#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব – ২৯
সুরমা

অনুকে আজ গর্জিয়াছ ভাবে সাজায়। লালটুকটুকে লেহেঙ্গা, গা ভর্তি গহনা। সব কিছু মিলিয়ে পুতুলের মতো লাগছে তাকে। এতো গর্জিয়াছ সাজে অনুর কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। অনুর কাছে নিজেকে কাকতাড়ুয়া মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই।

আজকের দিনেও যদি সে সাজতে আপত্তি করে তবে সবার মন খারাপ হবে। তার মা ভাই কষ্ট পাবে। অনু চায়না তার জন্য আর কেউ কষ্ট পাক। অনু রুমে একা। লোকজন সবাই নিচে। বর যাত্রী এসেছে।

গাড়ির শব্দ শুনে সবাই সেখানেই ছুটে গিয়েছে। অনু নিজেকে আয়নার সামনে আবিষ্কার করে। আয়নায় তাকে চেনা যাচ্ছে না। এটা তার আরেকটা প্রতিকরূপ। এই রূপে দেখার স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই। প্রত্যেকটা মেয়েই স্বপ্ন দেখে। তবে, তার স্বপ্ন আজ ধূসর। রঙিন লাগছে না। অনু জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে। সে ডুবে যায় কল্পনায়।

অনুর ফোনে মেসেজের টোন বেজে উঠে। অনু কিছুটা চমকে উঠে। সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ইমনের মেসেজ। অনু মেসেজটা সিন করে। ইমন লিখেছে,

‘আজ কেমন লাগছে আমার মহারাণীকে? স্বপ্নিল কোন রাজকন্যা নাকি মায়াবতী পুতুল? দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। কখন আসবে তুমি? অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আমি। আজকের দিনেও আমাকে অপেক্ষায় থাকতে হবে? অপেক্ষা করতে আমার আপত্তি নাই। তবে, আমার মনটা আকুমপাকুম করছে তোমাকে দেখার জন্য। তাড়াতাড়ি চলে আসোতো। একনজর দেখি তোমায়।’

ইমনের মেসেজ পড়ে অনু হেসে দেয়। এই লোকটা আসলেই পাগল। অনু ইমনের জন্য মেসেজ লিখে,
‘আপনি একটা পাগল।’ মেসেজটা সেন্ট করতে গিয়েও করলো না। মেসেজটা কেটে দিলো। মনে মনে বললো, ‘আপনি অপেক্ষায় থাকুন। খুব সহজে পাওয়া জিনিসের মূল্য কমে যায়।’

ইমন মোবাইলটা হাতে নিয়ে অনুর মেসেজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু অনুর মেসেজ পেলো না। ইমন প্রিতিকে ডাকে। প্রিতি ভ্রু নাচিয়ে হাসি হাসি মুখ করে জিজ্ঞেস করে,

-কি ব্যাপার জিজু? কিছু লাগবে? ইমন এদিক ওদিক দেখে আস্তে আস্তে বলে,
-অনুকে কখন আনা হবে? এখনও আসছে না কেন? আমিতো কখন থেকে একা বসে আছি। প্রিতি চোখ বড় বড় করে তাকায়। প্রিতির রিয়েকশন দেখে ইমন আমতাআমতা করে বলে,

-না এমনি বলছিলাম। আসুক। যখন ইচ্ছে আসুক। সমস্যা নাই। প্রিতি হেসে দেয়। ইমনের মুখ কাঁচুমাচু হয়ে যায়। প্রিতি বলে,

-তোমার প্রেম দেখে আমি ফিদা জিজু। আহারে, কবে যে তোমার মতো কাউকে পাবো। আমি এখন আফসোস করছি।
-আফসোস করতে হবে না। আমি এখন চলে এসেছি। তোমার ব্যবস্থাও হবে খুব শীঘ্র।

-ওকে ওকে। অপেক্ষায় থাকলাম। আর আপুকে আনা হচ্ছে। টু মিনিটস টাইম দাও। আর এই সময়টায় নিজেকে শক্ত করো। কারণ, আপুকে দেখে আজতো তুমি শেষ।
-শেষতো কবেই হয়ে গেছিলাম। আর কি শেষ হবো?
-যতটুকু বাকি আছে ততটুকু আজ শেষ হবে। প্রিতি দাঁত বের করে হাসে।

অনুকে স্টেজে আনা হলো। দূর থেকেই অনুকে দেখে ইমনের মুখ হা হয়ে যায়। অনুকে সত্যি সত্যি আজ পুতুলের মতো লাগছে। পুতুল বললেও ভুল হবে। পুতুলের থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে। যেন, আকাশ থেকে চলে আসা এক টুকরা চাঁদ। ইমন ফিসফিস করে বলে,

