#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ৪
সুরমা

অবাক অনেক্ষণ ধরে শুয়ে আছে মায়ের কোলে। কিন্তু কথা বলছে না। বিলকিস বেগম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন ছেলের মন ভালো না। এই প্রথমবার ছেলেকে এমন মন খারাপ করে থাকতে দেখলেন। অবাককে কখনও কিছুতে আফসেট হতে দেখেন নি। সব প্রবলেম ঠাণ্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করে সব সময়। আজ ছেলের মুড এমন দেখে তাঁর মনটা খারাপ লাগছে।

ছেলেটা মুখ ফুটে কিছু বলছেও না। বলতে পারলে মনটা হালকা হতো। বিলকিস বেগম অবাকের চুল আলতো করে টানে দিচ্ছেন। তিনি স্নিগ্ধ গলায় বললেন,,,,
-অবাক,
-বলো আম্মা

-তোর ছোট বেলার কথা মনে আছে?
-বেশি মনে নেই। তবে ক্লাস টু থেকে সব মনে আছে।
-এরচেয়ে ছোট বেলার কথা মনে নেই?
-না। স্পষ্ট করে মনে করতে পারছি না।

-তোর বয়স যখন তিন বছর। তখন তুই কি করতি জানিস?
-বলো শোনি।
-তুই বাসার সব সাবান খেয়ে ফেলতি। মায়ের কথা শোনে অবাক বিস্মিত হয়ে চিত হয়ে শুয়ে বলে,,,,,
-গাঁয়ে মাখার সাবান?

-গাঁয়ে মাখার। কাপড় ধুয়ার সব সাবান। অবাকের চোখ বড় বড় করে। বিলকিস বেগম বলেন,,,,,

-আমি যেখানেই সাবান রাখতাম তুই সেখান থেকেই সাবান বের করে খেয়ে ফেলতি। সাবান নিয়ে খাটের নিচে চলে যেতি। ওখানে গিয়ে সাবান খেয়ে তারপর বের হয়ে আসতি।

বিলকিস বেগমের চোখ চিকচিক করছে। অবাক সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিলকিস বেগম চেষ্টা করছেন ছেলের মুড ঠিক করতে। অবাক আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,,

-আমার কোনো প্রবলেম হয়নি? মানে সাবানেতো প্রচুর ক্ষার। পেটে, মুখে কিছু হয়নি?
-না হয়নি। আমি আর তোর বাবা দুজন মিলে তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম। পরে তোর বাবা বাসায় এসে ওয়াশরুমের সোপকেস গুলো উপরে তুলে ফেলে। তুই যাতে ধরতে না পারিস ততটুকু উপরে সেট করে।

পরে কি করেছিলি শোনবি???
-বলো,
-আমি একদিন তোর খাবার নেওয়ার জন্য নিচে আসলাম। খাবার নিয়ে উপরে গিয়ে দেখি তুই রুমে নাই। আমিতো ভয়ে শেষ। কাটের নিচেও তোকে পেলাম না।

ওয়াশরুমে উঁকি দিয়ে দেখি টুলের উপর দাঁড়িয়ে তুই সোপ নেওয়ার চেষ্টা করছিস। টুলের উপর দাঁড়িয়েও যখন নাগাল পাচ্ছিলি না তখন পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে হাত দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলি।

অবাক ভয়ানক কণ্ঠে বললো,,,,,
-কি সাংঘাতিক ব্যাপার। আমি এমন করেছিলাম? বিলকিস বেগম মৃদু হেসে বললেন,,,,,
-তারচেয়েও সাংঘাতিক ব্যাপার আছে। বলবো? অবাক উঠে বসে। চোখ দুটো গোলগোল করে বলে,,,,,
-বাপরে! আমার গাঁ কাটা দিয়ে উঠেছে। এরচেয়ে আরো সাংঘাতিক ব্যাপারও আছে। বলো শোনি,,,,,অবাক পা ভাঁজ করে বসে। বিলকিস বেগম একটু নড়ে বসলেন। বললেন,,,,

-আমি তোকে দেখে গিয়ে কোলে করে নিয়ে আসি। রুমে এসে রাখতেই তুই জেদে ফ্লোরে শুয়ে কাঁদতে লাগলি।

