#অভিশপ্ত_জীবন
অন্তীম পর্ব

    লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

    তাই ওর মায়ের দেওয়া এটা সেটা সে খায়। রজনীর স্কুলে নাকি মাঝে মাঝে যেয়ে রজনীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু রজনী পাত্তা দেয় না। বাড়ি ফিরেই ওর আব্বাকে সব কিছু বলে দেয়। আজ বিকালে আনিস ওই দোকানদার কে বলে,ভালোই ভালো তোর বউ কে সামলে রাখ নয়তো আমার হাতে মাইর তুইও খাবি সাথে তোর বউও খাবে। তখন আনিসের সাথে ওই দোকানদারের এক কথা দুই কথা হতে হতে হাতাহাতি শুরু হয়। হইহট্টগোল শুনে আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি আনিসের হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। নিজের মধ্যে চেপে রাখা রাগ কে আর সংযত রাখতে পারলাম না। পাশেই দেখি গাছের কিছু মোটা ঢাল পড়ে আছে, কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি ঢাল টা নিয়ে দোকানদারে পিঠে দুই/তিন বাড়ি মেরে দিই। উপস্থিত লোকজন আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে কিন্তু আমি উনার দোকানের আসবাবপত্র গুলোতে ইট পাটকেল মারতে থাকি।

    মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে,, কি মনে করেছে আমাকে সবাই, যখনি একটু সখ আমাকে ধরা দিবে আর তখনি কেউ তা কেড়ে নিতে আসবে কেন? না আর চুপ থাকবো না। নিজের সুখ কে মুঠো বন্দী করে রাখতে আমি এখন সব কিছু করতে পারি। প্রয়োজনে এই দোকান কেউ ভেঙে তুলে দিবো এখান থেকে। আমি চিৎকার করে বলতে থাকি আর কখনো যদি তোর বউ আমার মেয়েদের বা স্বামীর দিকে নজর দেয় তাহলে সাথে সাথে চোখ তুলে ফেলবো। তোর দোকান দুইদিনের মধ্যে এখান থেকে সরায় নিয়ে যাবি নয়তো আমি আগুন লাগিয়ে দিবো, মনে রাখিস। রাগ যেন কোন ভাবেই কমছে না, মনে হচ্ছে খুন করে ফেলি ওই দুজন কে।

    কয়েকজন লোক আমাকে আর আনিসকে টেনে নিয়ে বাড়ির ভিতর গেছে।আনিসের হাত কেটে গেছে, ঘর থেকে ডিটল এনে হাত পরিষ্কার করে বেধে দিলাম। আনিসের বউ আবারও ফিরে আসার জন্য নয়,, শুধু মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সাথে দেখা ও কথা বলার জন্য একটু সুযোগ চাইতো এর ওর মাধ্যমে, কিন্তু আনিসের পরিষ্কার কথা, যদি এতোই মায়া থাকতো তাহলে ছেড়ে যেতো না। আমাদের সাথে এমন মারামারি হওয়ার মাসখানেক পরে ওই দোকানদার দোকান বন্ধ করে আবারও ঢাকায় চলে গেছে।

    আনিস আজ পর্যন্ত কখনো আমার মন খারাপ হবে এমন কোন কিছু করে নি। আমি ও সর্বদা চেষ্টা করেছি, আমার তরফ থেকে যেন এমন কিছু না হয়, যাতে আনিসের মন খারাপ হয়। দুজন দুজনকেই যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান করি। স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মান অত্যন্ত জরুরি বিষয়। প্রথম প্রথম ভাবতাম আনিস হয়তো আবারও ওই বউকে নিবে কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই আনিসের প্রতি আমার আস্থা বেড়ে যাচ্ছে। এমন একটা ভালো মানুষকে ছেড়ে কোন মেয়ে চলে গেছে তা ভাবতেও অবাক লাগে।

    দেখতে দেখতে মেয়ে দুটো বড় হয়ে গেছে, রজনী এইবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। মেয়েটার পড়াশোনার প্রতি খুবই আগ্রহ। নিশি ক্লাস সেভেনে পড়ে। একদিন বিকাল বেলা বসে রজনীর মাথায় তেল দিয়ে চুল গুলো আঁচড়ে দিচ্ছিলাম আর পাশেই নিশি বই নিয়ে বসে পড়ছিল। এমন সময় আনিসের ওই প্রতিবেশী বোন আসে (যার বিয়ে মুহিতের গ্রামে হয়েছে) উনি আমাদের এমন সুখি পরিবার দেখে খুবই খুশি হোন। আর বলেন,, আল্লাহ কখনো ভালো মানুষের কষ্ট গুলো কে চিরস্থায়ী করে না। উনি কথায় কথায় বললেন যে, আমাকে তালাক দেওয়ার ৫/৬ বছর পরে রুনার জরায়ুতে টিউমার ধরা পরে। তাই অপারেশন করা লেগেছিল। অপারেশন করার বছর খানেক পরেই নাকি সামি পানিতে পড়ে মারা গেছে। যেহেতু জরায়ু অপারেশন করার পরে আর বাচ্চা হয় না তাই তারা নিঃসন্তান জীবন পার করছে। শিহাবকে নাকি এখন মুহিতই লালন পালন করে নিজের ছেলের মতো।