-আমি হুরপরী দেখিনি। পরীও দেখিনি। তবে, অপরূপ সুন্দর্যের অধিকারী এজন মায়াবী কন্যা দেখেছি। দেখেছি চাঁদের মতো এক মানব কন্যা। প্রিতি ইমনের হাতে চিমটি দিয়ে বলে,
-কি ফিসফিস করছো বলতো?
-ইয়ে মানে কিছু না। কিছু বলিনি।

ইমন আর অনুকে বসানো হলো পাশাপাশি। তাদের দুপাশে ইমনের মা বাবা, কাজল রেখা আর রিয়াদ। বাকিরা তাঁদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে। কাজি সাহেব ইমনের পাশে বসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছেন। বেলা অনেক হয়েছে। আনুষ্ঠানিক কাজ সব বাকি। বিয়েটা আগে পড়ানো হলে একে একে সব কাজ সম্পন্ন করা হবে। ইমনের মন অনুর কাছে।

বারবার সে অনুকেই দেখছে। অনু দুএকবার ইমনের দিকে চোখ পড়তেই দেখে ইমন তাকে দেখছে। অনু তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ফেলে। কিন্তু ইমনের নজর সরে না। কাজি সাহেব লিখালিখির কাজ শেষ করে ইমনের দিকে খাতা এগিয়ে দিয়ে বলেন সাইন করতে। কিন্তু ইমন খেয়াল করেনা। কাজি সাহেব আবার বলেন,

-সাইনটা করুণ। এবারও ইমন খেয়াল করলো না। পেছন থেকে ইমনের এক বন্ধু ইমনকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলে,
-আরে ভাই, আগে বিয়েটাতো কর। তারপর যত খুশি ভাবিকে দেখিস। সময়তো চলে যাবে না। ইমন তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকেই চেয়ে আছে। সে একটু নার্ভাস হয়ে যায়। কাজি সাহেব বলেন,

-কি করতে বললাম? কোথায় হারিয়ে গেলেন? ইমন হাতের রোমাল দিয়ে মুখটা একটু মুছে একদমে বলে,
-কবুল, কবুল কবুল কবুল। এবার ঘর ভর্তি সবাই হেসে দেয়। অনুরও হাসি পেলো। আবার তার লজ্জাও লাগছে। এই লোকটা আজ মান ইজ্জতের ফালুদা বানায় দিলো। কিসব করছে নিজেও জানে না। কিছু না শুনেই হুটহাট কবুল বলতে শুরু করলো।

ইমন সবার এতো হাসহাসির কারণ বুঝতে পারলো না। আজব। হাসার মতো কি হলো? ইমন কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-সবাই হাসছে কেন? ইমনের কথা শুনে আবারো সবাই হাসাহাসি শুরু করে। এবার রিয়াদ বলে,

-অনেক হাসাহাসি হলো। এবার সবাই থামো। ইমন, তোমার সামনে খাতাটা আছে ওখানে সাইন করতে বলেছে কাজি সাহেব। আর কবুল বললে তো বললেই। সেটাও চারবার বলেছো। নাও, এবার সাইন করো। ইমনের চোখ কপালে উঠে যায়। সে অনুর দিকে তাকিয়ে দেখে অনু নাক ফুলাচ্ছে। ইমন অনেকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে,

-সরি। ইমন কলম নিয়ে তাড়াতাড়ি সাইন করতে চায়। পেছন থেকে প্রিতি বলে উঠে,
-আরে জিজু, কলমের কাপটা না খুলেই কি এখন সাইন করে ফেলবে? ইমন ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। ইমন ফিসফিস করে বলে,

-এসব কি হচ্ছে? এখন মনে হচ্ছে নিজের নামটাও কারো কাছে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। আহারে, আমার মান সম্মান আর কিছু বাকি রইলো না আজ। আজকের দিনের এমন বোকামির জন্য সারা জীবন কথা শুনতে হবে। সুযোগ পেলেই ফ্রেন্ডসরা মজা করতে শুরু করবে । সবাই ফ্যাক্ট না। কিন্তু অনু?

