, একটু সিরিয়াস হও তোমরা!”
জাদুর স্পর্শের মত কাজ করল কথাগুলো। থমথমে হয়ে গেল দু’জনের মুখ। সে বাপ-মা-ভাইকে পেছনে ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে আঁখিকে ডাকল সঙ্গে যেতে। সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধ সাধল নাহার। বলল,
”এসব পরিষ্কার করে যাবে!”
কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকাল তাঁর। সে একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
”আজকের কাজের বুয়া খালা এসে পড়েছে। আমি তাকে পাঠাচ্ছি। আঁখি তুই আয় আমার সঙ্গে। জুবু তুই বাহিরে যা। কেটারিংয়ের লোকজন চলে আসছে। তোর ভাইয়া গেল মাত্র বাহিরের দিকে! ডাক্তার মানুষ এসব জিনিস ভালো বুঝবে না। জলদি যা।”
জুবায়ের দ্রুত প্রস্থাণ করল। সে নিজে-ও আঁখিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। পেছনে দাঁড়িয়ে রইল শুধু এক জোড়া দম্পতি। এই মূহুর্তে যাদের দু’জনের চেহারাতেই মেয়ে বিদায়ের যন্ত্রণা স্পষ্ট। মোতালেব সাহেব একহাতে টেনে স্ত্রীকে বুকে আনলেন। সন্তর্পণে পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
”এটাই প্রকৃতির চিরায়ত নিয়ম নাহার। একদিন এই নিয়ম রক্ষার্থে তুমিও এসেছিলে আমার ঘরে। পৃথিবীর সব মেয়েকেই এই নিয়ম মানতে হয়!”
স্বামীর বুকে মাথা হেলান সম্পূর্ণভাবে নাহার। ব্যথিত গলায় উদ্ভ্রান্তের মত বলেন,
”এই নিয়ম শুধু কেন মেয়েদেরই মানতে হবে! কেন? তোমরা ছেলেরা কেন মানবে না? সমাজ এতবেশি দুই চোখা, পক্ষপাতদুষ্ট কেন হবে মেয়েদের প্রতি?”
কিছু বলেন না মোতালেব সাহেব। কেবল স্ত্রীকে একটু ভরসা, আস্থা, স্বস্তি দিতে মাথার একপাশে চুমু খান৷
__________________________________
বিকেলে আকদের কাজ সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। বরপক্ষ মসজিদ থেকেই বিদায় নিয়েছেন। এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে অনেকটা সময়। প্রধানীয়া ভিলা মানুষের পদচারণায় মুখরিত। লোকজন গিজগিজ করছে একেবারে। মেহেন্দির অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাদে করা হয়েছে। সবাই উপস্থিত থাকলেও সেখানে জুবায়ের উপস্থিত নেই। জরুরি কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায় তাঁকে ছুটতে হয়েছে। মাত্রই ফিরল সে। মা’কে খোঁজ করল আগে। রান্নাঘরের দিকটায় পেয়েও গেল কিছু আত্মীয় সমেত। সকলের সঙ্গে স্বল্প পরিসরে কুশল বিনিময় শেষে মা’কে কিছু জিনিস একান্তে ডেকে বুঝিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে এগোয়। দরজা হাতের ধাক্কায় খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই হকচকিয়ে যায়। ক্ষণিকে রাগে পুরো শরীর ঝাঁকুনি দেয়। তাঁর মুখ থেকে ক্রোধপূর্ণ গলায় আপনাআপনি বেরিয়ে আসে,
”তুই এখানে কেন? বলেছিলাম না কোনোদিন তোর মুখ দেখতে চাই না!”
_____________________________________
®সামিয়া বিনতে আলম