    সামি মারা গেছে কথা টা শুনে খুব খারাপ লাগছে,, কত আদর যত্নে রেখেছিলাম,, সামির ছোট ছোট হাত পা চোখ সব কিছু আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠেছে। আমি কখনো চাইনি মুহিতের শাস্তি এইভাবে হোক।বাবা মায়ের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হলো সন্তানের জীবন দিয়ে। খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু কিছু কিছু মুহূর্তে কান্না করাটা দৃষ্টিকটু তাই কোন রকম নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। উনি আরো কিছুক্ষণ গল্প করলেন। রজনী কে বিয়ে দিবো নাকি জিজ্ঞেস করলেন। রজনী কে অনেক পড়াশোনা করানোর সখ আমার। যদি কখনো বিয়ে দিই তাহলে আমি যাচাই-বাছাই করে বিয়ে দিবো। উপরের সৌন্দর্য দেখে না।

    আমার জীবনে মুহিত ছিলো মাকাল ফল,, এমন অন্য কোন মাকাল ফলের হাতে রজনী বা নিশি পড়ুক তা আমি মা হয়ে কখনো চাই না।

    অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য আনিসের শরীর অত্যন্ত দুর্বল,,, সব সময় কোন না কোন অসুখ লেগেই থাকে। এদিকে রজনীর বয়স প্রায় ২০ বছর পার হয়ে গেছে। অনার্স ২য় বছরের ছাত্রী। মেয়েটা তার সব গোপন কথা গুলো আমাকে বলে। রজনী একটা ছেলে কে খুব পছন্দ করে। আনিস ও চাই রজনী কে বিয়ে দিতে, কারণ নিশি ও বড় হয়ে গেছে। হায়াত মওতের কথা তো বলা যায় না। আল্লাহ না করুন যদি আনিস মারা যায় তাহলে মেয়ে দুটো কে নিয়ে আমি মহা সাগরে পতিত হবো। আমি রজনীকে বললাম তার পছন্দের ছেলে কে দেখতে যাবো।দিন তারিখ ঠিক হলো, আমাদের মাথা মুরোব্বি কিছু লোকজনদের সাথে নিয়ে আমি আর আনিস ও গেলাম।

    ভাগ্যের চাকা বড়ই নির্মম। ছেলেটার বাড়ি মুহিতের গ্রামেই কিন্তু পাড়াটা ভিন্ন। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে বিয়ের আলোচনা হওয়ার কথা কিন্তু পাত্র পক্ষের তেমন কোন মানুষ নেই। আমি ছেলের বাবা কে জিজ্ঞেস করলাম,, কোন লোকজন দেখছিনা,, কেউকে জানান নি?? তখন তিনি বললেন, সবাই আসবে, উত্তর পাড়ায় একটা ঝামেলা হয়েছে তাই সবাই ওখানে গেছে। উত্তর পাড়া শুনতেই কেন যেন ইচ্ছে করছে কার কি হয়েছে তা শোনার। তাই জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?

    তিনি বলেন,, মুহিতের পালিত ছেলে শিহাব কে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। বদমাশ ছেলে সারাদিন গাজা খায় আর গাজা কেনার টাকা দিতে না চাইলে মুহিত আর ওর বউকে মেরে টাকা নিয়ে যায়। বেটা চোরও আছে,, গ্রামের মানুষের কোন কিছু বাইরে রাখার জো নাই ওর জন্য। উচিত শিক্ষা হয়েছে শালার।

    মনে মনে হাসি পাচ্ছে,, এটাই আল্লাহর বিচার ,, শুনেছিলাম মুহিত যখন ঢাকার ওই মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে এসেছিল তখন বউয়ের কথায় মা কে মেরেছিল। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।

    রজনীর বিয়ে হয়েছে,, জামাইয়ের স্বভাব চরিত্র মাশাল্লাহ, দেখতে ও খুব সুন্দর। কোম্পানিতে চাকরি করে। প্রতি ঈদে আমাদের সমস্ত দ্বায়িত্ব পালন করে জামাই। নিশি কে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে রাখতে চাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।

    দোয়া করবেন সবাই,, নিশির ভাগ্যটা যেন ভালো হয়।

    আল্লাহ হাফেজ 💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here