ইমনের সাইন করা হলে অনুও সাইন করে। দুজন চিরদিনের জন্য এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সাইন করতে গিয়ে অনুর হার্টটা মুচড় দিয়ে উঠে। হঠাৎ করেই ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করে। চোখেও জল চলে আসে। কিন্তু অনু কাঁদলো না। সব কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে রাখলো।

একে একে বিয়ের সব সম্পূর্ণ হয়। খাওয়াদাওয়ার পর্বও শেষ হয়। আসে অনুর বিদায়ের পালা। বিদায় বেলায় অনু নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। অনু ভেবেছিল বিদায় বেলায় হাসি মুখে ঘর থেকে বের হবে। কিন্তু সেটা হলো না। প্রিতির থেকে বিদায় নিতে গিয়ে দুবোন একসাথে কেঁদে উঠলো। তার কান্না আর বাঁধা মানলো না। প্রিতির সাথে অনুর হাজার রকম স্মৃতি।

সেগুলো ভালোবাসার স্মৃতি। আনন্দময় স্মৃতি। বেড়ে উঠার স্মৃতি। সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার একমাত্র সঙ্গী। চরম ভাবে ভেঙ্গে পড়ার সময় ছাঁয়ার মতো পাশে লেগে থেকে কষ্ট দূর করার সঙ্গী। অনুর জীবনের অর্ধেক পাতা পরিপূর্ণ প্রিতির স্মৃতি দিয়ে। আজ সেই মানুষটাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অনুর কলিজাটা দুটো ভাগ হয়ে যাচ্ছে। প্রিতির সাথে তার আর এতো মধুর স্মৃতি হবেনা। এতো সময় একসাথে কাটানো হবে না। হবেনা গল্প করা। আর কখনও শুনাও হবে না প্রিতির আজগবি কথাবার্তা।

মেঘকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হলো। এখন সে মোটামুটি সুস্থ। তবে এখনও তার ফুলরেস্টের দরকার। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় দরকার। সেবার দরকার। অবাক মেঘকে বাসায় নিয়ে আসে। মেঘ একবারের জন্যও অবাকের সাথে কথা বলেনি। এমনকি বিলকিস বেগমের সাথেও কথা বলেনি সে।

মেঘের এই কাজটা অবাককে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। অবাক বারবার মেঘের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। সে অনুতপ্ত এরকম একটা কাজের জন্য। এই দুর্ঘটনার জন্য যে অবাক কষ্ট পায়নি তা নয়। সেও প্রচুর কষ্ট পেয়েছে। তার পৃথিবী থমকে গিয়েছে। ছাঁয়ার পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে গিয়েছিল অবাক।

ভুলে গিয়েছিল মেঘের ভালোবাসা। অবাক কাঁদে। অন্ধকার রাতে রাস্তায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে অশ্রু জড়ায়। সেই অশ্রু কেউ দেখতেও পায়না। মাঝে মাঝে ঘুমন্ত মেঘে পাশে বসে অশ্রু জড়ায়। কিন্তু তার কষ্ট এখন দেখার কেউ নাই। আম্মাও এখন আর আগের মতো কথা বলেন না। আগের মতো অবাককে বুকে টেনে নেন না।

তাকে শান্তনা দেন না। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। শাসনও করেন না। বিলকিস বেগমও এখন কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলেন। অবাক বুঝতে পারে। তার অন্যায় সীমা লঙ্গর করেছে এবার। সত্যি করেছে।

তবে যা হয়েছে সেটা ইচ্ছাকৃত হয়নি। সে মানুষ। জীবনে কষ্ট পেয়েছে। মনে আঘাত লেগেছে। প্রিয় মানুষকে চিরদিনের জন্য হারিয়েছে। তার কষ্ট কম নয়। ভালোবাসা হলো আবেগের খেলা। খেলার শুরতে ইন্টারেস্টিং, মজাদার, আনন্দদায়ক। কিন্তু শেষটা বড়ই নিষ্ঠুর। কষ্টদায়ক।

তখন বিবেকও হারিয়ে যায় বাস্তবতার সামনে। অনুকে সে ভালোবাসতো। খুব ভালোবাসতো। কিন্তু ভাবেনি ভালোবাসাটা অপূর্ণ হয়ে থাকবে। মেঘ তার হৃদয়ে একটা জায়গা দখল করে নিয়েছিল সত্যি। তবে অনুকেও একেবারে অস্বীকার করার উপায় নেই।

অবাকের ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। পুরুষমানুষদের কান্না শুভা পায়না। পুরুষের কান্না হয়তো আমাদের সমাজও সমর্থন করেনা। সমাজ বলে, পুরুষ হবে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী। পাথর মানব। কষ্ট পেলেও প্রকাশ করবে না। আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হলেও ভেঙ্গে পড়া চলবে না। অবাক জানে না তার আর কত শাস্তি পাওয়া বাকি। জীবনে সেরা জিনিসটা হারিয়েছে সে। আর কি বাকি? আর কতো অপেক্ষা? ক্ষমা করবে মেঘ? নাকি সারা জীবন অপরাধী করে শাস্তির কারাগারে বন্দী হয়ে রাখবে?