তারপর উঠে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সব জিনিস পত্র ফেলে দিলি। সুন্দর একটা ফুলের টব ছিল বিছানার পাশে। সেটাও ভেঙ্গে ফেললি। তবুও তোর রাগ কমছিল না। সেদিন সারাদিন তুই ফ্লোরে শুয়ে কেঁদেছিলি।

অবাক ভ্রু দুটো জড়ো করে বললো,,,,
-আমি এতো দুষ্টু ছিলাম ছোটবেলায়? ভাবা যায়? বিলকিস বেগম হেসে ফেললেন। অবাকও বিস্মিত মুড নিয়ে হাসলো।

-ছোট বেলায় যে বাচ্চারা দুষ্টু হয় তারা বড় হয়ে মেক্সিমাম অনেক ট্যালেন্টেড আর শান্ত হয়। অবাক হাসছে। এই হাসি মুখটা দেখার জন্য তিনি এতক্ষণ এতো গল্প বললেন। তবে গল্পটা মিথ্যা নয়। সত্যি। বিলকিস বেগম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,,,,,,

-তোর বাবা বাসায় এসে তোকে শান্ত করেছিল। কি যে দুষ্টামি করতি তুই। আমি একা তোকে শান্ত করতে পারতাম না। খাবার খাওয়ার সময় সারা বাড়ি দৌঁড়াতি। আর আমি তোর পিছন পিছন দৌঁড়াতাম। অবাক আবার বিলকিস বেগমের কোলে মাথা রাখে। করুণ স্বরে বলে,,,,,,

-আম্মা। তিনি আবার ছেলের মাথায় হাত রেখে শীতল কণ্ঠে বললেন,,,,
-বল
-আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিতাম তাই না?? তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো। যা অতুলনীয়। তিনি হাসলেন।
-সব মা’রাই সন্তানের জন্য করেন। মা মানেই মহৎ একটা শব্দ। তবে তোকে নিয়ে আমার গর্ব হয়। তোর মতো ছেলে হয়না। কিছুক্ষণ পিনপিন নিরবতা বিরাজ করলো। তারপর বিলকিস বেগম বললেন,,,,,

-অফিস যাবি না?
-যাবো।
-দেখ কয়টা বাজে এখন। অবাক মোবাইলটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে। ১০টার মতো বাজে। অবাক বললো,,,,,

-আজ একটু লেইট করে যাই। কাজ তো সব সময় করবো। আজ একটু গল্প করি মা ছেলে। বিলকিস বেগম হাসি হাসি মুখ করে বললেন,,,,

-একদিন অফিসে না গেলেও কিছু হবে না। অফিসের কাজ এখন কমিয়ে আনতে হবে। ঘরের বউকে সময় দিতে হবে বেশি বেশি। অবাক মায়ের দিকে তাকায় হকচকিয়ে। এখানে বউ আসলো কোথা থেকে? বিয়ে করার নাম নেই আর মা বিয়ের পরের চিন্তা করে ফেলছেন! আগে কখনও মায়ের মুখে বিয়ের কথা শোনে নি। তিনি আবার বললেন,,,,
-বউরা স্বামীর কাছ থেকে এতো কিছু চায় না। তাদের সময় দিলেই খুশি। আর বউ খুশি মানে সংসার সুখের।

অবাক বিচলিত কণ্ঠে বলে,,,,,
-হঠাৎ বিয়ের কথা কোথায় থেকে আসছে আম্মা? বিলকিস বেগম ছেলের দিকে তাকালেন স্নিগ্ধ চোখে। ছেলের চোখে গভীরে লুকিয়ে আছে রহস্য। তিনি বললেন,,,,

-বয়স হয়নি বিয়ের? বিয়ে করাতে হবে না? অবাক অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়ের দিকে। বলার মতো কোনো কথা এই মুহূর্তে মাথায় আসছে না।
বিলকিস বেগম অবাকে চাহনি দেখে বললেন,,,,,

-তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস সারা জীবন এমন দেবদাস থেকে যাবি?
-না মানে। বিয়েতো করবো। তবে একটু গুছিয়ে।
-কি গুছানোর বাকি আছে শোনি? অবাক কথা বললো না। সে মাথা ঘুরিয়ে ভাবছে অনুর কথা। এই মুহূর্তে কি মাকে অনুর কথা বলা ঠিক হবে??

