“অভিশপ্ত ডায়েরী”
#পর্ব_৩_৪
লেখিকা_সামিয়া_আহামেদ
ডায়েরিটি আমি নিয়ে আমি বাসার দিকে রওয়ানা করলাম।বাসায় যাওয়ার সময় আমি প্রচুর ক্লান্ত ছিলাম।আমার কাপড় ভেজা থাকায় ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম।আমি হাটতেও পারছিলাম না।মনে হচ্ছিল বাসায় আর কখনো পৌছাতে পারব না।অবশেষে প্রচুর কষ্টে আমি বাসায় পৌছলাম।আমি ভেবেছিলাম বাসায় ঢুকার সময় কেউ হয়তো দেখে ফেলবে।আম্মু দেখলে তাকে সত্য ঘটনা বললে সে আমাকে উন্মাদ ভাবতে পারে।কিন্তু আম্মু,আব্বু দুজনই ঘুম ছিল।বাসায় পৌছে এতই ক্লান্ত ছিলাম যে আমি ভেজা কাপড় পরেই ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আম্মু পাশে বসে। আম্মু বলল,“ঘুমিয়ে থাকো লক্ষ্মীটি, তোমার শরীরে জ্বর।তুমি অপেক্ষা কর। আমি তোমার জ্বর মাপার জন্য থার্মোমিটার নিয়ে আসছি।”আম্মু কিছুক্ষণ পর থার্মোমিটার নিয়ে এসে আমার জ্বর মাপল।জ্বর মেপে দেখলেন ১০৩ ডিগ্রী জ্বর।আম্মু বললেন,“আমি এক্ষণি এমারজেন্সী নাম্বারে কল দিয়ে তোমার জন্য একটা ফিজিশিয়ানকে বাসায় ডাকি আর তোমার বাবাকেও কল করি যেন সে দ্রুত বাসায় এসে পরে।”আমি ২ দিন যাবৎ ভীষণ অসুস্থ ছিলাম।২ দিন শয্যাত্যাগ করে উঠতেও পারিনি।আম্মু স্কুলে কল করে আমার টিচারকে ইনফর্ম করল যে অসুস্থতার জন্য আমি পরীক্ষা দিতে পারব না।সুস্হ হওয়ার পর আমি আমার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা আনতে গেলাম কিন্তু সেখানে কোন ডায়েরী ছিল না।আমি আমার রুমের সব জায়গায় ডায়েরীটা খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না।কিছুদিন পর্যন্ত আমি ডায়েরীটা খোঁজার পরও আমি যখন ডায়েরীটা পেলাম না আমি ভাবলাম যা হয়েছে হয়ত ভালো হয়েছে।কিছুদিন পর্যন্ত আমি পড়াশুনা নিয়ে এত ব্যসত ছিলাম যে ডায়েরীর ব্যাপারটি আমি প্রায় ভুলেই গেছি।
একদিন প্রায় রাত ৩ টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।এপাশ ওপাশ করার পর ও ঘুম আসলো না। তাই ভাবলাম বারান্দায় যাই।বারান্দায় আমি যখন ইজিচেয়ারে বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম তখন আমি একটি অপরিচিত কণ্ঠ শুনতে পেলাম।আওয়াজটা কিচেেনর দিক থেকে আসছিল।তাই আমি কিচেন এ গেলাম।শুনতে পেলাম কেউ যেন বলছে,”পরশু দিনই সেই দিন যার জন্য আমি শত বছর অপেক্ষা করেছি।পরশু দিনই আমি আমার উদ্দেশ্যে সফল হব।”কে সেখানে জানতে যখন আমি কিচেনে ঢুকলাম তখন দেখলাম আম্মু একা দাড়িয়ে।আমাকে দেখে আম্মু হচকিয়ে গেল।“কিছু লাগবে,মামনি?”আমি বললাম,“হ্যা,আমার রুমে পানি নেই।”আমি পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে এলাম।ভাবতে লাগলাম, কিচেন থেকে কার কণ্ঠ শুনতে পেলাম।আর পরশুদিনই কি হতে যাচ্ছে? এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে টেবিলে ব্রেকফাস্ট করার সময় বাবা আর আমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম।বাবা বলল,“কেমন কাটছে দিনকাল?পড়াশুনা কেমন চলছে? আমি বললাম,“ভালো,আমার টেস্ট এর রেজাল্ট দিয়েছে।আমি ফোর্থ হায়ারিং স্কোর করেছি। বাবা বলল,“ভালো কিন্তু পরবর্তীতে আরও ভাল করবে।আমি বললাম,“অবশ্যই করব।”আমি বললাম,“তোমার লুসি কেমন আছে?”বাবা বলল,“সে খুব ভালো তার বাচ্চাগুলো তার মত ভালো শিকারী হয়েছে।”