অনু গাড়িতে বসেও একাধারে কেঁদে যাচ্ছে। ইমন অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু অনুর কান্না থামে না। ইমনের কষ্ট লাগছে এখন অনুর কান্না দেখে। ইমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

-এখনতো মনে হচ্ছে তোমার কান্নার কারণ আমি। আমি বিয়েটা না করলে হয়তো তুমি কাঁদতে না। অনু ইমনের কথা কানে তুললো না। ইমন অসহায় দৃষ্টি নিয়ে অনুর দিকে চেয়ে রইলো। যখন ইচ্ছে হবে তখন নিজের বাসায় যেতে পারবে। তবুও এতো কাঁদছে। ইমন মুখ গোমড়া করে বসে। হঠাৎ করে সে খেয়াল করে তার হাতের উপর চোখের মতো কিছু একটা পড়ে আছে। ইমন নিজের চোখ বড় বড় তাকায়। অবাক কণ্ঠে বলে,

-চোখ তো চোখের জায়গায় থাকে। আমার হাতে এটা কি? ইমন অনুর দিকে নিজের হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

-অনু, দেখো। আমার হাতের উপর একটা চোখ। এবার অনু কান্না থামিয়ে ইমনের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ইমনের হাতের উপর তার চোখের আইলেশ পড়ে আছে। অনু চোখ তুলে ইমনের দিকে তাকিয়ে দেখে ইমন মুখটা কাঁচুমাচু করে রেখেছে। ইমনের মুখ দেখে অনুর হাসি চলে আসে। অনু মৃদু হেসে ইমনের হাত থেকে আইলেশটা নিয়ে গাড়ির বাহিরে চোখ রাখে। ইমন বলে,

-এটা কি? অনু ইমনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আইলেশ
-এটা আবার কি?
-আপনি বুঝবেন না। ইমন কিছুক্ষণ অনুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
-এটা দিয়ে কি করে?

-চোখে লাগায়। ইমন অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা চোখ বড় আরেকটা ছোট লাগছে। ইমন চোখ ঘুরিয়ে বলে,
-আর কতো কিছু দেখবো। আসল চোখ থাকতেও নকল চোখ। অনু মুখ চেপে হাসে। অনুর মৃদু হাসি দেখে আর কিছু বলেনা। যাক! অনুর মন ভালো হয়েছে এটা খুব ভালোই বুঝা যাচ্ছে। এতেই ইমনের ভালো লাগছে।

বরের গাড়ি গিয়ে থামে গেইটের সামনে। ইমনদের আগে কয়েকটা গাড়ি চলে এসেছে। ইমনের গাড়ি এসে থামতেই লোকজন এসে ভিড় করে। ইমন লোকজন ঠেলে অনুকে গাড়ি থেকে বের করে আনে। বিয়ে বাড়িতে সবাই অনুকে দেখেছে। এখন আবার কেন এতো ঠেলাঠেলি ইমন বুঝে উঠতে পারছে না।

ইমনের মা বরণডালা নিয়ে আসেন। তিনি দুজনকে বরণ করে ঘরে তুলেন। ইমনের কাজিন, মামী চাচীরা আরো কিছু নিয়ম নিয়ম পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমন আর কোনো রকম নিয়ম মানতে দিল না। তার কথা, যত নিয়ম আছে তুলে রাখ। কাল সব পালন করা হবে। আজ অনু ক্লান্ত।

ইমনের কথা শুনে সবার চোখ কপালে। বিশেষ করে ইমনের কাজিন, ফ্রেন্ডসদের। তারা রীতিমতো ইমনের পিছনে লেগে গেছে। ইমন বুঝতেই পারেনি তার কথা শোনার পর সবাই তাকে এভাবে লজ্জায় ফেলবে।

ইমনের মা ইমনের কথামতো সব নিয়ম স্থগিত রাখলেন। বিয়ের জন্য যত সুন্নতি নিয়ম আছে সব মানা হলো। এখন যেগুলো আছে সেগুলো শুধুমাত্র আনন্দ মজা করার জন্য। একটা মেয়ের উপর দিয়ে সারাদিন এতো দখল গেলে। এখন রাত হয়েছে। তার রেস্টের প্রয়োজন। মজা করার সময় চলে যাচ্ছে না।

ইমন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। অনুকেও ফ্রেশ হওয়ার জন্য বললো। সারাদিন এতো ভারি একটা লেহেঙ্গা আর মুখে একগাদা মেকাপ নিয়ে বসেছিল। তার উপর কান্নাকাটি করলো। এখন ফ্রেশ না হওয়া পর্যন্ত শান্তি লাগবে না। ইমনের মা অনুর জন্য একটা শাড়ি নিয়ে আসলেন। তিনি অনুর কাছে গিয়ে বললেন,