মাকে বললে হয়তো এখনি বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবে। তিনি যা বলবেন তাই। তাঁকে দমানো কঠিন। তখন হবে আরেক মহাবিপদ। অবাক আমতা আমতা করতে লাগলো। বিলকিস বেগম কোমল চোখে চেয়ে বললেন,,,,,,

-আমি অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোর বিয়েটা এই মাসেই দিবো। আমি ভেবেছিলাম তুই নিজেই নিজের বিয়ের কথা বলবি। তাছাড়া আমিও বলি নি। তোর বন্ধুদের সবার এক দুটো করে বাচ্চা আছে। যাই হোক, তোর বিয়ে এতদিন না দেওয়ারও একটা কারণ ছিলো। অবাক হুরমুর করে উঠে বসলো।

-আম্মা, এই মাসের ভিতরে কিভাবে বিয়ে হবে??
-কেন? কাজি এনে বিয়ে দিবো। বড় অনুষ্ঠানও হবে। আমার একমাত্র ছেলে। আমি কিছু কমতি রাখবো না। সব বেশি বেশি করে করবো।

-আমি এটা বলছি না।
-তাহলে কি বলছিস?? অবাকের অস্থির লাগছে। কপালে ঘাম জমা হয়েছে। বার বার ঢোক গিলছে। বিলকিস বেগম অবাককে এভাবে দেখে বিচলিত হয়ে বললেন,,,,

-কি হলো? ঘামছিস কেন?? শরীর খারাপ লাগছে??
-না! তবে কেমন জানি লাগছে। একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। অবাক রোমাল বের করে কপাল মুছে। বিলকিস বেগম বলেন,,,
-লেবুর পানি এনে দিবো?
-না না। কিছু লাগবে না। ঠিক হয়ে যাবে।
-তুই বস আমি নিয়ে আসি। খা। শরীর শীতল হবে।

বিলকিস বেগম বিন্তিকে বলে লেবুর শরবত তৈরি করেন। তারপর সেটা নিজেই নিয়ে আসেন। বিন্তিকে দিয়ে পাঠালে অবাক খাবে না। তাই তিনি নিজেই নিয়ে আসেন।

অবাক কাপড় চেঞ্জ করে ফেলে। আজ অফিস যাবেই না। একদিন না গেলে তেমন কিছু হবে না। বিলকিস বেগম শরবতের গ্লাসটা অবাকের দিকে এগিয়ে দিলেন। সে বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে শুয়ে থাকে। বিলকিস বেগম বললেন,,,,
-এখন ভালো লাগছে?
-হুম

-তোর সাথে জরুরি কিছু কথা বলতাম। অবাক মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
-বিকালে বলো। এখন একটু ঘুমাই। শরীরটা কেমন জানি লাগছে। বিলকিস বেগম অবাকের পিটে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,,
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুই রেস্ট নে।

মায়ের সাথে এখন আর কথা বলা যাবে না। কথা বললে দেখা যাবে আবার বিয়ের টপিক নিয়ে এসেছেন।বিলকিস বেগম কিছুক্ষণ বসে থেকে আবার নিজের রুমে চলে আসেন।

অবাক ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অনুর সাথে কথা বলছে। অনু চুপ করে শোনছে। অবাক থেমে থেমে বললো,,,,,,

– আম্মা আগে কখনও বিয়ে নিয়ে কথা বলে নি। আজ হঠাৎ বিয়ের কথা কেন বলছে বুঝতে পারছি না।
– তোমারতো বিয়ের বয়স হয়েছে। মামী সেই জন্য বলছে। এতো টেনশন করার কি হয়েছে?

– জানি না। তবে কেন জানি টেনশন লাগছে। অনু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,,,
– চলো বিয়েটা করেই ফেলি। আমার এখন বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। অবাক বিস্মিত কণ্ঠে বললো,,,,
– আর ইউ শিওর অনু?
– হুম।

– তোমার না সামনে পরীক্ষা? তোমার ক্যারিয়ার ?
– আচ্ছা একটা কথা বলোতো,, কোথাও কি লিখা আছে বিয়ের পর ক্যারিয়ার গড়া যায় না? বা পরীক্ষা দেওয়া যাবে না???