আমি বললাম,“খুবই অবাক বিষয়,কিছুদিন আগেই তো দেখলাম তারা জন্ম নিল।”বাবা বলল,“এর চেয়ে ও অবাক জিনিস আমি গতকালকে ফরেস্টে দেখলাম।দেখলাম প্রায় শখানেক বাদুড় মাটিতে পড়ে আছে এবং তাদের কারো চোখ নেই যেন কেউ তুলে ফেলেছে। ব্রেকফাস্ট করার পর আমি সারাদিনব্যাপী ভাবতে লাগলাম যে কিছু অশুভ হতে চলেছে যা আমরা বুঝতে পারছিনা।আমার সেদিন লেকের ঘটনাটিও বিরাট কোন বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।রাত ১১ টার পর আমি যখন ঘুমাতে যাব তখন হঠাৎ একটা দমকা বাতাসে আমার দরজা খুলে গেল।তাই আমি যখন দরজা বন্ধ করতে গেলাম আমি অনুভব করলাম কিছু যেন পুড়ছে।তাই মনে মনে ভাবলাম হয়ত কিচেনে কিছু পুড়ছে।তাই আমি দৌড়ে গেলাম য়েয়ে দেখলাম স্টোভে কিছুই নেই।কিন্তু সেই গন্ধটা কিচেন থেকেই আসছে।তখন হঠাৎ করে আমার হাতের দিকে চোখ পরতেই দেখলাম আমার আংটিটা নেই।তাই ফ্লোরে আংটি খুঁজতে লাগলাম।ভাবলাম হয়ত কার্পেটের নিচে চলে গেছে।তাই কার্পেট উঠালাম আমি।কার্পেট উঠানোর পর আমি যা দেখলাম তা দেখে আমি নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারলাম না। দেখলাম একটি বেসমেন্ট। এই গুপ্ত কক্ষটি এতদিন আমাদের দৃষ্টির অগোচরে ছিল।তার চেয়েও বেশী ভয় পেলাম
#পর্ব_৪
আরও বেশী ভয় পেলাম বেসমেন্ট এর চারদিক রক্ত দেখে।তাই আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু পরক্ষণে ভয় কাটিয়ে ভাবলাম, সেদিন যেমন আমার সাথে লেকে ঘটনা ঘটেছিল তেমন কেউ বিপদে পরল নাকি? তাই আমি দ্রুত বেসমেন্টের নিচে গেলাম।যেয়ে যা দেখলাম তাতে আমি স্তম্ভিত হয়ে পরলাম।দেখলাম একটি বিরাট অগ্নিকান্ড আর তার সামনে দাড়িয়ে মন্ত্র পড়ছে আর তাতে অনেক গুলো চোখ সেই আগুনে পুড়ছে আর যে এসব করছে সে আর কেউ না স্বয়ং আমার মা।আমি এসব দেখে ভয়ে পাথর হয়ে গেছি।আর আমার আম্মুর চোখ বন্ধ করে ছিল তাই সে আমাকে দেখতে পাচ্ছিল না।একটু পরই দেখলাম আমার আম্মুর সামনে সেই নীল ডায়েরীটি।আর সে ড়ায়েরীটা শূন্যে ভাসছে।এবং সে তারপর সে নিজের হাতে একটি বুচার নাইফ নিল এবং হাত কেটে ফেলল এবং রক্ত সেই ডায়েরীতে পরতে লাগল।এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে আমি চিৎকার করলাম।আর তার নিকট দৌড়ে গেলাম।আর আমার আম্মু আমাকে দেখতে পেয়ে তার হাতে থাকা বুচার নাইফটি দিয়ে আঘাত করতে চেষ্টা করল কিন্তু আমি সময়মত সরে গিয়ে নিজেকে বাচিঁয়ে ফেললাম।কিন্তু সে থামল না আমাকে আঘাত করার জন্য আমার পিছে আসতে লাগল আর আমি প্রাণপ্রণে দৌড়াতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,“আম্মু আমি তোমার ইমিলিয়া,তুমি কেন আমাকে মারতে চাচ্ছো?”আম্মু বলল,“আমি তোর আম্মু না,আমি মিয়া,বুঝেছিস?আজকেই তোর জীবনের শেষ দিন।”এই বলে সে আমাকে ধরে ফেলল। আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম,“আমি ইমিলিয়া,আম্মু,আমি তোমার মেয়ে।” আম্মু আবার বলল,“আমি মিয়া,তোর আম্মু না।তুই আমার ডায়েরীটা এনে আমাকে সাহায্যে করেছিস।তাই তোকে আমি পুরস্কারস্বরুপ কম যন্ত্রনাময় মৃত্যু দেব।”এই বলে আম্মু বুচার নাইফটি ফেলে আমার গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল।কিছুক্ষণ এর মধ্যে আমার শরীরে অক্সিজেনের অভাবে আমার প্রায় দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আমি তার দুই হাত ছাড়ানোর প্রচুর চেষ্টা করি।