– বউমা। এই শাড়িটা আমি তোমার জন্যই কিনেছিলাম। তুমি এখন ফ্রেশ হয়ে এই শাড়িটা পরো। তাহলে আমার ভালো লাগবে। অনু খুশিমনে শাড়িটা গ্রহণ করলো।

মেঘ বিছানায় শুয়ে আছে। সে এখনও পর্যন্ত অবাকের সাথে কথা বলেনি। অবাককে দেখলেই তার চোখে পানি চলে আসে। কষ্টে বুক ফেটে যায়। অবাক দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনও বিষণ্ণতায় ভরপুর। মেঘ কেন কথা বলেনা? একবার কথা বলুক। একটু পাগলামি করুক। অবাক খুব মিস করছে মেঘের পাগলামি গুলোকে। মিস করছে মেঘের বায়না। আবার কবে মেঘ আগের মতো হবে?

অবাক ধীরে ধীরে এসে খাটের উপর বসে। অবাককে দেখে মেঘ অন্যপাশে ঘুরে শুয়। অবাকের মুখ কালো হয়ে যায়। অবাক মাথা নিচু করে বসে। মেঘের অবহেলা তাকে আরো বেশি কষ্ট দেয়। অবাকের চোখ থেকে টপটপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। অবাক অপরাধীর কণ্ঠে বলে,

-মেঘ। তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাটুকু আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। খারাপ ব্যবহার করেছি। তোমাকে অসম্মান করেছি। আমাকে কি ক্ষমা করতে পারবে না একবার? মেঘ নড়লোও না। অবাক আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসলো।

-মেঘ, তুমি আমায় শাস্তি দাও। আমি তোমার দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নিব। কিন্তু তুমি নিজেকে এভাবে আমার আড়াল করনা প্লীজ। আমাকে অবহেলা করোনা আর। তোমার নিস্তব্ধ নীরবতা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। অবাক অনেক্ষণ কথা বলার পরও মেঘ শব্দ করলো না। অবাক চুপ হয়ে বসে রইলো। কষ্টে তার শরীর কাঁপতে লাগলো।

রাতে খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ করে ইমন আর অনুকে দেওয়া হয় বাসর ঘরে। অনু কিছুই খেতে পারেনি। তার মাথা ধরেছে প্রচণ্ড। অনু বিছানায় বসে আছে। ইমন বসে আছে তার সামনে। ইমন জিজ্ঞেস করে,

-অনু, তুমি এই বিয়েটাতে হেপি তো? মন থেকে আমাকে মেনে নিয়েছো তো? অনু ইমনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ইমন খুশি হয়। সে আবার বলে,

-আজ আমাদের নতুন যাত্রা শুরু। আজ রাতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ দুই রাকাআত নামাজ পড়তে হয়। চলো, আমরা নামাজটা আদায় করে নেই। অনু মৃদু স্বরে বলে,

-আমি অজু করে এসেছি। আপনি অজু করে আসুন। ইমন অজু করে আসে। দুজন এক সাথে নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে ইমন বলে,
-আজকে তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি আর কোনো কথা বাড়াব না। অনেক রাত হয়েছে। তুমি গিয়ে ঘুমাও। কথা বলার জন্য আমাদের সারাটা জীবন বাকি আছে। অনু ইমনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাত ২টা। অনু শুয়া মাত্র ঘুমে তলিয়ে যায়। কিন্তু ইমনের ঘুম আসছে না। সে বিছানার একপাশে অনুর দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। এতো সুখ, এতো আনন্দ ইমন আগে কখনও ফিল করেনি। আজ কোনো স্বপ্ন নয়। অনু সত্যিই তার পাশে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মোবাইলের স্কিনে কোনো ছবি দেখতে হবে না। এখন প্রিয়তমাকে বাস্তবে দেখতে পারবে। ইমনের সারাদিনের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেছে অনুর ঘুমন্ত মুখটা দেখে।

অবাক ব্যালকনিতে ডিভানে শুয়ে আছে। সকালের শীতল বাতাসে অবাকের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। সারাটা রাত তার দুটো চোখের পাতা এক হয়নি। এখন কেমন ক্লান্ত লাগছে। অবাক চোখের পাতা এক করতেই রুম থেকে শব্দ ভেসে আসে। অবাক তাড়াতাড়ি রুমে ছুটে যায়। মেঘ আলমারিতে কিছু খুঁজছে। অবাক অস্থির হয়ে উঠে। দ্রুত মেঘের কাছাকাছি গিয়ে বলে,