– আমি সেটা বলি নি। আমি বলতে চাইছি,,,,,অনু অবাককে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
– শোন আমরা জাতি হিসাবে নির্বোধ। আমাদের উচিত ছেলে মেয়েদের উপযুক্ত সময়ে বিয়ে দেওয়া। বিয়ের আগে বরং ছেলেমেয়েরা টাইম নষ্ট করে প্রেম, ভালোবাসা, রাগ অভিমানে।

তখন ক্যারিয়ারেরও বারোটা বাজে। আর বিয়ের পর রিলাক্সে ছেলে মেয়েরা নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করে ফেলে। তখন কিন্তু কোনো পিছুটান থাকে না। তুমি থিংক করে দেখো। বিয়ের পরও অনেক মানুষ পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে এন্ড ভালো জবও করে। অবাক হেসে দিলো। অনু করুণ স্বরে বললো,,,

-হাসো কেন? আমি খারাপ কি বললাম।
– খারাপ বলো নি। তবে হাসছি এটা ভেবে যে অনু রাণী তাহলে বিয়ের জন্য প্রস্তুত।
– দূরে থেকে মন খারাপ করে বসে থাকার চেয়ে কাছে এসে প্রেম সাথে পড়াশোনাও। এটা ভালো নয় কি?

এবার অবাক হো হো করে হাসে। অনু ভ্রু উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। অবাকের হাসিটা এখন বিরক্তি লাগছে। অনু উচ্চ স্বরে বলে,,,,,

– আবার হাসছো তুমি??? অবাক অনেক চেষ্টা করে নিজের হাসির গতি কমিয়ে আনে। তারপর বলে,,,,,,
– আসলে বিয়ে করবো এটা ভেবে বেশ মজা লাগছে। এতদিন তোমার পড়াশোনার কথা চিন্তা করে বিয়ের কথা বলি নি।

এখন তোমার পড়াশোনার কথাই চিন্তা করে বিয়ে করবো। এটা যদি আরো কয়েকবছর আগে মাথায় আসতো তাহলে কতো আগে বিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম। হায়রে, আমার কি কপাল! এতদিনেতো আমি এক দুটো বাচ্চার বাবা থাকতাম।

– আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হলে ওদের প্রাপ্ত বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দিবো। বিয়ের পড় পড়াশোনা করবে। আমি আবার আমার বাচ্চাদের উপর এমন নির্মম আচরণ করবো না বাবা। যদি শোনি তারা কাউকে পছন্দ করে সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।

অবাক ব্যালকনিতে বসলো। তার বেশ মজা লাগছে এখন। অনুর আছে ফ্রেশ মুডে। এখন একটু অনুকে লজ্জা দেওয়া যাক। লজ্জা পেলে অনুকে অপরূপ লাগে। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলবে, তুমি চুপ করবে? অবাক শান্ত কণ্ঠে বললো,,,,

– অনু তুমি বাচ্চার কথা বলছো? আমিতো ভাবতেই পারছি না। অনু চমকায়। সত্যি কি সব বলছে! অনু চুপ হয়ে যায়। অবাক আবার বলে,,,,,

– কয়টা বাচ্চা নিবে এটাও ঠিক করে নিয়েছো??? অনু আমতা আমতা করতে থাকে। অফ! এসব কি কথা শুরু হয়েছে? এরকম কথা সে কখনও বলে নি। অনু কাঁপা গলায় বললো,,,,,

– আমি এখন ফোনটা রাখি। পরে কথা বলবো।
– পরে কেন? এখনি বলো। এখন কথা বলতে কি তোমার লজ্জা লাগছে?? অবাক বুঝতে পারছে অনু লজ্জা পাচ্ছে। তবুও সে একটু দুষ্টামি করলো। অবাক বললো,,,

– ভিডিও কলে আসতো অনু সোনা। তোমার মুখটা একটু দেখি। অনু চোখ বড় বড় করে। কি শয়তান বেডা। অনু ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,,,,,

– না দেখতে হবে না। যাও ফাজিল কোথাকার। অনু ফোন কেটে দেয়। অবাক আপন মনে হাসতে থাকে। পাগলি মেয়ে। নিজেই বলে আবার নিজেই লজ্জা পায়।