কিন্তু আমি ব্যর্থ হই।তাই আমি বললাম,“ঈশ্ব-শশর তুম-মি আমার আম্মু-কে রক্ষা কর।”ঠিক তখনি আমার আম্মু আমার গলা থেকে হাত নামিয়ে ফেলল। আর বলতে লাগল,“আমাকে মাফ করো।এই বলতে বলতে আম্মু অজ্ঞান হয়ে পড়ল।আমি কাদঁতে লাগলাম,দেখলাম আম্মুর হাত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।তাই আমি দ্রুত ফার্স্ট এইড বক্স এনে আম্মুর হাত ব্যান্ডেজ করে দিলাম।তারপর বেসমেন্ট থেকে দৌড়ে যেয়ে আব্বুকে কল করে বললাম,”আব্বু দ্রুত বাসায় এসো আম্মু অসুস্থ।”আব্বু দ্রুত বাসায় আসল।আমাকে প্রশ্ন করল চিন্তিত কণ্ঠে,“তোমার আম্মু কোথায়?”আমি বললাম,“আম্মু বেসমেন্টে।আব্বু বলল,“কিসের বেসমেন্ট?কোথায়?দেখ ইমিলিয়া এটা যদি তোমার দুষ্টুমি হয়,আই এম নট গোয়িং টু ফরগিব ইউ।”আমি কেঁদে ফেললাম আর বললাম,“আমি সত্য বলছি,আসো আমি তোমাকে বেসমেন্টে নিয়ে যাই।”আমি কিচেনের দিকে গেলাম আমার আব্বুও আমার সাথে আসতে লাগল।আব্বু বেসমেন্ট দেখে অবাক হয়ে গেল।আমি আব্বুকে নিচে আম্মুর কাছে নিয়ে গেলাম।আব্বু নিচে চারপাশে অগ্নিকুন্ড আর রক্ত দেখে বিস্মিত হয়ে গেল।আমি আর আব্বু দুজন মিলে আম্মুকে বেডরুমে নিয়ে গেলাম।আব্বু কল করে একজন ডাক্তার ডেকে আনল।ডাক্তার এসে বলল আম্মুর প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে।তাই তাকে শীঘ্রই হসপিটালে এডমিট করতে হবে।আব্বু আম্মুকে হসপিটালে নিয়ে গেল,সাথে আমিও গেলাম।ডাক্তাররা যখন আম্মুকে পরীক্ষা করছিল আব্বু আমার কাছে আসল।আব্বু আমাকে প্রশ্ন করল,“কি হয়েছিল,ইমিলিয়া?তোমার গলায় এই দাগ কিসের?আমি যা দেখলাম বেসমেন্টে সেসব কি ছিল?”আমাকে সব খুলে বল?”আমি আব্বুকে লেকের ঘটনা,ডায়েরীর ব্যাপারে আর বেসমেন্টে যা যা ঘটল সবই খুলে বললাম।আব্বু আমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নার্স এসে ভয়ভীত কণ্ঠে বলল,“আপনাদের রোগী!!!জলদি আসুন।”আমি আর আব্বু দৌড়ে গেলাম যেয়ে দেখলাম আম্মু বলছে,“কাউকেও ছাড়বো না,সবাই মরবে।”আমাকে বলল,“তুইও মরবি।”আম্মু আমার নিকট আসার চেষ্টা করল কিন্তু তার হাত পা বাধা ছিল তাই পারল না।আব্বু আম্মুর এই অবস্হা দেখে সহ্য করতে পারল না।এই প্রথম আমি আব্বুর চোখে পানি দেখলাম।আব্বু বলল,“ইমিলিয়া সেই ডায়েরীটা কোথায় যা তুমি পেয়েছিলে হয়ত তা কোন কাজে আসতে পারে।” আমি বললাম,“বেসমেন্টে আছে।”আব্বু বলল,“চল আমরা বাসায় যাই।”আমি আর আব্বু বাসায় যেয়ে ডায়েরীটা খুঁজে বের করলাম।আমি আর আব্বু ডায়েরীটা খুললাম পড়ার জন্য কিন্তু আমরা পড়তে পারলাম না কারন ডায়েরীতে লেখা ভাষাটি অপরিচিত ছিল।আমার আম্মু নানারকম ভাষা জানতো তাই সে পরতে পেরেছিলেন। এখন আমি বুঝলাম যে কেন সেই অশরীরীটি ডায়েরীটা আম্মুর কাছে নিয়ে গেল আমার কাছে না।আমি হতাশ হয়ে আব্বুকে বললাম,“আম্মুকি কখনো ঠিক হবে না?”আব্বু বলল,”যখন কোন পথ দেখা যায় না,তখন সর্বদাই একটি পথ খোলা থাকে,ঈশ্বরের পথ।চল আমরা গীর্জায় যাই,প্রার্থনা করতে।”আমি আর আব্বু গীর্জায় গেলাম আর সাথে ডায়েরীও নিয়ে গেলাম।আব্বু গীর্জার ফাদারকে সব খুলে বলল এবং ডায়েরীটাও দেখাল।তিনি বললেন:”খুব অশুভ কিছু ঘটতে চলেছে, তোমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহ সবেই শুরুমাত্র…..সবেই শুরু!!! ”
(চলবে)