-তুমি বিছানা ছেড়ে উঠলে কেন? কিছু দরকার পড়লে আমায় ডাকতে। তোমার শরীর বেশি ভালো না। এখন রেস্টের দরকার। মেঘ নিজের মতো কাজ করতে লাগলো। অবাক আবার বললো,
-কি খুঁজছো? আমাকে বলো। আমি বের করে দিচ্ছি। অবাকের নজর পড়ে বিছানায়। বিছানার উপর একটা ছোট ব্যাগে কিছু কাপড় রাখা। অবাক জিজ্ঞেস করে,

-কাপড়গুলো ব্যাগে ঢুকাচ্ছ কেন? মেঘ হাতে করে কিছু কাগজ নিয়ে ব্যাগে ঢুকায়। অবাক মেঘের পেছন পেছন যায়। তার শরীর ঘামতে শুরু করে। তার কথা আটকে যাচ্ছে। মেঘ কি করতে চাচ্ছে? মেঘ ব্যাগটা ঘুছিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর নরম গলায় বলে,

-অবাক বাবু। অবাক চমকে উঠে। অনেকদিন পর মেঘ তার নাম ধরে ডাকলো। অবাক উতলা হয়ে বলে,
-হ্যাঁ বলো। মেঘ আবার চুপ করে থাকে। তারপর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-আমি চলে যাচ্ছি। আপনি ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দিবেন। আমি সাইন করে দিব।

অবাকের চোখ বড় হয়ে গেলো। মেঘের কথা শুনে তার পৃথিবীতে নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো। মেঘ এসব কি বলছে? অবাক মেঘের হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলে,

-এসব কি বলছো তুমি? তুমি এমনটা করোনা। তুমি কোথাও যাবে না। তুমি এবাড়িতেই থাকবে। মেঘ অবাকের চোখের দিকে তাকায়। অবাক করুণ চেহারায় দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘ কঠিন গলায় বলে,

-এরপরও আপনার সাথে এবাড়িতে থাকবো? অবাক চোখ ছলছল করে উঠে। সে নিস্তেজ হয়ে যায়। মেঘের দুটো হাত একত্র করে অবাক নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অপরাধী স্বরে বলে,

-আমি অস্বীকার করছিনা মেঘ। আমি অন্যায় করেছি। তোমার সাথে কখনও ভালো ব্যবহার করিনি। কখনও তোমাকে বুঝার চেষ্টা করিনি। নিজের ভালো লাগা গুলোকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়েছি। তোমার প্রতি কোন দায়িত্ব পালন করিনি। তুমি প্রতিটা সময় অবহেলায় কাটিয়েছো। তোমার সাথে অনেক অন্যায় হয়েছে। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী। আমি কিছু অস্বীকার করিনা।

আমি এখন যাই করিনা কেন, তোমার সাথে হওয়া অন্যায় মুছে যাবে না। তবুও আমি বলছি মেঘ, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। অপরাধ তো করেছি। সারাজীবন অপরাধী হয়েই থাকতে হবে। শেষবারের জন্য কি আমায় ক্ষমা করা যাবে না? এমন অন্যায় আর করবো না। এটুকু কথা দিতে পারি। ক্ষমা করোনা প্লীজ। কথাটা বলতে বলতেই অবাকের চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে।

মেঘ কিছুক্ষণ অবাকের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নিজের হাত দুটো সরিয়ে নেয়। অবাক এবার ভেঙ্গে পড়ে। নিজেকে পৃথিবীতে একমাত্র অসহায় মানব মনে হচ্ছে। আসলে আজ তাকে অসহায় মনে হচ্ছে। মেঘের চোখেও জল। মেঘ চোখের পানিটা মুছে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। একহাত দিয়ে আরেক হাত মুচড়ে বলে,

-আপনার উপর আমার আর কোনো অভিযোগ নেই অবাক বাবু। কোন রাগও নেই। যার প্রতি কোন অভিযোগ নাই তাকে কি ক্ষমা করবো? বরং আপনার কষ্টের কারণ আমি। আপনি যদি পারেন তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। কথাটা বলেই মেঘ ব্যাগ হাতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। অবাকও মেঘের পেছন পেছন ছুটে। মেঘকে ডাকতে থাকে। মেঘ অবাককে পাত্তা না দিয়ে ঢুকে বিলকিস বেগমের রুমে। অবাক দাঁড়ায় দরজার পাশে।

বিলকিস বেগম শুয়ে ছিলেন। মেঘকে দেখা মাত্রই উঠে বসেন। মেঘ বিলকিস বেগমের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। বিলকিস বেগম আদুরে কণ্ঠে বললেন,