অবাক ভাত খাচ্ছে। বিলকিস বেগম অবাকের পাশে বসে আছে। অবাক মায়ের দিকে একবারো তাকাচ্ছে না। সে নিজের মতো খেয়েই যাচ্ছে। বিলকিস বেগম নীরবতা ভেঙ্গে বললেন,,,

-আমি কাল হায়দার ভাইর বাসায় যাবো তোর বিয়ের পাকাপাকি কথা বলতে। মায়ের কথা শোনে অবাক হকচকিয়ে তাকায়। মুখে ভাত নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে তাকে। তারপর কোনোরকম মুখের খাবারটা শেষ করে বলে,,,,,

-হায়দার সাহেবের বাড়ি কেন?
-উনার মেয়ের সাথেই তো তোর বিয়ে। একটা দিন তারিখ ঠিক করে আসি। এবার অবাকের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কোটরি থেকে দুটি চোখ বের হয়ে আসতে চাইছে। সে এতোটাই বিচলিত যে মুখ দিয়ে কথাটাও বের হচ্ছে না।

মনে হচ্ছে কেউ গলায় টিপ দিয়ে ধরে রেখেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। শরীর থেকেও পানি পড়ছে। অবাক সোজা হয়ে বসে। কথার মাঝে জড়তা তৈরি হয়েছে। সে থুতলে বলে,,,,,,

-উনার মেয়ের সাথে বিয়ে মানে??? এসব তুমি কি বলছো? বিলকিস বেগন আবেগময় কণ্ঠে বললেন,,,,

-এক সময় তোর বাবার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন হায়দার ভাই। তোর বাবার দুঃসময় উনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এমনকি উনি টাকা দিয়েও সর্বোচ্চ সাহায্য করেছিলেন তোর বাবাকে। বিলকিস বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।

অবাক হা করে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আম্মা এসব কি বলছে? কেন বলছে? এ জীবনে অনুকে ছাড়া কাউকে নিয়ে ভাবাও সম্ভব নয়। অবাক বলে,,,,,,
-আম্মা, এসব কি বলছো? আগে তো কখনও বলো নি এসব কথা। বিলকিস বেগম মৃদু হেসে বললেন,,,,

-আগে বললে কি হতো? মেয়েটা তো ছোট ছিল এতদিন। না হলে আমি কবেই তোর বিয়ে দিয়ে দিতাম। একা একা বাসায় বসে থাকি। এভাবে থাকতাম নাকি? মেয়েটা এবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে। তাছাড়া তোরও তো বয়স হয়ে গেছে।

অবাক এবার অত্যাচার্যের সর্বোচ্চ পর্যায়। আম্মার মাথাটাতা খারাপ হলো নাকি? কি সব বলছে এসব। অবাক খাবার প্লেইট দূরে ঢেলে দিয়ে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে,,,,,

-তুমি তখন থেকে কি সব বলছো? ইন্টারে পরীক্ষা দিয়েছে একটা মেয়ে,,,,,অবাক আর কিছু বলতে পারছে না। তার সারা শরীর থরথর করছে। সে বাম হাত দিয়ে নিজের চুলে আঙ্গুল চালায়। বিলকিস বেগম শীতল কণ্ঠে অবাকের গাঁয়ে হাত দিয়ে বলেন,,,,,
-তুই এতো উত্তেজিত হচ্ছিস কেন? মেয়েটার বয়স তোর থেকে অনেক কম জানি। তবে তোর ওকে পছন্দ হবে। খুব সুন্দর মেয়ে। নম্র, ভদ্র। মুখটা মায়াবী। পড়াশোনায় খুব ভালো।

আমি মাঝে মাঝেই গিয়ে মেয়েটাকে দেখে আসি। আমার খুব ভালো লাগে মেয়েটাকে। আমার খুব পছন্দ। হায়দার ভাই গরীব মানুষ বলে মেয়েটাকে মনের মতো পরিবেশ দিতে পারেন নি। আমি প্রতি মাসেই পড়াশোনার খরচ পাঠাতাম। উনি ফেরত দিতেন।

বলতেন আমি যখন পারবো না তখন নিবো। অবাকের চোখ মুখ লাল হলো। চুল গুলো রাগে দুঃখে খাড়াখাড়া হয়ে আছে। না পারছে হজম করতে না পারছে কিছু বলতে।

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here