-কিরে এখনি বিছানা ছেড়ে উঠলি কেন? আর কয়েকটা দিন রেস্ট কর। শরীরটা ঠিক হোক। মেঘ গিয়ে বিছানায় বসে বিলকিস বেগমের কোলে মাথা রাখে। বিলকিস বেগম কিছুই বুঝলেন না। তিনি মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

-কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? মেঘ কান্না মাখা কণ্ঠে বলে,
-আম্মা আমি চলে যাচ্ছি। তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোমাদের থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। তোমাকে আমি খুব মিস করবো আম্মা। তুমি কি মাঝে মাঝে আমাকে দেখতে যাবে? বিলকিস বেগম আশ্চর্যান্বিত হলেন। তিনি কোল থেকে মেঘের মাথা তুলে বললেন,

-চলে যাচ্ছি মানে? কোথায় চলে যাচ্ছিস? অবাক দরজার পাশ থেকে মেঘ আর বিলকিস বেগমের কথা শুনছে। তাঁর সাহস হচ্ছে না মায়ের রুমে পা ফেলার। অবাক দরজায় হেলে দাঁড়ায়। মেঘের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কষ্টটা প্রকাশ করতে পারছে না সে। কাউকে বুঝাতে পারছে না কতটা কষ্টে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো তাকে। মেঘ নিঃশ্বাসের উপর নিঃশ্বাস ফেলে। আর চোখ দিয়ে বন্যা বইতে শুরু করে।

বিলকিস বেগম মেঘকে কাছে টেনে নিলেন। মেঘের চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে চোখ গুলো মুছে বললেন,
-তোকে আমি কোথাও যেতে দিব না। তুই আমার কাছে থাকবি। আমি যেতে দিলেতো তুই যাবি।

-তোমার কাছে কোন অধিকারে থাকব আম্মা? কোন অধিকারে আমাকে আটকে রাখবে?
-আমার মেয়ের অধিকারে থাকবি। মায়ের অধিকারে আটকাবো।

-তোমার মেয়ের অধিকারে যদি আমাকে তোমার কাছে রাখতে পারতে তাহলে অবাক বাবুর সাথে বিয়ে দেওয়ার কি দরকার ছিল আম্মা? অবাক বাবুকে উনার ভালোবাসা থেকে দূরে সরানোর কি দরকার ছিল? কি দরকার ছিল তিনটা জীবনে কষ্টকে আমন্ত্রণ জানানোর? বিলকিস বেগম চুপ করে গেলেন। অবাকের চোখে বন্যা বইতে শুরু করলো। মেঘ কাঁদে ঘরের ভেতরে আর অবাক বাহিরে। অবাক দরজার পাশে ফ্লোরে বসে পড়ে। বিলকিস বেগমের চোখে জল চলে আসে। তিনি বললেন,

-তুই যে আমার ছেলেটাকে ভালোবাসতি। তোর স্বপ্ন ছিল অবাক। আমার তৈরি করে দেওয়া ভালোবাসা আমিই কিভাবে নষ্ট করে দেই বল? তুই যে কষ্ট পেতি। সারা জীবন আমার ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করতো। মেঘ বিলকিস বেগমের বুকে হুমড়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করে।

-আম্মা, আমিতো এখনও সুখে নেই। তুমি আমার কষ্ট দেখতে গিয়ে যে অবাক বাবুকে কষ্ট দিলে। আমার জন্য যে অবাক বাবু নিজের ভালোবাসা হারিয়েছে। উনিও কষ্ট পাচ্ছেন। আমাকে দেখলে উনার কষ্ট আরো বেড়ে যায়। আমি ব্যর্থ হয়েছি আম্মা। আমার ভালোবাসা হেরে গিয়েছে। আমি এখানে থাকলেও কষ্ট পাব। চলে গেলেও কষ্ট পাব। কিন্তু আমি চলে গেলে অন্তত অবাক বাবু ভালো থাকবে। সুখে থাকবে।

আম্মা তুমি তো আমাকে এবাড়িতে এনেছিলে তোমার ছেলের জন্য। আমার হাতে তোমার ছেলের সুখের দায়িত্বটা তুলে দিয়েছিলে। তুমি বলেছিলে আমি যেন তোমার ছেলেকে সুখি করি। আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবাক বাবুকে বিন্দুমাত্র সুখি করতে পারিনি। আমি চলে গেলে যদি অবাক বাবু সুখি হয় তবে আমার চলে যাওয়াটা সার্থক। উনি ভালো আছেন শুনলেও আমার ভালো লাগবে। দূর থেকে এতটুকু সুখ পেলেই আমি খুশি হবো। আমি ভালো থাকবো। মেঘ বিলকিস বেগমকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। বিলকিস বেগম উতলা হয়ে বলেন,

-মেঘ তুই যাস না। তুই আমাদের ছেড়ে যাস না। মেঘ দাঁড়াল না। সে নিচ থেকে ব্যাগটা তুলে রুম থেকে বের হলো। দরজার কাছে অবাককে বসে থাকতে দেখে সে দাঁড়িয়ে যায়। অবাকও মেঘকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। অসহায় হয়ে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘের কতটুকু কষ্ট হচ্ছে সেটা সে বলে বুঝাতে পারবে না। তবে তার নিঃশ্বাস যেন থেমে যেতে চাইছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মেঘ অবাকের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আপনি ভালো থাকবেন অবাক বাবু। খুব ভালো থাকবেন। কথাটা শেষ করেই সে আবার হাঁটা শুরু করে। অবাক পেছন পেছন যায় আর বলে,
-মেঘ তুমি যেতে পারোনা। মেঘ দাঁড়ায়। অবাক মেঘের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

-তুমি যাবে না মেঘ।
-আমারতো এবাড়িতে থাকার অধিকার নেই অবাক বাবু। আমার অধিকার কখনই ছিল না। আমি একরকম জোর করে আপনাদের উপর নিজের অধিকার চাপিয়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম হয়তো একদিক আপনি আমায় ভালোবাসবেন। আমাকে মেনে নিবেন। আমি এবাড়িতে অধিকার পাব। এই আশা বুকে রেখে আপনাকে ভালোবেসে এবাড়িতে রয়ে গেছি।

কিন্তু আমার জায়গা শুধু এবাড়িতেই হয়েছিল। কারো হৃদয়ে জায়গা হয়নি। আমি কোন অধিকারে এবাড়িতে থাকবো? অবাক নিস্তেজ হয়। মেঘ কিছুক্ষণ অবাকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর অবাককে ক্রস করে হাঁটতে থাকে। অবাক আগের মতই দাঁড়িয়ে থাকে। মেঘ এক এক করে সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করে। মেঘ ভাবেনি কখনও এভাবে ব্যর্থ হয়ে তাকে ফিরতে হবে। অবাক করুণ স্বরে বলে,

-ভালোবাসি বলেই কি আজ আমায় এতো অবহেলা করছো মেঘ? অবাকের কথাটা তীরের মতো করে এবার গিয়ে লাগে মেঘের কলিজায়। মেঘ চমকে উঠে। অবাক মেঘের দিকে না তাকিয়েই আবার বলে,

-আমার কপালটাই হয়তো এরকম। যাকে ভালোবাসবো সেই আমাকে বুঝে না। তার থেকেই কষ্ট পাই। তুমি কেন আমার ভালোবাসার মূল্য দিবে? কেন আমার মতো লোকের কাছে থাকবে? যাও। চলে যাও। থাকতে হবেনা আমার কাছে। আমি একাই ভালো থাকবো। খুব ভালো থাকবো।

যেখানে ভালোবাসা বেশি সেখানে কষ্ট নিশ্চিত। মেঘ নিচের সিঁড়িতে পা ফেলতে গিয়েও ফেললো না। মেঘ ভাবতেই পারেনি অবাক তাকে ভালোবেসেছে। অবাকতো একবারের জন্যও বলেনি সে তাকে ভালোবাসে। মেঘ ধীরে ধীরে উপরে চলে আসে। ব্যাগটা নিচে রেখে অবাকের পেছনে এসে দাঁড়ায়।

অবাক বেশ কিছুক্ষণ পর ঘুরে দেখে মেঘ তার পেছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে আরেক হাতের নক কুচাচ্ছে। সে ভেবেছিল মেঘ হয়তো সত্যি সত্যি চলে গেছে। কিন্তু না। মেঘ যায়নি। অবাকের যেন খুশির সীমা রইলো না। খুশির ঠ্যালায় তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। মেঘ মুখটা একদম বাচ্চাদের মতো করে চোখ ছোট করে অবাকের দিকে তাকায়। অবাক মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

-তুমি ফিরে এলে যে ?
-আপনি ডেকেছেন যে,
-আমি,,,,?
-চলে যাবো
-আমাকে ছেড়ে?
-আপনি অন্যের
-তুমি কার?
-কারো না।
-হতেও পারবে না।
-কেন?
-আমাকে ছাড়া
-অধিকার নেই।
-প্রাণতো আছে-
-কে বলেছে?
-দেখতেই তো পাচ্ছি।
-ফিরে এসেছি বলে? অবাক মেঘের হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মেঘকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে দুই হাত দিয়ে মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,
-না, ভালোবাসি বলে।

চলবে—

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here